আদম মালেক | সোমবার, ১৬ নভেম্বর ২০২০ | প্রিন্ট | 501 বার পঠিত
সোনালী ব্যাংক ও তার গ্যারান্টিতে ২৬টি ব্যাংক থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা জালিয়াতি করে হলমার্ক গ্রুপ। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক থেকেই হাতিয়ে নেয় দুই হাজার ৯৬৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা। তবে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৯৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা অবলোপন করে ব্যাংকটি। বাংলাদেশ সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সোনালী ব্যাংক সূত্র জানায়, হলমার্ক কেলেঙ্কারি উদঘাটনের পর আবশ্যকীয় কাগজপত্র বা দলিলাদির ঘাটতি রেখেই ৪০৫৪ শতাংশ সম্পত্তি বন্ধক নেয়া হয়েছে। কেলেঙ্কারির ঘটনা উদঘাটনের আগে মর্টগেজ নেয়া ২৮৭৪ শতাংশ সম্পত্তির ক্ষেত্রেও দলিলাদির ঘাটতি রয়েছে। দুদকের মামলায় আসামিপক্ষ জেলহাজতে অন্তরীণ থাকায় ৯১৫৪ শতাংশ সম্পত্তির মূল বা সার্টিফাইড দলিল ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে ব্যাংকের হেফাজতে নেয়া হলেও তা এ পর্যন্ত বন্ধক নেয়া সম্ভব হয়নি। এসব সম্পত্তির মূল্য ৪৭২ কোটি টাকারও কম। তাছাড়া হলমার্ক গ্রুপের বিভিন্ন প্রষ্ঠিানের বন্ধকী সম্পত্তি চারবার নিলামে তোলার বিজ্ঞাপন দিয়েও কোনো ক্রেতা পাওয়া যায়নি।
এ জালিয়াতির ঘটনায় কারাগারে রয়েছেন হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ, চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ কয়েকজন। বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয় সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দেয়। এ পর্ষদের কারো কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ আনলেও দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে তাদের দোষীসাব্যস্ত করা হয়নি। এ কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল ইসলাম ও পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক সুভাষ সিংহ রায়সহ অন্যরা।
পর্যবেক্ষকদের মতে, সোনালী ব্যাংকে ঋণ কেলেঙ্কারি নতুন কিছু। ব্যাংকের ভেতবে বাইরে একটি অসাধু চক্র সবসময় সক্রিয়। এতো বড় জালিয়াতির পর এ চক্রই আবার ঋণ পুনঃতফসিলের পরামর্শ দেয়। কিন্তু নীতিনির্ধারকরা তাদের পাতানো ফাঁদে অল্পের জন্য পা রাখতে গিয়ে সরে যায়। গেল বছর অর্থমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা চাই হলমার্ক ব্যবসায় ফিরে আসুক। ব্যাংকের টাকা ফেরত আনতে তাদের দিয়েই ব্যবসা করাতে হবে। কিন্তু ব্যাংক থেকে হলমার্কের গৃহীত অর্থ ঋণ হিসাবে বিবেচনায় না নিয়ে তাদের জালিয়াত সাব্যস্ত করা হয়। এজন্য অর্থ শেষ মুহূর্তে পুনঃতফসিলের নামে পুনরায় জালিয়াতির সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, হলমার্ক গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মেসার্স ম্যাক্স স্পিনিং মিলস লিমিটেড অবলোপনকৃত ঋণের তালিকায় শীর্ষে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫২৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা ঋণ অবলোপন করা হয়েছে হোটেল শেরাটন শাখার এ গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের। ২০২০ সালে অবলোপনকৃত এ ঋণের ১০ শতাংশ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো টাকা পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মেসার্স আনোয়ারা স্পিনিং মিলস লিমিটেড। এটিও হলমার্ক গ্রুপভুক্ত। শেরাটন করপোরেট শাখার এ গ্রাহক প্রতিষ্ঠানে অবলোপনের পরিমাণ ৪৭৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। চলতি বছরের ৯ মাসে এ প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৪৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু আদায় হয়নি এক টাকাও। এ হিসেবে দেখা যায়, হলমার্ক গ্রপের এ দুই প্রতিষ্ঠানের অবলোপনকৃত মোট ঋণের পরিমাণ প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান গণমাধ্যমকে বলেন, শীর্ষ ২০ বেসরকারি অবলোপনের মধ্যে হলমার্কের টাকাই বেশি। এটার আদায় অগ্রগতি একেবারেই নেই। এটা সবারই জানা। তাছাড়া বেশকিছু অবলোপন আছে অনেক পুরোনো। উল্লিখিত কোম্পানিগুলোর মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে বেশকিছু টাকা আদায়ও হয়েছে। তবে টাকার অঙ্কটা আমার এখন মনে নেই। টাকাগুলো আদায়ের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
এ জালিয়াতির ঘটনায় দুদকের দায়ের করা মামলায় ২০১২ সালে হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ, চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ হলমার্ক ও সোনালী ব্যাংকের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা গ্রেফতার হন। ২০১৩ সালে কোম্পানির চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম মাসে ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের শর্তে জামিন পান। ২০১৪ সালে আদালত আবার তার জামিন বাতিল করে।
Posted ১:৪৬ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৬ নভেম্বর ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed