সোমবার ২৫ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

পিকে হালদার, জিকে শামীম ও সেলিম প্রধানের সম্পদ জব্দ করেছে দুদক

বিবিএনিউজ.নেট   |   বুধবার, ১৪ অক্টোবর ২০২০   |   প্রিন্ট   |   619 বার পঠিত

পিকে হালদার, জিকে শামীম ও সেলিম প্রধানের সম্পদ জব্দ করেছে দুদক

অনিয়ম, দুর্নীতি ও সম্পদ পাচারের দায়ে অভিযুক্ত পিকে হালদার, জিকে শামীম ও সেলিম প্রধানের হাজার কোটি টাকারও বেশি সম্পদ জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শিগগিরই তাদের তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হবে বলে দুদক সূত্রে জানা গিয়েছে।

আলোচিত এ তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত করছেন দুদকের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার। তদারককারী কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।

অভিযুক্ত তিনজনের মধ্যে সেলিম প্রধানকে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরদিন গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও মুদ্রাপাচার প্রতিরোধ আইনে দুটি মামলা করা হয়। এরপর গত বছরের ২৭ অক্টোবর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুদক আরেকটি মামলা করে। ওই মামলায় বলা হয়, সেলিম প্রধানের মোট ১২ কোটি ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫৪ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, যা তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ। এভাবে অবৈধ ব্যবসা ও কার্যক্রম দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সেলিম প্রধান তার অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক প্লট, বাড়ি ও ফ্ল্যাটসহ বিদেশেও নামে-বেনামে শতকোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন।

‘প্রধান গ্রুপ’ নামে একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের চেয়ারম্যান সেলিম প্রধান সম্পর্কে দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জে জন্মগ্রহণ করলেও সেলিম প্রধান বেড়ে ওঠেন ঢাকার মোহাম্মদপুরে। বড় ভাই জাপানে থাকার সুবাদে ২০ বছর বয়সেই সেলিম পাড়ি জমান জাপানে। সেখানে একটানা নয় বছর থাকার পর ব্যবসায়িক ঝামেলার কারণে তাকে জাপান ছাড়তে হয়। এরপর তিনি পাড়ি জমান আমেরিকার নিউইয়র্কে। চার বছর পর আবারো জাপানে ফিরে এসে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। কিন্তু পারিবারিক ঝামেলায় পড়ে আবারো তাকে জাপান ছাড়তে হয়। এরপর সেলিম প্রধান পাড়ি জমান থাইল্যান্ডে। সেখানে এক রুশ নাগরিককে বিয়ে করেন তিনি। থাইল্যান্ডে থাকলেও মাঝেমধ্যে তাকে বাংলাদেশে আসতে হতো।

অপরাধমূলক কার্যক্রমে সেলিম প্রধানের উত্থান ২০১২ সালে। ওই বছর ঢাকার গুলশানে অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসা শুরু করেন তিনি। সেলিম প্রধান সংঘবদ্ধভাবে ক্যাসিনো খেলা পরিচালনা করতেন। পি২৪-গেমিং, টি-২১ ইনোভেশন, এস-৭ এন্টারটেইনমেন্ট ইত্যাদি নামে অনলাইন বেটিং তথা জুয়ার সাইট গড়ে তোলেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নাম-পরিচয় ব্যবহার করে এসব বেটিং সাইটের প্রচার চালানো হতো। এছাড়া বিভিন্ন ভিডিও বার্তায় গেম খেলার নিয়ম, পদ্ধতি ও প্রলোভনমূলক কথাবার্তা বলে এসব সাইটে বেটিং চালাতে বিভিন্ন পেশার লোকদের অনুপ্রাণিত করা হতো।

মামলার তদন্তে সেলিম প্রধানের অনলাইন ক্যাসিনোর মাধ্যমে প্রায় ১৩ কোটি টাকা আয় ও তা বিদেশে পাচারের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। তদন্ত চালাতে গিয়ে থাইল্যান্ডে প্রধান গ্লোবাল ট্রেডিং, এশিয়া ইউনাইটেড এন্টারটেইনমেন্ট লিমিটেড, তমা হোম পাতায়া কোম্পানি লিমিটেড ইত্যাদিসহ তার মালিকানাধীন সাতটি কোম্পানির রেকর্ডপত্রও সংগ্রহ করেছে দুদক। এছাড়া থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ব্যাংক ও দি সিয়াম কমার্শিয়াল ব্যাংকে সেলিম প্রধানের ২০ কোটি টাকারও বেশি অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। তদন্তে তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাস, নেভাদা থেকে কোটি টাকা মূল্যের ক্যাসিনো চিপস ও জুয়ার অন্যান্য সরঞ্জাম ক্রয়ের প্রমাণ মিলেছে।

এরই মধ্যে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা সেলিম প্রধানের অর্ধশত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছেন। তার আয়কর নথিসহ সব স্থাবর সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া থাইল্যান্ডে তার নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাব ও কোম্পানির রেকর্ডপত্র জব্দের জন্য এমএলএআরও করেছে দুদক।

জিকে বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী গোলাম কিবরিয়া শামীম পরিচিত জিকে শামীম নামে। গত বছরের ২১ অক্টোবর জিকে শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করে দুদক। এরই মধ্যে দুদক কর্মকর্তা আদালতের নির্দেশের ভিত্তিতে জিকে শামীমের বিভিন্ন ব্যাংকে জমা ৩২৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকার আমানত জব্দ করেছেন। তার নামে থাকা স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে প্রায় ৪১ কোটি টাকার।

আর্থিক খাতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) বিরুদ্ধে করা মামলায় মোট ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তুলেছে দুদক। এতে তার বিরুদ্ধে ১ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা পাচারেরও অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে এরই মধ্যে তার ব্যাংক হিসাব ও কোম্পানির শেয়ার হিসাব জব্দ করেছে দুদক। এছাড়া আরো ১৩০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে।

দুদক জানিয়েছে, অবৈধ ব্যবসাসহ বিভিন্ন অবৈধ উৎস থেকে অর্জিত সম্পদের বেশির ভাগই বিদেশে, বিশেষ করে কানাডায় পাচার করেছেন প্রশান্ত হালদার। বর্তমানে নিজেও বিদেশে অবস্থান করছেন তিনি। তবে ঢাকায় তার নামে একাধিক বাড়ি, প্লট ও ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া নামে-বেনামে একাধিক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। ক্যাসিনোসংশ্লিষ্টতার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রথম যে ৪৩ জনের বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে, পিকে হালদার তাদের অন্যতম। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত বছরের ১৪ নভেম্বর ও চলতি বছরের ১০ আগস্ট হাজিরা দেয়ার নোটিস পাঠিয়েছিল দুদক। যদিও বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই তিনি দেশ ছাড়েন।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৪ অক্টোবর ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11397 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।