বিবিএনিউজ.নেট | শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০১৯ | প্রিন্ট | 599 বার পঠিত
অর্থবছরের প্রথম আট মাসে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)। একইভাবে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা থেকেও বহুদূর পিছিয়ে সংস্থাটি। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলেছে সংস্থার দায়-দেনা। বিগত অর্থবছরে ৩১০ কোটি টাকা লোকসান দেয়া বিজেএমসির লোকসানের পরিমাণ এবার প্রথম আট মাসেই ৩৯৫ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সম্প্রতি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
গত ১৪ এপ্রিল বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিজেএমসির ওপর প্রতিবেদন উপস্থাপন করে মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কাঁচাপাট ক্রয়, পাটপণ্য উৎপাদন এবং বিদেশে ও স্থানীয় বাজারে ওই পণ্য বিক্রি—সব ক্ষেত্রেই লক্ষ্যমাত্রা থেকে বহুদূরে বিজেএমসি।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিজেএমসির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ টন। বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৫২ হাজার ৩৭২ টন। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সংস্থাটির পাটক্রয়ের নিট লক্ষ্যমাত্রা ১৭ লাখ ৯০ হাজার কুইন্টাল। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে সংস্থাটি কিনেছে মাত্র ৪ লাখ ১৫ হাজার কুইন্টাল কাঁচা পাট। অর্থাৎ অর্থবছরের দুই-তৃতীয়াংশে পাটক্রয় লক্ষ্যমাত্রার মাত্র এক-পঞ্চমাংশ ছুঁতে পেরেছে বিজেএমসি।
উৎপাদনকৃত পাটপণ্য বিক্রির ক্ষেত্রেও একই দশা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির। চলতি অর্থবছরে মোট ১ লাখ ৪১ হাজার ৮৯৭ টন রফতানি লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে বিজেএমসির। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৯৪ হাজার ৫৯৮ টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রফতানি হয়েছে মাত্র ২২ হাজার ১০৪ টন। এ সময় ৮৮২ কোটি টাকা রফতানি আয় লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জিত হয়েছে মাত্র ১৯৫ কোটি ১১ লাখ টাকা।
দেখা গেছে স্থানীয় বাজারে পাটপণ্য বিক্রির ক্ষেত্রেও পিছিয়ে আছে বিজেএমসি। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৮ হাজার ৪৩৫ টন স্থানীয় বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অর্জিত হয়েছে ২৩ হাজার ১৭ টন। এ খাত থেকে ৩৯৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ২৪৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
প্রতিবেদনের তথ্য মতে, বর্তমানে বিজেএমসির পাটকলগুলোয় মোট তাঁতের সংখ্যা ১০ হাজার ৮৩৫টি। এর মধ্যে চালুর উপযোগী তাঁত ৯ হাজার ৫৫২টি। আর অকেজো হয়ে আছে ১ হাজার ২৮৩টি। যদিও বিদ্যমান সক্ষমতার সবটুকু কাজে লাগাতে পারছে না সংস্থাটি। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭ হাজার ৭৩৪টি বাজেটেড তাঁতের মধ্যে চালু ছিল ৪ হাজার ৩৮৯টি।
উৎপাদন-আয় এবং সক্ষমতা-সচলতার এমন বেহাল চিত্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিজেএমসির দায়-দেনার পরিমাণ। মন্ত্রণালয়ের দেয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ সংস্থাটির দায়-দেনার পরিমাণ (সাময়িক) ২ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত অর্থবছরে সংস্থাটির লোকসানের পরিমাণ (সাময়িক) ছিল ৩১০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসেই লোকসান (সাময়িক) দাঁড়িয়েছে ৩৯৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ধারাবাহিক লোকসানের কারণ হিসেবে বিজেএমসি অর্থসংকট ও মজুরিজনিত ব্যয়ের কথা উল্লেখ করেছে। তবে কমিটির একাধিক সদস্য বলেছেন, পাট খাতের উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্যোগ নিয়ে চলেছে সরকার। তবে দুর্নীতি ও অদক্ষতার জন্য সেসব উদ্যোগ কাজে আসছে না।
কমিটির সভাপতি মির্জা আজম এ বিষয়ে বলেন, বিজেএমসিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের জন্য বাস্তবভিত্তিক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিজেএমসির পাটকলগুলো দীর্ঘদিনের পুরনো হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আধুনিকায়নের কাজ চলছে। পাট থেকে চারকোল, কম্পোজিট জুট টেক্সটাইল, পাট পাতার কোমল পানীয়, নদীভাঙন রোধে পরিবেশবান্ধব জুট জিও টেক্সটাইল, পলিথিনের বিকল্প পাটের শপিং ব্যাগ উদ্বোধনের মাধ্যমে পাট খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। এর ফলে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে বিজেএমসি ও পাট খাতের সুদিন ফিরিয়ে আনতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর।
Posted ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed