নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ০৪ মার্চ ২০২১ | প্রিন্ট | 651 বার পঠিত
জাহাজের মাস্তুলে থাকা পতাকা দেখে যেমন তার পরিচয় জানা যায়, তেমনি বঙ্গবন্ধুকে জানার মাধ্যমে এখন মানুষ বীমা সম্পর্কেও জানবে। পয়লা মার্চকে ‘জাতীয় বীমা দিবস’ ঘোষণাÑএ খাতের জন্য একটি মাইলস্টোন। জাতির পিতা এ পেশায় ছিলেন বিষয়টি আমাদের জন্য ফ্ল্যাগশিপের মতো। জাতীয় বীমা দিবস উপলক্ষে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমনই মন্তব্য করেছেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন।
আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের বীমাশিল্পে ছিলেন, এটা যে উনি রুটি-রোজগারের জন্য তা নয়, বরং তার ইচ্ছাশক্তি ও ইন্স্যুরেন্সের পরিধিকে কাজে লাগিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেন নির্বিঘ্নে যেতে পারেন এবং দেশের জনগণকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পারেন, সেজন্যই তিনি এ পেশায় এসেছিলেন। কেননা তখন তার পেছনে গোয়েন্দা নজরদারি ছিল। সেজন্যই তিনি ইন্স্যুরেন্সে যোগদান করেছেন। এটা তার একটি সামগ্রিক চিন্তাধারা।
ড. মোশাররফ বলেন, বঙ্গবন্ধু ইন্স্যুরেন্সকে শুধু একটা কর্মক্ষেত্র হিসেবে দেখেননি, বরং দেশকে স্বাধীন করার যে চিন্তা-চেতনা তার ছিল, সে পথে এগোতে তিনি যাতে নির্বিঘ্নে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারেন এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে মিশতে পারেন, সে কারণেই ইন্স্যুরেন্সে যোগদান করেছিলেন। সে হিসেবে এটা আমাদের জন্য একটি বড় পাওয়া। আমরা যারা ইন্স্যুরেন্সে আছি আমরা গর্ববোধ করি যে, জাতির পিতার মতো একজন মহামানব এ ইন্স্যুরেন্সে ছিলেন এবং সেটা বহুদূরে থেকে করেননি। নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের বর্তমান অফিসের ২০০ গজের মধ্যেই ছিল তার অফিস। আমরা এটা নিয়েও গর্ববোধ করি।
তিনি বলেন, দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক জাগরণে জাতির পিতার যে চেতনা আমরা সেটাই ধরে রাখার চেষ্টা করছি, টু প্রোটেক্ট আওয়ার পলিসি হোল্ডারস। আমরা আশা করি সেটা পারবো। কেননা, গতবছর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর বীমা পেশায় যোগদানের দিনটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এটি আমাদের জন্য বড় একটি মাইলস্টোন। ফলে বীমা নিয়ে মানুষের মাঝে যে নেতিবাচক ধারণা ছিল, তা ধীরে ধীরে দূর করতে পারবো।
বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতীক ছয় দফা দাবির খসড়া বঙ্গবন্ধু বীমা কোম্পানির অফিসে বসেই করেছিলেন বলে সরকারি বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণে জানা যায়। সেসব বিবেচনায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে বীমাখাতের ভূমিকা রয়েছে, এমন দাবি করছেন অনেকেই। তাদের সে দাবি কতটা যৌক্তিক, এমন প্রশ্নে ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, নিশ্চয়ই আমরা এ দাবি করতে পারি। কেননা তখনকার সময়ে ইন্স্যুরেন্সে যারা ছিলেন, যেমনÑগোলাম মওলা, খোদা বক্স, শামসুল আলম, এমএ সামাদ তাদের সাথেই বঙ্গবন্ধুর ওঠাবসা ছিল।
এমনকি এখনো তাদের কেউ কেউ বেঁচে আছেন, যেমনÑমুয়িজ সাহেব। বিভিন্ন সময়ে আমরা তাদের ছবি দেখতে পাই। তারা ছিলেন ইন্স্যুরেন্সের বোদ্ধা। সে সুবাদে অবশ্যই আমরা এটা দাবি করতে পারি যে, দেশমাতৃকার স্বাধীনতার পেছনে বীমাশিল্পের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা রয়েছে। ইন্স্যুরেন্সের আড়ালে তিনি রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালিয়ে দেশের মানুষকে একতাবদ্ধ রেখেছিলেন। ফলে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয়নি। কারণ তখন বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তার উপর গোয়েন্দা নজরদারি ছিল। এছাড়া ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দাবির খসড়া ইন্স্যুরেন্সের অফিসে বসেই তৈরি হয়েছিল তার প্রমাণ তো রয়েছেই। যে ছয় দফার জন্য তাকে অনেক কষ্টে ভুগতে হয়েছে, তাকে কারাগারে যেতে হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া বীমাশিল্প কোন লক্ষ্যে এগিয়ে চলছেÑএমনটা জানতে চাইলে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, বঙ্গবন্ধুর অনেক গুণ ছিল। তিনি অর্থনীতিবিদ, বীমাবিদ, রাজনীতিবিদ ছাড়াও জাতির পিতা ছিলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি এমন অনেক উপাধি রয়েছে। এ কারণেই আমরা বাঙালি জাতিসত্তা পেয়েছি, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ হিসেবে একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। এটা আমাদের জন্য অনেক গর্বের বিষয়। সেদিক থেকে দেশের স্বাধীনতায় বীমাখাতের যে অবদান রয়েছে, তা বিবেচনায় যদি বীমাশিল্পকে প্রাতিষ্ঠানিক মুক্তিযোদ্ধা দাবি করি মনে হয় সেটি অমূলক হবে না। এদেশের স্বাধীনতা এবং বঙ্গবন্ধুর আন্দোলনকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে বীমার অবদান অনস্বীকার্য। এখন আমাদের যেটা করতে হবে, তিনি আমাদের যে দেশ দিয়েছেন, যে জাতি দিয়েছেন, সে দেশ ও জাতির উন্নয়নে অর্থনৈতিক মুক্তির পানে এগিয়ে যাওয়া। কেউ যেন বঞ্চিত না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা। সে মূল্যায়নকে সামনে রেখেই আমরা কাজ করছি। যেন অর্থনীতিতে বীমাখাত ভূমিকা রাখতে পারে।
এতো পেশা থাকার পরও বঙ্গবন্ধু বীমা কেন বেছে নিলেনÑজানতে চাইলে ড. মোশাররফ বলেন, জাতির পিতা যে কারণে বীমাকে বেছে নিয়েছিলেন বলে আমার মনে হয় তা হলো, রাজনৈতিক ক্যারিয়ার সচল রেখে দেশের মানুষকে মুক্তির স্বাদ অনুভব করানোর জন্য। কেননা তিনি ইচ্ছে করলে শিক্ষকতার মাধ্যমে বা কনসালটেন্সির মতো কাজ করতে পারতেন। কোনো গ্রুপ অব কোম্পানিতে যোগদান করে নিজের উন্নতি করতে পারতেন। তিনি চাইলে অন্য কোনো প্রফেশনে ভালো করতে পারতেন। কিন্তু তিনি বীমাকে পছন্দ করেছেন এ কারণে যে, সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়ার সুযোগ এবং তাদের দুঃখ-কষ্ট সরাসরি অনুধাবন করার জন্য। পাশাপাশি রাজনৈতিক সহচরদের সাথে যখন-তখন মিলিত হওয়ার সুযোগ তৈরির জন্য। কেননা আগেই বলেছি তখন বঙ্গবন্ধুকে নজরদারিতে রাখা হতো, তার পেছনে সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা লেগে থাকতো এবং রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল ও কারফিউ ছিল। এর ভেতরে ইন্স্যুরেন্সকে নিয়ে জাতির পিতার যে চিন্তা তা এরকমই দাঁড়ায় যে, দেশের সব অঞ্চলের লোকদের সাথে সহজেই দেখা করতে পারেন, সেজন্যই বঙ্গবন্ধু ইন্স্যুরেন্সে যোগদান করেছেন। সে সময়ের বিভিন্ন রিপোর্টেও বিষয়টি উঠে আসায় আমার কাছে এমনটাই মনে হয়। কারণ সে সময় গোয়েন্দারা রিপোর্ট করতো- ইন্স্যুরেন্সের কাজে শেখ মুজিবুর রহমান এখানে-ওখানে গিয়েছেন। এতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, দেশব্যাপী সকলের কাছে যেন তিনি নির্বিঘ্নে যেতে পারেন সেজন্যই ইন্স্যুরেন্সকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত আসবাবপত্র জাতীয়ভাবে সংরক্ষণে আইডিআরএ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে কিনাÑএমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব মূলত ট্রাস্টকে দেয়া উচিত। কিন্তু বীমা পরিবারের পক্ষে আমরাই এটা রিটেইন করার প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছি। সাবেক আলফা ইন্স্যুরেন্স পরিবর্তিত হয়ে আমাদের যে করপোরেশন হয়েছে, সেখানেই এগুলো সংরক্ষিত আছে। এটা আমরা ছাড়তে চাই না। আমাদের স্মৃতিতেই রেখে দিতে চাই। যেহেতু আমাদের এখানেই তার পদচারণা ছিল, তাই এর রক্ষণাবেক্ষণের প্রকৃত দাবিদার আমরা।
Posted ৩:৫৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ মার্চ ২০২১
bankbimaarthonity.com | rina sristy