আমেনা খাতুন প্রণামি | মঙ্গলবার, ২৭ জুন ২০২৩ | প্রিন্ট | 247 বার পঠিত
বৃহস্পতিবার মুসলিমদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা।
বিশ্বজুড়ে উদযাপিত এই ত্যাগের উৎসব নিয়ে সবারই থাকে নানা পরিকল্পনা। কোরবানি সামনে রেখে ব্যাংকিং খাতেও আমেজ বেড়েছে কয়েকগুণ।
গ্রাহকদের বিভিন্ন সেবা প্রদানের মাধ্যমে যেন ঈদ উদযাপন করেছেন তারা। চলতি মাসে ঈদের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দিতে বাজারে নতুন নোট ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ঈদের ছুটিতে এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশ দিয়েছে ব্যাংকটি।
এদিকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবায় বেড়েছে তৎপরতা, অন্যদিকে গতি বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহে। এবারের ঈদের ছুটিতে পোশাক শ্রমিকদের জন্য বিশেষ ব্যাংকিং সেবা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রাজধানীর ব্যাংকপাড়ায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আর্থিক লেনদেন শাখায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা। স্বাভাবিকের তুলনায় সেখানে গ্রাহকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। কেউ এসেছেন প্রাতিষ্ঠানিক লেনদেনের কাজে, কেউবা কোরবানি উপলক্ষে টাকা উত্তোলন এবং গ্রামে টাকা পাঠানোর জন্য। তাছাড়া কিছু সংখ্যক গ্রাহক পরিবারের সদস্যের বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের টাকা তুলতে এসেছেন।
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে রেমিট্যান্স প্রবাহে গতি বেড়েছে। প্রবাসীরা দেশে অর্থ পাঠানো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, চলতি জুন মাসের প্রথম ২৩ দিনে প্রায় ১৭৯ কোটি ৬৬ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যমান ধারা অব্যাহত থাকলে জুন শেষে রেমিট্যান্স ফের দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে।
ইসলামী ব্যাংক থেকে টাকা উঠাতে আসা পুরান ঢাকার বাসিন্দা শরীফ জোহরা ব্যাংক বীমা অর্থনীতিকে জানান, উনার ভাই কোরবানি উপলক্ষে টাকা পাঠিয়েছেন। এই টাকা দিয়েই কোরবানির গরু এবং অন্যান জিনিস কেনাকাটা করা হবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ঈদকে ঘিরে দেশে অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়। ঈদুল ফিতরে এই টাকার বড় অংশ পোশাক, ভোগ্যপণ্যে ব্যয় হলেও ঈদুল আজহাতে এর সিংহভাগ ব্যয় হয় কোরবানির পশু কেনায়। তাছাড়া মানুষ এই উৎসব ঘিরে প্রচুর অর্থ খরচ করেন। এতে উৎপাদনকারী, আমদানিকারক, ব্যবসায়ী প্রত্যেকে কিছু না কিছু লাভবান হয়ে থাকেন। পাশাপাশি এই সময়ে দান-সদকা বৃদ্ধি পাওয়ায় ধনী-গরিব সবার হাতেই টাকার জোগান বাড়ে। এতে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এবারের ঈদ উপলক্ষে গত ১৮ জুন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ঢাকা অঞ্চলের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে নতুন নোট সরবরাহ করা হয়। যার বিতরণ রোববার শেষ হয়েছে। তাতে একজন গ্রাহক ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকা মানের নতুন নোট সর্বোচ্চ একবার সংগ্রহ করতে পেরেছেন। ঈদুল ফিতরের মতো শুরুর দিকে খুব একটা ভিড় না থাকলেও শেষদিকে নতুন নোট সংগ্রহে গ্রাহকদের ভালো উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ঈদের আগে নতুন টাকা সালামি হিসেবে দেওয়ার জন্যই গ্রাহক ব্যাংকে এসে লম্বা লাইন দাঁড়িয়ে টাকা সংগ্রহ করেন। নতুন টাকার একটা হিড়িক প্রতি বছরই উঠতে দেখা যায়, এ বছরও তার কোনো ভিন্নতা নেই। তাই ঈদ এলেই গ্রাহকদের আনন্দ বৃদ্ধিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নতুন টাকা সরবরাহ করা হয়।
ঈদুল আজহার ছুটিতে এটিএম (অটোমেটেড ট্রেলার মেশিন) বুথ, পয়েন্ট অব সেল, কিউআর কোড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সেবার নিরবচ্ছিন্ন লেনদেন নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গেলো রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্দেশনা সকল ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এটিএম বুথে সার্বক্ষণিক সেবা নিশ্চিত করা, কোনো কারিগরি ত্রুটি দেখা দিলে তা দ্রুত নিরসনের ব্যবস্থা, বুথে পর্যাপ্ত টাকা সরবরাহ নিশ্চিত করা, টাকা উত্তোলনের একক লেনদেনের সর্বোচ্চ পরিমাণ ঠিক রাখা, বুথের পাহারাদারের সার্বক্ষণিক সতর্ক অবস্থানসহ অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বুথ পরিদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে।
এদিকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতিদিনই গ্রাহক বাড়ছে, বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণ। প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে বা দ্রুত শহর থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে শহরেÑসর্বত্রই টাকা পাঠানোর সুযোগ তৈরি হওয়ায় মোবাইল ব্যাংকিং দেশের ব্যাংকিং সেবায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ, মাই ক্যাশ, শিওর ক্যাশসহ বিভিন্ন নামে ১৩টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। ২০২২ সালের মার্চ শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ১১ কোটি ৮৯ লাখ এর বেশি। এর মধ্যে শহরে গ্রাহক আছে ৫ কোটি ৩৫ লাখ; এছাড়া গ্রামে রয়েছে ৫ কোটি ৭৩ লাখ। নিবন্ধিতদের মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ৪১ লাখ এবং নারী গ্রাহক ৪ কোটি ৬৩ লাখ। সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের পরিমাণ বাড়াতে এর সীমা বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন থেকে এমএফএস মাধ্যমে গ্রাহকরা দিনে এজেন্ট থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং ব্যাংক হিসাব বা কার্ড থেকে ৫০ হাজার টাকা জমা করতে পারবেন। আগে দৈনিক ৩০ হাজার টাকার বেশি জমা করা যেত না। কার্ড থেকে টাকা জমার সীমাও নির্দিষ্ট ছিল না। এখন একজন গ্রাহক আরেকজনকে মাসে দুই লাখ টাকা পাঠাতে পারবেন। আগে এ সীমা ছিল ৭৫ হাজার টাকা।
তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মরত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের সুবিধার্থে তফসিলি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখাগুলো আগামী ২৭ ও ২৮ জুন সরকারি ছুটি থাকা সত্ত্বেও সীমিত পরিসরে খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মরত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ ও রফতানি বিল ক্রয়ের লক্ষ্যে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ‘সরকার পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ২৭ জুন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় এদিন তফসিলি ব্যাংকগুলোর শাখা ও উপশাখা বন্ধ থাকবে।
তবে ঈদুল আজহার আগে তৈরি পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের রফতানি বিল বিক্রয়ের এবং তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বেতন, বোনাস ও অন্যান্য ভাতা পরিশোধের সুবিধায় ঢাকা মহানগরী, আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, ভালুকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে অবস্থিত তফসিলি ব্যাংকের তৈরি পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট শাখাগুলো পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ২৭ ও ২৮ জুন সরকারি ছুটি থাকার সত্ত্বেও, সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে।’
Posted ৫:০১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৭ জুন ২০২৩
bankbimaarthonity.com | rina sristy