| বৃহস্পতিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | প্রিন্ট | 1039 বার পঠিত
ডায়মন্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। দেশের খ্যাতিমান শিল্পদ্যোক্তা, সমাজসেবকদের নিয়ে ডায়মন্ড লাইফের রয়েছে একটি শক্তিশালী পরিচালনা পর্ষদ। রয়েছেন আত্মপ্রত্যয়ী, তরুণ, শিক্ষিত, নিবেদিতপ্রাণ কর্মী বাহিনী। যাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পিপলু বিশ্বাস। যিনি পেশাগত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ চৌকষ বীমা ব্যক্তিত্ব। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, বেকারত্ব দূরীকরণে বীমার অবদানসহ এ খাতের সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে সম্প্রতি ব্যাংক-বীমা অর্থনীতিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নাসির আহমাদ রাসেল।
ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি : বীমা পেশায় আপনার সম্পৃক্ততা তিন দশকেরও বেশি সময় আগের। প্রথমেই জানতে চাইব কীভাবে এই পেশায় আপনার পদচারণা।
পিপলু বিশ্বাস: এ পেশায় আমার পদচারণা শুরু হয়েছিল ছাত্রজীবনে ১৯৮৪ সালে ম্যাট্রিক পাসের পর। প্রথম কর্মজীবন শুরু করেছিলাম ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মাধ্যমে। প্রয়াত মুজিবুল হায়দার চৌধুরী সাহেবের দেখানো স্বপ্নের পথ ধরে। তিনিই এ পেশায় আমার পথপ্রদর্শক।
আরেকজন হলেন শ্রদ্ধেয় এটিএম জাফরুল্লাহ চৌধুরী। মাত্র ৩০ দিনে আমাকে বীমাশিল্পের জন্য তৈরি করে গেছেন।
বীমাশিল্পে আমি এসেছিলাম বেকারত্ব গুছিয়ে বড় হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। বীমায় আমার প্রথম পলিসিহোল্ডার আমার বাবা। অনেক কষ্টে সব নেতিবাচক দিককে পেছনে ঠেলে বাবাকে পলিসির জন্য রাজি করিয়েছিলাম। বাবা যেদিন প্রথম প্রিমিয়ামের ৫০০ টাকা আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন, সেদিন সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলাম। জীবনে প্রথম যখন কমিশনের নয় হাজার টাকা পেয়েছিলাম সেদিন খুশিতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম। চোখ দিয়ে শুধু অশ্রু গড়িয়ে পড়েছে, কোনো কথা বলতে পারিনি। এরপর ঢাকায় এলাম।
৮৭ সালের দিকে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের গাছের ছায়ায় বসেও আমরা ট্রেনিং করেছি। এরপর দোজাহ ম্যানসনের একটি ছোট্ট অফিসে কার্যক্রম শুরু। এভাবে হাঁটি হাঁটি পা পা করে আমার পথচলায় সাফল্য এসেছিল। ক্যারিয়ারের এক পর্যায়ে যোগ দিলাম সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে।
সেখান থেকে প্রোগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সে। সেখান থেকে আরো বড় স্বপ্ন নিয়ে ২০১৭ সালের ৭ মার্চ ডায়মন্ড লাইফে এসেছি। মাঠ পর্যায় থেকে উঠে এসে আজও মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছি।
আমি মনে করি, বীমা ইন্ডাস্ট্রিতে ভালো করতে হলে একজন কর্মীর দুটি গুণ অবশ্যই থাকতে হবে। প্রথমত, সৎ হতে হবে। দ্বিতীয়ত, কঠিন পরিশ্রম করতে হবে। পাশাপাশি মানুষকে শ্রদ্ধা করতে হবে, ভালবাসতে হবে।
ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: বীমা শিল্পে ইমেজ সংকট কাটিয়ে আস্থা ফিরিয়ে আনতে আপনার কোম্পানি কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে?
পিপলু বিশ্বাস: বীমা পলিসি করতে গিয়ে গ্রাহকরা যথাসময়ে টাকা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা নিয়ে এক ধরনের শঙ্কার মধ্যে থাকেন। চতুর্থ প্রজন্মের কোম্পানিগুলো সম্পর্কে এই শঙ্কা আরো বেশি। কারণ অনেকেই নতুন কোম্পানিগুলোর সাথে পরিচিত নন। এখানে যে সরকারের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, মনিটরিং রয়েছে সে বিষয়ে অনেকেই জানেন না। আমরা যথা সময়ে বীমা দাবি পরিশোধ করে এই আস্থার জায়গাটি নিশ্চিত করতে চাই। আমাদের কোম্পানিতে পলিসি করে গ্রাহকের শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। গ্রাহককে এগ্রিমেন্ট দেয়া হয়েছে। কবে নাগাদ টাকা পাবেন, তা বলা আছে। প্রিমিয়াম জমা দেয়ার সাথে সাথে এসএমএস যাচ্ছে। অ্যাপস, ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গ্রাহক যে কোনো সময় তার প্রিমিয়ামের আপডেট জানতে পারছেন। আমরা সবকিছুকে ডিজিটালাইজড করেছি। এগুলো সবই নিশ্চয়তার জন্য, আস্থার জন্য। এছাড়া আইডিআরএ’র অনুমতি ছাড়া আমরা কোনো অফিস করছি না। অফিস করার প্রস্তাবনা পাঠানোর আগেই আমরা যাকে দায়িত্ব দেব তার স্বচ্ছতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আমরা খোঁজ নেই। ইমেজসম্পন্ন না হলে আমরা তাকে নিয়োগ দেইনা।
ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: বেকারত্ব দূরীকরণে বীমা খাত কী ভূমিকা রাখতে পারে?
পিপুল বিশ্বাস: আমরা বলি ছাত্রজীবন থেকেই খণ্ডকালীন পেশা হিসেবে বীমাকে বেছে নেয়া যেতে পারে। একজন শিক্ষার্থী লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রতিদিন দুই ঘণ্টা বীমার জন্য সময় দিতে পারেন। এতে একদিকে তার বেকারত্ব ঘুচবে, লেখাপড়ার খরচ নিয়েও হতাশ হতে হবে না। ভবিষ্যতের কর্মস্থল নিয়েও খুব বেশি ভাবতে হবে না।
আমরা শিক্ষিত তরুণদের এ পেশায় আসতে উৎসাহ দিচ্ছি। আমাদের একটি ট্রেনিং সেল আছে। ট্রেইনারদের মাধ্যমে নতুনদের আমরা এ পেশার যোগ্য করে তৈরি করছি।
ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: বীমা খাত নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?
পিপলু বিশ্বাস: এ খাত নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী। এখানে এখন ব্যাপক সম্ভাবনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় বীমাখাত এখন অত্যন্ত গতিশীল। নতুনরা বুঝেশুনে বীমা পেশা গ্রহণ করছেন। শিক্ষার্থীরা বীমা সম্পর্কে জানেন। বীমা সম্পর্কে তাদের ইতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। এটি সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা।
ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: কী কী সুবিধার কারণে গ্রাহকদের আপনার কোম্পানিকে পলিসির জন্য বেছে নেয়া উচিত?
পিপলু বিশ্বাস: আমরা গ্রাহককে যথা সময়ে দাবি পরিশোধের নিশ্চয়তা দেই। আমরা যখন যথাসময়ে গ্রাহককে টাকা ফেরত দেব, তখন তিনি আরেকজনের কাছে আমাদের সুনাম করবেন। আইডিআরএ’র কঠিন নির্দেশনা আছে যথাসময়ে টাকা ফেরত দিতে হবে। আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা মেনে কাজ করছি। বীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের জবাবদিহিতা রয়েছে। আমরা তাদের পর্যবেক্ষণে থেকেই সার্ভিস দিচ্ছি। গ্রাহক মোবাইল ব্যাংকিং ও অন্যান্য ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে প্রিমিয়াম জমা দিতে পারছেন। ফেরতও নিতে পারছেন। সব সময় পলিসি সংক্রান্ত আপডেট পাচ্ছেন। এসব কারণেই গ্রাহকরা আমাদের সাথে পলিসি করতে আগ্রহী হবেন।
ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: আপনাদের কী কী পরিকল্প রয়েছে?
পিপলু বিশ্বাস: আমাদের ব্যতিক্রমী পরিকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে পেনশন বীমা, হজ্ব বীমা, শিশু নিরাপত্তা বীমা, লাভসহ সঞ্চয়ী বীমা ইত্যাদি।
ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: বীমা খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আইডিআরএ’র ভূমিকাকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
পিপলু বিশ্বাস: আইডিআরএ’র কার্যকর ভূমিকায় এ খাত আরো গতিশীল হয়েছে। বীমা খাতে স্বচ্ছতা আসছে।
ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: ডায়মন্ড লাইফের ব্যবসায়িক অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাই।
পিপলু বিশ্বাস: সারাদেশে আমাদের ৫২ টি কার্যালয় রয়েছে। ৩০ টি জেলায় আমরা কাজ করছি। সারাদেশে তিন হাজারের মতো কর্মী কাজ করছে। অতি শীঘ্রই পুঁজিবাজারে শেয়ার অবমুক্ত করতে আমাদের প্রস্তুতি চলছে।
ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতিকে সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
Posted ৩:৪৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy