নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট | 323 বার পঠিত
একটি বিজ্ঞাপন বিলের মাত্র ৩ হাজার ৩৩৯ টাকার চেক পরিশোধে ব্যর্থ হন ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি)। চেক ডিসঅনারের ঘটনায় এনআইএক্ট’র ১৩৮ ধারায় দায়ের হওয়া মামলায় হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতের কাঠগড়ায় হাজির হয়ে জামিন লাভ করেছেন এনটিসি’র এমডি মুহাম্মদ মুসা এবং মহা-ব্যবস্থাপক অর্থ ও ফাইন্যান্স (সিএফও) মো. কেরামত আলী। আদালতে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে আলোচনার মাধ্যমে আপস মীমাংসায় একমত হতে না পারায় মামলাটি বিচারিক আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছে। মামলার বাদী শাহ মো. হুমায়ুন কবীর ‘দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতিকে’ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, সোমবার (২৭ নভেম্বর ) বেলা ১১ টায় হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেনের আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেন এনটিসির এমডি মুহাম্মদ মুসা ও সিএফও মো.কেরামত আলী। একই সাথে আসামী পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে আপস মীমাংসার প্রস্তাবসহ আর্জি পেশ করেন। এই ব্যাপারে আদালত বাদীর মতামত জানতে চাইলে, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণসহ শর্ত সাপেক্ষে আপস মীমাংসায় রাজি আছেন বলে আদালতকে জানান। পরে বিবাদী পক্ষ বাদী পক্ষের শর্ত মানতে নারাজ হওয়ায় মামলাটি নিষ্পত্তি না হয়ে সুরাহার জন্য অর্থঋণ আদালতে (বিচারিক)
স্থানান্তরের আদেশ জারি করেন। একই সঙ্গে বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রম শুরুর পূর্ব পর্যন্ত আসামী মুহাম্মদ মুসা এবং মো. কেরামত আলীর জামিন বহালের আদেশ দেন। উল্লেখ্য, এই আদেশের ফলে অর্থ ঋণ আদালতে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হলে দুই আসামীকে পুনরায় জামিন নিতে হবে।
মামলার বাদী সাপ্তাহিক হবিগঞ্জের খবর পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক শাহ মো. হুমায়ুন কবীর আরো জানান, মাত্র ৩ হাজার ৩৩৯ টাকা একটি বিজ্ঞাপনের বিল পরিশোধে ব্যর্থতায় চেক ডিসঅনারের মামলায় এনটিসির প্রধান কার্যালয় ঢাকা থেকে সকাল ১০ টায় হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতের জামিন নিতে হাজির হয়েছেন এই দুই আসামী।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, গত ২ আগস্ট সাপ্তাহিক হবিগঞ্জের খবর পত্রিকার অনুকূলে এনটিসি থেকে মাত্র ৩ হাজার ৩৩৯ টাকার বিজ্ঞাপন বিলের চেক ইস্যু করা হয়। পরে নগদ অর্থের অভাবে পূবালী ব্যাংকের শান্তিনগর শাখার চেক নং-এএনএ ৬১৪৭৩৭৬ এবং এ/সি নং- ২৯৪০১০২০০০৫৪১ এই চেকটি ‘ডিসঅনার’ হয়। চেক গ্রহীতা শাহ মো. হুমায়ুন কবীরের পক্ষে তার আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী গত ৩ সেপ্টেম্বর এনটিসির ভারপ্রাপ্ত এমডি মোহাম্মদ মুসা এবং সিএফও মো. কেরামত আলী বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। নোটিশে ১৫ দিনের মধ্যে সাপ্তাহিক হবিগঞ্জের খবর পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক শাহ মো. হুমায়ুন কবীরের পাওনা ৩ হাজার ৩৩৯ টাকার নগদে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় নোটিশ প্রাপ্ত এনটিসি’র ভারপ্রাপ্ত এমডি এবং সিএফও’র বিরুদ্ধে চেক ডিসঅনার আইনে মামলা দায়ের করা হবে বলে জানানো হয়।
উল্লেখ্য, গত ২০২১-২২ অর্থ বছরে প্রতিষ্ঠানটির বহিঃনিরীক্ষক মেসার্স হুদাভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং তাদের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিলেন এই কোম্পানির ব্যাংক ঋণ ও অন্যান্য দায়ের পরিমাণ সম্পদের তুলনায় আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শিতায় প্রতিষ্ঠানটি চরম তারল্য সংকটে পড়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন। স্টেকহোল্ডারদের স্বার্থে প্রতিষ্ঠানটির বহিঃনিরিক্ষক তাদের প্রতিবেদনে আরও আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যে ধারাবাহিকভাবে তারল্য সংকট চলতে থাকলে শেয়ারহোল্ডারর্স ইকুইটি এন্ড লায়াবিলিটিজ, নন কারেন্ট লায়াবিলিটিজ ও কারেন্ট লায়াবিলিটিজের জন্য দায়-দেনা পরিশোধ করে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসাবে টিকে থাকা এনটিসির পক্ষে আর সম্ভব হবে না।
এছাড়া বহিঃনিরীক্ষক অডিটরস রিপোর্টে আরো উল্লেখ করেন,‘লোকসানের এই ধারা অব্যাহত থাকলে কোম্পানি অবসায়ন অথবা চা বাগানসহ সকল ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ করা ছাড়া বিকল্প উপায় থাকবে না’। বহিঃনিরীক্ষক মেসার্স হুদাভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং তাদের ২০২১-২২ অর্থ বছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে যে অভিমত ব্যক্ত করে ছিলেন, পরবর্তীতে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এনটিসির শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ‘নো ডিভিডে›ড’ ঘোষণা এবং পাশাপাশি ২০২২-২৩ অর্থ বছরে প্রায় ৬৪ কোটি টাকা লোকসানের মাধ্যমে সেই আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানেই চেক ডিসঅনারের ঘটনায় ফুটে উঠেছে ন্যাশনাল টি কোম্পানির চরম তারল্য সংকটে থাকা অর্থনৈতিক দৈন্যদশার চিত্র।
এদিকে দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতির পক্ষ থেকে এনটিসির এমডি মুহাম্মদ মুসার বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। শুরুতেই হবিগঞ্জে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতের আদেশের বিষয় জানতে চাইলে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। এক পর্যায়ে মিটিংএ আছেন বলে সংযোগ কেটে দেন। এরপর এনটিসির সিএফও মো. কেরামত আলীর বক্তব্য জানতে তার মুঠো ফোনে একাধিকবার চেষ্ঠা করা হয়। কিন্তু তিনি কল রিসিভ করেন নি।
Posted ১০:২২ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৩
bankbimaarthonity.com | rina sristy