নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট | 167 বার পঠিত
ডলার সংকট কাটাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণে সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ির ফল মিলছে। ডিসেম্বরে এসে প্রথমবারের মতো এলসি (ঋণপত্র) নিষ্পত্তির হার কিছুটা কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর একক মাস হিসেবে ডিসেম্বরে কমেছে ২৪ দশমিক ১০ শতাংশ। আর ছয় মাসে এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর দেশে কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক হলে বাড়তে থাকে পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র খোলা এবং নিষ্পত্তির পরিমাণ। এক পর্যায়ে আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ডলার দিয়েও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পারেনি। বেড়ে যায় বিনিময় হার। কমতে থাকে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমদানিতে লাগাম টানার বিভিন্ন উদ্যোগ নেয় সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক। কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক বাড়ানো হয়। আবার কিছু ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন বাড়ানো হয়। তারই ফলে ঋণপত্র খোলার পরিমাণ প্রতি মাসেই কমছে। ডিসেম্বরে এসে এলসি নিষ্পত্তির হারও কমতে শুরু করেছে। এতে আমদানি বাণিজ্যে ডলারের খরচ কিছুটা কম হওয়ায় ডলারের ওপর চাপও কিছুটা কমে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) আমদানির জন্য ৩ হাজার ২৩৯ কোটি ডলারের এলসি (ঋণপত্র) খুলেছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ কম। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৩ হাজার ৭৭৮ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩ হাজার ৮৩৮ কোটি ডলার। সেই হিসাবে এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে ৪২৫ কোটি ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে, যা এর আগের মাস নভেম্বরে ছিল ৫৬০ কোটি ডলার। ফলে এক মাসের ব্যবধানে এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ২৪ দশমিক ১০ শতাংশ । আর ডিসেম্বরে এলসি খোলার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪১১ কোটি ডলার, যা আগের মাস নভেম্বরে ছিল ৪০২ কোটি ডলার। সেই হিসাবে ডিসেম্বরে এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে ২ দশমিক ২৩ শতাংশ।
জানা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় বাড়ছে না রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্স। ফলে বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে দেশ। সংকট সৃষ্টি হয় মার্কিন ডলারের। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমে আসে। অর্থনীতির এমন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে আমদানির লাগাম টানতে নানা শর্ত দেয় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক। যার প্রভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ধারাবাহিকভাবে কমছে আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলার পরিমাণ। তবে এলসি খোলা কমলেও নিষ্পত্তি কমছিল না। ফলে ডলারের সংকটও কাটছিল না। এখন এলসি নিষ্পত্তি কমায় ডলার সংকট কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমান অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আমদানি কমাকে দেশের অর্থনীতির জন্য ‘মঙ্গল’ হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। তারা বলেছেন, এ মুহূর্তে এটারই খুব দরকার ছিল। আমদানি কমলে ডলারের বাজারও স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো কয়েক মাস ধরে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসপণ্যের আমদানিতে অনেক সতর্ক। ফলে এলসি নিষ্পত্তির হারও কমতে শুরু করেছে। আমদানি বাবদ খরচ কমে আসছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে খুব শিগগিরই স্থিতিশীলতা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত মার্চ মাসে ৯৮০ কোটি (৯.৮০ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খুলেছিলেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এপ্রিলে তা কমে ৮৪২ কোটি ডলারে নেমে আসে। মে মাসে তা আরও কমে ৭২৮ কোটি ডলারে নেমে আসে। জুন মাসে অবশ্য বেড়ে ৮৪৯ কোটি ডলারে ওঠে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ৬৩৯ কোটি ডলার। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে খোলা হয় যথাক্রমে ৬৬২ কোটি ও ৬৫১ কোটি ডলারের এলসি। অক্টোবরে তা এক ধাক্কায় ৪৭৪ কোটি ডলারে নেমে আসে। নভেম্বরে সেটা আরও কমে ৪০২ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। আর সবশেষ ডিসেম্বরে তা কিছুটা বেড়ে ৪১১ কোটি ডলার হয়েছে।
Posted ৭:৪৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৮ জানুয়ারি ২০২৩
bankbimaarthonity.com | rina sristy