বিবিএনিউজ.নেট | শুক্রবার, ০৩ মে ২০১৯ | প্রিন্ট | 699 বার পঠিত
বড় ঋণখেলাপিরা ঋণ পুনঃ তফসিলের সুবিধা পাবে কি না তার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এবার এ ক্ষমতা কিছুটা খর্ব করা হচ্ছে। ঋণ পুনঃ তফসিলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে একটি কমিটি গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বৃহস্পতিবার একটি প্রস্তাব দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এ প্রস্তাব মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে এ কমিটি। কমিটির প্রধান হবেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব।
বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে। প্রজ্ঞাপনে ঋণখেলাপিদের ঋণ পরিশোধে বিভিন্ন রকমের সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে এ ধরনের একটি চিঠি পেয়েছি। ঋণ পুনঃ তফসিলের ব্যাপারে একটি কমিটি গঠন হবে। কমিটি তার কার্যপরিধি অনুযায়ী কাজ করবে। তারা তাদের প্রস্তাব পাঠাবে। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা খর্ব হবে বলে আমি মনে করি না।’
সূত্র মতে, বড় ঋণ পুনঃ তফসিলের জন্য ঋণখেলাপিরা সাধারণত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে আবেদন করে। ঋণের অবস্থা, পরিশোধের ধরনসহ নানা বিষয় যাচাই-বাছাই করে এটি পুনঃ তফসিলের যোগ্য কি না তা সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাংক পর্ষদ। পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য তা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণখেলাপির সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এখন থেকে ঋণখেলাপিদের সরলসুদে ঋণ পুনঃ তফসিলের যে সুবিধা দেওয়া হবে তার সিদ্ধান্ত নেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি। এ কমিটির প্রধান হবেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব। এতে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও কয়েকটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকে রাখা হতে পারে। কমিটি গঠনের পর থেকে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক নয়, বরং এ কমিটিকে ঋণখেলাপিদের ঋণ পুনঃ তফসিলের আবেদন অনুমোদনের বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য পাঠাবে। কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো তা যাচাই-বাছাই করবে। পুনঃ তফসিলের জন্য যেসব ঋণকে যোগ্য মনে করবে কমিটি তার একটি প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংককে পাঠাবে।
অর্থনীতিবিদরা এ পুরো বিষয়টিতেই নাখোশ। তাঁরা বলছেন, এতে স্পষ্টত বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা খর্ব হচ্ছে।
এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘এসব উদ্যোগের ফলে কী লাভ হবে তা আমার জানা নেই। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আস্থা নেই। তা ছাড়া পৃথক কমিটির কী প্রয়োজন? আর এতে অবশ্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা খর্ব হবে। এটি ভালো কোনো উদ্যোগ নয়।’
সূত্র মতে, অর্থনীতিবিদরা না চাইলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী সপ্তাহে এসব বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা থাকবে, ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণখেলাপিরা যেকোনো অঙ্কের খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিলের আবেদন করতে পারবে। অর্থাৎ ১০০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে মাত্র ২০ কোটি টাকা ডাউন পেমেন্ট দিয়ে আবার নতুন করে ঋণ নিতে পারবে তারা। এ ঋণ পরিশোধের সময় থাকবে ১৩ বছর। এর মধ্যে আবার এক বছর থাকবে গ্রেস পিরিয়ড। এই এক বছরে ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধ করতে হবে না। আর ঋণ পুনঃ তফসিলের সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। এটি হবে সরল সুদ। প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ গণনার দিন শেষ হবে।
ঋণখেলাপিদের এ ধরনের সুবিধা দেওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এসব উদ্যোগ ঋণখেলাপি হতে আরো উদ্বুদ্ধ করবে। আমি এসব উদ্যোগের পক্ষপাতি নই।’
উল্লেখ্য, এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ অবলোপনের নীতিমালা শিথিল করে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো এখন থেকে চাইলে তিন বছরের মন্দমানের খেলাপি ঋণকে আর্থিক হিসাব থেকে বাদ দিতে পারবে। এতে কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ কম দেখাতে পারবে ব্যাংকগুলো।
Posted ৭:২১ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৩ মে ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed