নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ৩১ আগস্ট ২০২২ | প্রিন্ট | 218 বার পঠিত
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে সর্বশেষ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সনদ জমা দেওয়ার শর্ত আরোপের পর আশঙ্কাজনকহারে বিনিয়োগ কমেছে। চলতি অর্থবছরের (২০২২-২০২৩) প্রথম মাস জুলাইয়ে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমেছে ৮১ শতাংশ। জুলাই মাসে ৭ হাজার ১৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর বিপরীতে মুনাফা ও মূল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৬ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। এ মাসে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৯৩ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুলাইয়ে ছিল ২ হাজার ১০৪ কোটি টাকা। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের হালনাগাদ এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ সংক্রান্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআরের নির্দেশনার পর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারছেন না। পুরনো বিনিয়োগের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন করে বিনিয়োগ করতে না পারায় নিট বিনিয়োগ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। এতে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে বিনিয়োগ কমেছে সাড়ে ৫২ শতাংশ।
তথ্যমতে, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে হলে সর্বশেষ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সনদ জমা দেওয়ার শর্ত আরোপ করা হয়েছে। অন্যথায় নতুন করে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা যাবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগে টিআইএন জমা দিলেই বিনিয়োগ করা যেত। অনেকে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য টিআইএন খুলতেন, কিন্তু বছর শেষে রিটার্ন জমা দিতেন না। নতুন বিনিয়োগে টিআইএন সনদ জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারী যারা রিটার্ন জমা দেন না, তাদের নতুন বিনিয়োগ কমে যায়। সর্বশেষ চলতি অর্থবছরে আরও শর্ত জুড়ে দেয় সরকার। এখন থেকে ৫ লাখ টাকা বা ততোধিক পরিমাণের সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে ট্যাক্স রিটার্ন সনদ জমা দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানমতে, গত জুনে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ হয় ১ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের জুনে বিনিয়োগ হয়েছিল ৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ জুনে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ৬২ শতাংশ। অপর দিকে বিদায়ী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ হয়েছিল ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা-যা আগের অর্থবছরে ছিল ৪১ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিদায়ী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমেছে সাড়ে ৫২ শতাংশ।
বিনিয়োগকারীরা একদিকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে না পারায় তারা ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করছে, অপর দিকে সরকারের বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়ে যাচ্ছে। এ ফলে বেসরকারি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ব্যাংকগুলো উদ্যোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করতে পারছে না। এতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে।
ব্যাংকবহির্ভূত খাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশেই রয়েছে সঞ্চয়পত্র। বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণগ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটেও এটি অপরিবর্তিত রাখা হয়। কিন্তু বিদায়ী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে মাত্র ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা, যেখানে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১২ হাজার কোটি টাকার ওপরে ঘাটতি ছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ঘাটতি পূরণে জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার।
Posted ৭:৪০ অপরাহ্ণ | বুধবার, ৩১ আগস্ট ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy