বিবিএনিউজ.নেট | মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | প্রিন্ট | 924 বার পঠিত
ব্যাংকের হাতে থাকা উদ্বৃত্ত বৈদেশিক মুদ্রা নিজেদের তারল্য সংকট কাটাতে ব্যবহার হবে। প্রত্যেকটি ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব (এফসি) ও অনিবাসী বৈদেশিক মদ্রার হিসাবের (এনএফসিডি) ব্যবহারযোগ্য অংশ বাংলাদেশ বাংকে রেখে সমপরিমাণ অর্থ স্থানীয় মুদ্রা টাকায় ঋণ নেওয়া যাবে। স্বল্প মেয়াদের জন্য এই সুবিধা নিতে পারবে ব্যাংকগুলো। এ ধরনের সুযোগ দেওয়ার একটি প্রস্তাব সম্প্রতি অনুমোদন করেছেন গভর্নর ফজলে কবির। ব্যাংকিং ভাষায় এ প্রক্রিয়ার নাম সোয়াপ আরেঞ্জমেন্ট বা বিনিময় ব্যবস্থা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আগ্রহী ব্যাংকগুলোর দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে প্রস্তাবিত কার্যক্রমটি পরিচালনা করার কথা ভাবা হচ্ছে। শিগগিরই সার্কুলার জারি অথবা চিঠি দিয়ে ব্যাংকগুলোকে এ কার্যক্রমের কথা জানানো হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, তফসিলি ব্যাংকগুলোর এফসি এবং এনএফসিডি হিসাবের ব্যবহারযোগ্য অংশ নগদ টাকায় বদলে স্থানীয় আন্ত ব্যাংক মুদ্রাবাজারে তারল্য সরবরাহে ব্যবহার করা হলে ঋণ ও আমানতের বর্তমান সুদহার হ্রাস করা সম্ভব হবে। বর্তমানে এফসি ও এনএফসিডি হিসাবে প্রায় ১৭০০ মিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা আছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৪ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা)।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, কোনো ব্যাংকের নগদ টাকার সমস্যা দেখা দিলে বা কোনো কারণে ব্যাংকটি কলমানি থেকেও অর্থ ধার পাচ্ছে না, কিন্তু তার হাতে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা আছে, তখন সে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রা রেখে সমপরিমাণ বা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ স্থানীয় মুদ্রায় ধার নিতে পারবে। এটা অনেকটাই স্বল্পমেয়াদি ঋণের মতো হবে। এর জন্য ওই ব্যাংককে কিছুটা সুদ দিতে হবে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময় পর সুদসহ আসল ফেরত দিয়ে ওই বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়িয়ে নিতে পারবে ব্যাংকগুলো। তবে সুদের হার কত হবে তা এখনো নির্দিষ্ট করা হয়নি। তা অবশ্যই আন্ত ব্যাংক কলমানি সুদের হারের চেয়ে কম হবে। ঋণ ও আমানতের সুদহার কমানোই এ পদ্ধতির মূল লক্ষ্য হবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
দীর্ঘদিন ধরেই ব্যাংকিং খাতে চলছে তারল্য সংকট। অনেক ব্যাংকের কাছে ঋণ দেওয়ার মতো টাকাও নেই। বর্তমানে প্রায় ১৫টির মতো ব্যাংক রয়েছে, যাদের ঋণ ও আমানত অনুপাত (এডিআর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার বাইরে রয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর আমানতের চেয়ে ঋণ বিতরণ বেশি মাত্রায় রয়েছে। এসব ব্যাংকে এ মাসের মধ্যেই এডি রেশিও সমন্বয় করতে হবে। তাই এদের কেউ কেউ উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ শুরু করেছে। এ ছাড়া উচ্চ খেলাপি ঋণের কারণে অনেক ব্যাংকের বিনিয়োগযোগ্য তহবিল কমে গেছে। তাই নতুন ঋণ বিতরণে ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করছে ব্যাংকগুলো। আবার যারা ঋণ বিতরণ করছে, সুদের হার বেশি ধার্য করছে। এতে বেসরকারি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এমন অবস্থায় সরকারের নির্দেশানুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকও চাইছে ব্যাংকগুলোকে সুবিধা দিয়ে হলেও ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে। এরই অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে পড়ে থাকা উদ্বৃত্ত স্থানীয় মুদ্রায় আন্ত ব্যাংক মুদ্রাবাজারে তারল্য সরবরাহে ব্যবহার করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আন্ত ব্যাংক কলমানির সুদের হার আরো কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। কারণ কলমানি থেকেও এখানে কম সুদে তহবিল পাবে ব্যাংকগুলো। আবার কলমানি থেকে এক দিনের জন্য অর্থ ধারের সুযোগ থাকলেও এখানে বেশি সময়ের জন্য ধার নেওয়া যাবে। তবে তা এক বছরের কম হবে। এতে কলমানি বাজারে ব্যাংকের নির্ভরতা যেমন কমে আসবে, তেমনি কলমানির সুদের হারও কমবে। আর কলমানির সুদহার কমলে বাজারে ঋণের সুদহার কমবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মো. শামস-উল ইসলাম বলেন, ‘আমি মনে করি এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিবাচক পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে তারল্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কারণ আমার যদি বৈদেশিক মুদ্রা থাকে, তবে সেটা স্থানীয় মুদ্রায় বদলানোর সুযোগ পাব। এতে আমার নগদ টাকার তহবিল বাড়বে। এর ফলে ঋণের সুদহারও কমে আসবে।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে এফসি ও এনএফসিডি হিসাবে প্রায় ১৭০০ মিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা আছে। বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবের এই অর্থ যদি সোয়াপ অ্যারেঞ্জমেন্টের আওতায় আসে তবে বাজারে সমপরিমাণ নগদ টাকার সরবরাহ বাড়বে।
Posted ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed