নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ১৪ মে ২০২০ | প্রিন্ট | 431 বার পঠিত
সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে অগ্রিম আয়কর বাবদ কেটে রাখা পুঁঞ্জিভুত অর্থ ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন (বিসিএমএ)। আজ বৃহস্পতিবার (১৪ মে) এই অনুরোধ জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে একটি চিঠি দিয়েছে বিসিএমএ। বিসিএমএ সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
উল্লেখ, সিমেন্ট শিল্পে কাঁচামাল আমদানি, সিমেন্ট বিক্রি ও রপ্তানির সময় উৎসে কর হিসেবে অগ্রিম কর কেটে রাখা হয়, যার পরিমাণ প্রায় ৯ শতাংশ। আইন অনুসারে কেটে রাখা এই কর কোম্পানির মোট প্রযোজ্য করের সাথে সমন্বয়যোগ্য। কোনো আর্থিকবছরে একটি কোম্পানির দেওয়া অগ্রিম আয়করের পরিমাণ কোম্পানির প্রযোজ্য আয়করের চেয়ে বেশি হলে বাড়তি টাকা ফেরত দেওয়ার কথা। কিন্তু বছরের পর বছর পার হয়ে গেলেও ওই অর্থের বড় অংশই ফেরত দেওয়া হয় না। এনবিআরের কাছে প্রাপ্য কোম্পানিগুলোর পুঁঞ্জিভুত পাওনা প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা।
করোনাভাইরাস মহামারিতে সিমেন্ট শিল্প বড় ধরনের সংকটে পড়ায় বিশেষ বিবেচনায় অতি দ্রুত ওই টাকা ফেরত দেওয়া বা ছাড় করার অনুরোধ জানিয়েছে বিসিএমএ।
বিসিএমএ সভাপতি ও এমআই সিমেন্ট ফ্যাক্টরির (ক্রাউন সিমেন্ট) ভাইস-চেয়ারম্যান মোঃ আলমগীর কবির স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে সিমেন্ট শিল্পের বিভিন্ন সমস্যা ও করোনা-সংকটের প্রভাবের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নির্মাণ শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। আর নির্মাণ শিল্পের অন্যতম প্রধান কাঁচামাল হলো সিমেন্ট। দেশে জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং অবকাঠামো খাতে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগের উপর ভিত্তি করে সিমেন্ট খাতে দুই অংকের প্রবৃদ্ধি হয়ে আসছিল।
দুর্ভাগ্যবশতঃ বিগত কয়েক বছর যাবত এ শিল্প বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে। দেশে সিমেন্টের ৭৮ মিলিয়ন টন উৎপাদনক্ষমতার বিপরীতে চাহিদা মাত্র ৩৩ মিলিয়ন টন। ফলে কঠিন প্রতিযোগিতায় কয়েক বছর ধরে সিমেন্টের দাম ক্রমাগত কমেছে। অন্যদিকে, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নে কাঁচামালের দাম বেড়ে গেছে। এছাড়াও গ্যাস-বিদ্যুত বিল, শ্রম ব্যয় ও পরিবহন খরচ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে আদায়যোগ্য অর্থের পরিমাণ ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় তার বিপরীতে চলতি মূলধনের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। তাতে কোম্পানিগুলোর ঋণের পরিমাণ ও সুদজনিত চাপও বেড়ে গেছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, সিমেন্টের ১০০% কাঁচামালই আমদানি নির্ভর। বর্তমানে আমদানিতে অগ্রিম আয়কর হিসেবে ৩% উৎসে কর আদায় হচ্ছে। আমদানি পর্যায়ে কাঁচামালের মূল্যায়িত দাম সাধারণত ২৫% বেশি হয়ে থাকে। তাই কার্যকর অগ্রিম আয়কর হয় প্রায় ৪%। অন্যদিকে সকল পণ্য ও সেবার বিপরীতে ৫% এরও বেশি হারে উৎসে কর আদায় করা হচ্ছে। সিমেন্ট বিক্রি ও রপ্তানির সময় উৎসে কর বিবেচনায় নিলে অগ্রিম আয়করের কার্যকর হার দাঁড়ায় প্রায় ৯%। অধিকন্তু, বর্তমান অর্থবছর থেকে আমদানি পর্যায়ে ৩% অগ্রিম আয়কর ন্যূনতম কর দায় হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
এমন অবস্থায় প্রায় ৯% অগ্রিম আয়কর মুনাফার সাথে সমন্বয় করা যাবে না। এই অগ্রিম আয়কর সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে যাওয়ায় এবং কোম্পানিগুলো কর পূর্ববর্তী স্বল্প মুনাফার কারণে এ বছর সকল সিমেন্ট কোম্পানিকেই লোকসান দিতে হচ্ছে। সামনের বছরগুলোতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
চিঠিতে বিসিএমএ সভাপতি লিখেছেন, সর্বশেষ করোনাভাইরাস সিমেন্ট শিল্পে বড় আঘাত হেনেছে। গত বছরের এপ্রিল মাসের তুলনায় এবারের এপ্রিলে দেশে সিমেন্ট বিক্রি ৪৬% কমে গেছে। আমরা আশংকা করছি, অর্থনীতিতে গতি ফিরে আসতে সময় লাগবে। আর নির্মাণ খাতে গতি ফিরতে লাগবে তারচেয়েও বেশি সময়। প্রবাসী আয়ের নিম্নমুখী ধারার কারণে গ্রামে বাড়ি-ঘর নির্মাণ অনেক কমে যাবে। তাছাড়া মানুষের আয় কমে গেলে তারা নিত্য-প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্যই বেশি খরচ করবে এবং নির্মাণ খাত কম প্রাধান্য পাবে।
এদিকে, উৎপাদন প্রায় বন্ধ থাকলেও শ্রমঘন সিমেন্ট শিল্প শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়মিত দিয়ে যাচ্ছে। তাতে মাসে প্রায় ১০০ কোটি টাকাখরচ হচ্ছে যার পুরোটাই লোকসানের হিসাবে চলে যাচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে, সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর ব্যবসা করার ক্ষমতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এদিকে, সম্মিলিতভাবে সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর ৭৫০ কোটি টাকারও বেশি অসমন্বিত অগ্রিম আয়কর সরকারি কোষাগারে জমা রয়েছে। যদি ১০% হারে সুদ বিবেচনায় নেয়া হয়, তাহলে সিমেন্ট খাত শুধু সুদ হিসাবে বছরে ৭৫ কোটি টাকা হারাচ্ছে।
আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ১৪৬ নং সেকশন অনুযায়ী, করদাতার পরিশোধিত টাকা পরিশোধযোগ্য করের চেয়ে বেশি হলে তা ফেরত পাওয়ার যোগ্য। ফেরত দিতে দেরি হলে সরকার যতক্ষন পর্যন্ত না তা ফেরত দিবে ততক্ষন পর্যন্ত তার উপর ৭.৫% হারে সুদ প্রদান করবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, এ ফেরতযোগ্য টাকাগুলো বছরের পর বছর পরে থাকে এবং বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও তা নগদে ফেরত পাওয়া যায় না।
এই বাস্তবতায় পুঞ্জিভুত অগ্রীম আয়করের টাকাগুলো দ্রুত ফেরত বা ছাড় করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, এর ফলে অর্থাভাবগ্রস্ত কোম্পানিগুলো কিছু নগদ অর্থের সরবরাহ পাবে এবং এই কঠিন পরিস্থিতিতে অর্থায়নের খরচ কিছুটা কমিয়ে আনতে পারবে। তাতে সিমেন্ট কোম্পানিগুলো কিছুটা হলেও জীবন ফিরে পাবে।
Posted ১১:১৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ মে ২০২০
bankbimaarthonity.com | saed khan