বিবিএনিউজ.নেট | বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০১৯ | প্রিন্ট | 997 বার পঠিত
স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১৮ লাখ ১৮ হাজার ৪১৩টি অ্যাকাউন্ট খুলেছে শিক্ষার্থীরা। যা গত বছরের আলোচ্য সময়ে ছিল ১৪ লাখ ৫৩ হাজার ৯৩৬টি। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে অ্যাকাউন্ট সংখ্যা বেড়েছে তিন লাখ ৬৪ হাজার ৪৭৭। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ওইসব অ্যাকাউন্টে জমা অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় এক হাজার ৫১০ কোটি ৩২ লাখ টাকা। যা গত বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি। তবে শহরের তুলনায় গ্রামে এই হিসাব খোলার প্রবণতা কম।
আর্থিক খাতের বিশ্লেকরা বলেছেন, এটা ব্যাংকিং খাতের জন্য ইতিবাচক। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা পাওয়া যাবে। এর আওতা বাড়াতে গ্রামে স্কুল ব্যাংকিংয়ের যাবতীয় সুবিধা তুলে ধরতে হবে।
হিসাবধারী অ্যাকাউন্টের প্রায় সাড়ে ৪৭ শতাংশই ইসলামী ব্যাংক ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন বিভাগের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামীণ এলাকায় এখনো পিছিয়ে আছে এই ব্যাংকিংসেবা। স্কুল ব্যাংকিংয়ের মোট অ্যাকাউন্টের মধ্যে ৬৩ শতাংশই শহরে, মাত্র ৩৭ শতাংশ রয়েছে গ্রামাঞ্চলে। এ ছাড়া ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীরা পিছিয়ে রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্কুলের ছোট ছোট ছাত্রছাত্রীদের সঞ্চয়ের অভ্যাসে উৎসাহিত করতে ‘স্কুল ব্যাংকিং’ কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। মাত্র ১০০ টাকা জমা দিয়ে নিজের নামে হিসাব খুলতে পারে শিক্ষার্থীরা। এতে একদিকে শিক্ষার্থীদের অর্থ জমা হচ্ছে, অন্যদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকেরও আমানত বাড়ছে। দেশে কার্যরত ৫৭টি তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে বর্তমানে ৫৬টি ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক আবুল বশর বলেন, শিক্ষার্থীদের ব্যাংকমুখী করে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন সময় প্রচারমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সঞ্চয়ের মনোভাব বাড়ছে। স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের মধ্যে আর্থিক সেবা পৌঁছে দেয়ার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৫ সালে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ইউথ ফাইন্যান্স ইন্টারন্যাশনালের’ (সিওয়াইএফআই) ‘কান্ট্রি অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কারে ভূষিত হয় বাংলাদেশ।
প্রতিবেদনের তথ্য মতে, সারা দেশে বিভিন্ন ব্যাংকে ১৮ লাখ ১৮ হাজার ৪১৩টি স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলা হয়েছে। যার মধ্যে শহরের ব্যাংক শাখাগুলোতে ১১ লাখ ৪৪ হাজার ২৪৩টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আর গ্রামীণ এলাকার শাখাগুলোতে অ্যাকাউন্ট রয়েছে ছয় লাখ ৭৪ হাজার ১৭০টি। শহরের অ্যাকাউন্টগুলোতে টাকার পরিমাণও বেশি।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলায় শীর্ষে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। আর আমানতের পরিমাণের দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড।
সর্বোচ্চ পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকে অ্যাকাউন্টের সংখ্যা তিন লাখ ২৩ হাজার ১৮৭টি, যা মোট অ্যাকাউন্টের প্রায় ১৭.৭৭ ভাগ। এ ছাড়া ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে তিন লাখ সাত হাজার ৯৮৯টি, অগ্রণী ব্যাংকে দুই লাখ সাত হাজার ৮৭৩টি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে এক লাখ সাত হাজার ১০২টি এবং উত্তরা ব্যাংকে ৮৮ হাজার ৭৪৭টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, জমানো টাকার দিক থেকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের স্কুল ব্যাংকিংয়ে জমা পড়েছে ৪৫২ কোটি পাঁচ লাখ টাকা, যা মোট জমার ২৯.৯৩ শতাংশ। এর বাইরে ইসলামী ব্যাংকে ১৬১ কোটি ৮২ লাখ টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংকে ১২৬ কোটি সাত লাখ টাকা, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে ৮১ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং রূপালী ব্যাংকে ৬৯ কোটি ২০ লাখ টাকা জমা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গ্রামাঞ্চলের ব্যাংক শাখার মাধ্যমে খোলা স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের তুলনায় শহরাঞ্চলের ব্যাংক শাখার মাধ্যমে খোলা স্কুল ব্যাকিং হিসাবের সংখ্যা প্রায় ৬৯.৭৩ শতাংশ বেশি। ব্যাংকে জমার ক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলের জমার পরিমাণ প্রায় ১৯৭ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে স্কুল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির হার কম।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, স্কুল ব্যাংকিং এর আওতায় ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখ পর্যন্ত বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে ১২ লাখ ২৭ হাজার ৬০৯টি ব্যাংক হিসাব ছিল অর্থাৎ ৬৭.৫১ শতাংশ। এতে জমার পরিমাণ ছিল এক হাজার ২৬৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা অর্থাৎ ৮৩.৯৮ শতাংশ। অর্থাৎ বেসরকারি ব্যাংক হিসাবসমূহে জমার পরিমাণ হিসাব সংখ্যার তুলনায় বেশি ছিল।
অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকসমূহে চার লাখ ৫৭ হাজার ৩২০টি অর্থাৎ ২৫.১৫ শতাংশ ব্যাংক হিসাবের বিপরীতে মোট স্থিতি ছিল ১৯৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা অর্থাৎ ১৩.১০ শতাংশ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘এটা আর্থিক সাক্ষতরতার একটা অংশ। নতুন প্রজন্মকে কীভাবে ব্যাংকিং করতে হয়, কীভাবে সঞ্চয় করতে হয় এসব শেখার একটা উপায়।’
‘শিক্ষার্থীরা তাদের অর্থ ব্যাংকে দীর্ঘমেয়াদের জন্য রাখে। এতে উপকৃত হচ্ছে ব্যাংকিং খাত। কারণ ব্যাংকে আমানতকারীরা স্বল্প সময়ের জন্য আমানত রাখে। কিন্তু ব্যাংককে ঋণ দিতে হয় দীর্ঘমেয়াদে। ফলে ব্যাংকে মাঝে মাঝে তারল্য সংকটও দেখা দেয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরাও তাদের জমা অর্থ দীর্ঘদিন পরে উত্তোলন করে।’
Posted ৩:০৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed