আদম মালেক | বৃহস্পতিবার, ০৯ জুন ২০২২ | প্রিন্ট | 259 বার পঠিত
দেশের বীমা খাত উন্নয়নের তাগিদে ২০১১ সালে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) গঠন করে সরকার। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বারবার আক্রান্ত হচ্ছে সংস্থাটি। সুশাসনের উদ্যোগে প্রতিবারই তীরবিদ্ধ হচ্ছেন খোদ আইডিআরএ এর চেয়ারম্যানরা। পূর্ণকালীন দায়িত্ব পালনকারী কোনো চেয়ারম্যানই দুর্নীতিগ্রস্তদের আক্রমণ থেকে রেহাই পাননি। তাদের আক্রমণের প্রথম নিশানা এম শেফাক আহমেদ। শেফাক আহমেদ বিদায় নিলে চক্রান্তের শিকার হন আইডিআরএ’র পরবর্তী চেয়ারম্যান মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারী। শফিকুর রহমানের কাছ থেকে দায়িত্ব বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মোশাররফের কাছে হস্তান্তরিত হলে তার ওপরও স্বার্থান্বেষীদের খড়গ ঝুলিয়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করছেন বীমা সংশ্লিষ্টরা। তবে আইনবহির্ভূতভাবে শেয়ার ব্যবসা, বেতনের দ্বিগুণ গাড়িভাতা নেয়া, পণ্য কেনাকাটা, ঘুষ দাবি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থের অপব্যবহারের অভিযোগও উঠে তাদের বিরুদ্ধে।
বীমা সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০১১ সালে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠনের পর থেকে বীমাশিল্পে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাসহ দুর্নীতি উৎখাতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানটি। কর্তৃপক্ষের এসব পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে স্বার্থানে¦ষী মহলের স্বার্থে আঘাত লাগে। বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে এ মহলটি সংস্কার কর্মসূচি বন্ধ বা এর গতিশ্লথ করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু এসব পদ্ধতিতে ব্যর্থ হয়ে তারা ২০১২ সাল থেকেই সংস্থাটির চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে প্রচার মাধ্যমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিষোদগার শুরু করে। তারা হন তথ্যসন্ত্রাসের শিকার। মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করেই চক্রটি ক্ষ্যান্ত হয়নি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহীদের হয়রানির জন্য নামে বেনামে মামলাও দায়ের করে। অবশ্য এসব প্রোপাগান্ডা অভিযোগ ও মামলার সমুচিত জবাব দিয়ে নিজেদের নির্দেশ প্রমাণ করেছেন প্রাক্তন চেয়ারম্যানরা। দুর্নীতির অভিযোগে কেউই চাকরিচ্যুত বা দণ্ডিত হননি। বিগত দুই চেয়ারম্যানই তাদের মেয়াদ পার করেছেন। অবশ্য আইডিআরএ’র বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেনের ভাগ্য নিয়ে শঙ্কিত সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করেন, লুটেরা গোষ্ঠী যেভাবে আটঘাট বেঁধে মোশাররফের বিরুদ্ধে লেগেছে তাতে তিনি কতটা সফলতার সঙ্গে তাদের মোকাবিলা করতে পারবেন তার ওপর নির্ভর করবে তাঁর নিরাপদে পেশাগত দায়িত্ব পালন।
তাদের পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়েছে, আইডিআরএ’র অধীনে ৮১টি বীমাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। অনিয়মের অভিযোগে বহু প্রতিষ্ঠানকে নজরদারিতে রেখেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। দুর্নীতির দায়ে চালায় অভিযান। অনেক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা গুনতে হয়। কোনো কোনো মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে অপসারণ করা হয়। আইডিআরএ’র কঠোরতায় দুর্নীতির দায়ে কেউ কেউ বীমাখাতে নিষিদ্ধ। কিছু প্রতিষ্ঠানে পর্ষদ ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ ধরনের কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এ জন্য অনেক চেয়ারম্যানকে মিথ্যা মামলা ও হয়রানি মোকাবিলা করে পথ চলতে হয়।
সূত্র জানায়, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে আইডিআরএ’র সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটওয়ারীর নির্দেশে পরিচালিত নিরীক্ষায় নানা অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে অর্থ আত্মসাৎ দুর্নীতি রাজস্ব ফাঁকি ও পলিসিহোল্ডারদের বীমা দাবি উপেক্ষা। এ জন্য ড. মোশাররফ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আদিবা রহমানের নিয়োগ নবায়নের আবেদন নাকচ করেন। এজন্য রাগে ক্ষেভে ঘৃণায় জিদে অভিমানে অপমানে প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতি দমন কমিশনে ড. মোশাররফের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ আনে। পরবর্তীতে প্রশাসক নিয়োগ করায় ডেল্টা লাইফ তার বিরুদ্ধে আরো প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে। ড. মোশাররফের পূর্বসূরি শফিকুর রহমান পাটোয়ারীও পণ্য কেনাকাটায় অনিয়ম দুর্নীতির অপবাদ নিয়েই মেয়াদ পার করেছেন।
শফিকুর রহমানের পূর্বে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান ছিলেন এম শেফাক আহমেদ। পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে শেফাক আহমেদের বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। প্রত্যেক মামলায় তিনি খালাস পান। তবে শেফাক আহমদের বিরুদ্ধেও ঘুষ দাবির অভিযোগ এনেছে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, যেখানে কাজ করছি, সেখানে বিভিন্ন সুবিধাভোগী গোষ্ঠী রয়েছে। তাদের অনিয়ম ধরাটা আমার বড় অপরাধ ছিল। নিজে চুপচাপ কাজ করলে ভালো হতো। তিনি বলেন, রেগুলেটর অনিয়ম না ধরলে সবাই ফ্রেন্ড হয়ে যাবে। অনিয়ম ধরলে অনেক অভিযোগ চলে আসবে। সেদিকে তাকালে হবে না। সামনে এগোতে হবে।
Posted ১:৩৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ জুন ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy