বিবিএনিউজ.নেট | বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০১৯ | প্রিন্ট | 684 বার পঠিত
গত ২০ বছরে এক কোটি টাকার ওপরে ঋণখেলাপিদের তালিকা, এই সময়ে ঋণের সুদ মওকুফ করার পরিমাণ এবং ঋণের সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে অনিয়ম বন্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে আড়াই মাস আগে হাইকোর্ট আদেশ দিলেও তা জানায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা বন্ধের উপায় খুঁজে বের করতে একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠনের বিষয়ে আদালতের রুলের জবাবও দাখিল করেনি। উল্টো ঋণখেলাপিদের আরো সুবিধা দিতে পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের আচরণে ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট। এ অবস্থায় ওই সব বিষয়ে আদালতের আদেশ বাস্তবায়নসংক্রান্ত প্রতিবেদন ১৫ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন এবং তাঁদের অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ঋণখেলাপিদের সুবিধা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার জারির বিষয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট আবেদনকারী মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা এক সম্পূরক আবেদনের ওপর শুনানিকালে আদালত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।
আদালত বলেন, ‘আমরা দেখি ছোট ছোট ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আইনে মামলা হয়; কিন্তু রাঘব বোয়ালরা যারা আছে, তারা ব্যাংক লুট করে ফেলল। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কিছুই করা হচ্ছে না। বরং বারবার তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।’ আদালত বলেন, ‘আমরা এক মাসের মধ্যে কমিশন গঠন বিষয়ে রুল দিলাম। কিন্তু তারা তা বাস্তবায়ন করেনি। জবাবও দেয়নি। অথচ পত্রিকায় দেখতে পাই বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণখেলাপিদের সুবিধা দিতে আদেশ জারি করছে। তাহলে কি আমরা বলব যে আদালতের আদেশ বাধাগ্রস্ত করতেই সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক?’
এ সময় রিট আবেদনকারীর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আদালতে বলেন, ঋণখেলাপির তালিকা ছোট করতে এবং আদালতের আদেশ অকার্যকর করতেই নতুন সার্কুলার জারি করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে আইনজীবী মনিরুজ্জামান এ সময় আদালতে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণখেলাপির তালিকা করার লক্ষ্যে তার তত্ত্বাবধানে থাকা ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছে। তাদের কাছ থেকে তথ্য আসার পরই ঋণখেলাপির পূর্ণাঙ্গ তালিকা করে আদালতকে জানানো হবে।
রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, আদালতের আদেশ সংশ্লিষ্ট সব বিবাদীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রুলে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য সব ব্যাংকে আর্থিক দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থপাচার রোধে কেন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
এইচআরপিবির করা এক রিট আবেদনে হাইকোর্ট গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ঋণখেলাপির তালিকা দাখিলের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে রুল জারি করেন। রুলে আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, সিটি ব্যাংকের সাবেক সিইও মামুন রশিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে কমিশন গঠন এবং এই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদসচিব, প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দুই সচিব, আইনসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
Posted ৪:০২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed