নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ | প্রিন্ট | 282 বার পঠিত
কম সুদ হওয়ায় ব্যাংকের অফশোর ইউনিটের ঋণে আগ্রহ বেড়েছে ব্যবসায়ীদের। তিন মাসে ব্যাংকের অফশোর ইউনিটে ঋণ বেড়েছে তিন হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুন শেষে অফশোর ইউনিটের মাধ্যমে বিতরণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অফশোর ব্যাংকিংয়ে ঋণের সুদহার ৬ শতাংশেরও নিচে। স্থানীয় মুদ্রার পরিবর্তে বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব হয় অফশোর ব্যাংকিংয়ে। ব্যাংকের কোনো নিয়ম-নীতিমালা অফশোর ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হয় না। কেবল মুনাফা ও লোকসানের হিসাব যোগ হয় ব্যাংকের মূল হিসাবে। এসব কারণেই বাড়ছে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৯ সালের মার্চ শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৬০ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। তিন মাস পর জুনে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে অফশোর ব্যাংকিংয়ের ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বরে এ ঋণ ছিল ৬০ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা।
অফশোর ব্যাংকিং কী
অফশোর ব্যাংকিং হলো বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দেয়ার জন্য গঠিত ব্যাংকের আলাদা ইউনিট। দেশের বাইরে থেকে তহবিল সংগ্রহ করে রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ার জন্য ১৯৮৫ সালে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে ৩৬টি ব্যাংক এই ইউনিট গঠন করে ঋণ বিতরণ করছে। তবে অফশোর ব্যাংকিং চালুর পর গত মার্চে প্রথমবারের মতো ঋণ বিতরণ বৃদ্ধির পরিবর্তে কমে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য মতে, জুন পর্যন্ত অফশোর ব্যাংকিংয়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৫১ কোটি টাকা। এর মধ্যে এবি ব্যাংকের ৩২৬ কোটি টাকা এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ১০২ কোটি টাকা।
গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো অফশোর ব্যাংকিং পরিচালনার নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে বিতরণ করা ঋণের অন্তত ৭৫ শতাংশ বাংলাদেশে অবস্থিত কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়। এতে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেয়ার সক্ষমতা কমে যায়।
অফশোর কার্যক্রমের তহবিল আহরণের সুযোগ বৃদ্ধি, বৈদেশিক তহবিলের ব্যবহার নিশ্চিত করা, তহবিল ব্যবস্থাপনা যথাযথ রাখার মাধ্যমে অফশোর ব্যবসার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রমের আরও সুষ্ঠু বিকাশের জন্য গত ১৮ জুন আইনে কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নগদ জমা সংরক্ষণের হার (সিআরআর) সাড়ে ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে মাত্র ২ শতাংশ করা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে একটি ব্যাংকের মূলধনের ২০ শতাংশের পরিবর্তে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত তহবিল সংগ্রহ করার সুযোগ। এ সংশোধনের ফলে অফশোর ব্যাংকিংয়ে সক্ষমতা বেড়েছে।
জুন পর্যন্ত অফশোর ব্যাংকিংয়ে সবচেয়ে বেশি ১৪ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে এইচএসবিসি ব্যাংক। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এছাড়া ইসলামী ব্যাংক ৪ হাজার ৩৯৪ কোটি, দ্য সিটি ব্যাংক ৩ হাজার ৫৬ কোটি, ইস্টার্ন ব্যাংক ২ হাজার ১০৮ কোটি, ইউসিবি ব্যাংক ১ হাজার ৯৩৯ কোটি, ব্র্যাক ব্যাংক ১ হাজার ৮৯৮ কোটি, ব্যাংক এশিয়া ১ হাজার ৮৭৬ কোটি, সাউথইস্ট ব্যাংক ১ হাজার ৭৫৩ কোটি, প্রাইম ব্যাংক ১ হাজার ৭৩০ কোটি, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক দেড় হাজার কোটি ও অগ্রণী ব্যাংক অফশোর ইউনিটের মাধ্যমে ১ হাজার ৪২০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।
Posted ৪:২৪ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০
bankbimaarthonity.com | saed khan