সোমবার ২৫ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি বাড়লো ১৮ টাকা!

বিবিএনিউজ.নেট   |   শনিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২০   |   প্রিন্ট   |   281 বার পঠিত

চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি বাড়লো ১৮ টাকা!

সারাদেশে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৮ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ১২০ টাকা করা হয়েছে। আগে দৈনিক মজুরি ছিল ১০২ টাকা।

চা-বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা-সংসদ ও বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে মজুরি (বেতন) বৃদ্ধি সংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় নতুন চুক্তিতে এই মজুরি বাড়ানো হয়। আগের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার ২১ মাস ১৫ দিন পর বৃহস্পতিবার এই চুক্তি সম্পাদন হয়।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাখন লাল কর্মকার শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ চা বোর্ড ও চা-শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৬৭টি চা-বাগান আছে। এতে নিবন্ধিত শ্রমিকের সংখ্যা ৯৭ হাজার ৭০০ জন।

চা-বাগান মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) এবং শ্রমিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন (বাচাশ্রই) এর মধ্যে মজুরি বাড়ানোসহ নানা বিষয়ের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এর সূচনা হয়েছিল চলতি মাসে ৬ অক্টোবর। পর্যায়ক্রমে সারাদেশের ৭টি ভ্যালির প্রায় সব বাগানেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে কর্মবিরতি চলছে। তবে বিটিএর দাবি, চা-শ্রমিকদের এ আন্দোলন নিয়মবর্হিভুত।

তবে চা-বাগান কর্তৃপক্ষের দাবি, চা-বাগানের শ্রমিকরা দেশের অন্যান্য শ্রমিকদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থানেই আছেন। সবদিক বিবেচনায় তাদের মজুরি বাড়ার দাবি অনেকটাই অযৌক্তিক। বিশেষজ্ঞের অভিমত, মজুরি বেশি বাড়লে কিছু চা-বাগান বন্ধ হয়ে যাবে।

কুলাউড়া উপজেলার ফুলতলা চা-বাগানের উপ-ব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, চা শ্রমিকদের বেতন ১০/২০ টাকা বাড়লে অনেক চা-বাগানই বন্ধ হয়ে যাবে, অথবা হাত বদল হবে। গ্রুপ বা কোম্পানির বাগানগুলো হয়তো টিকে যেতে পারবে। কিন্তু সি ক্যাটাগরি বেসরকারি চা-বাগানগুলো পড়বে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে চা-বিপণনে দেখা দিয়েছে মন্দাভাব। আমরা খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে আছি।

চা- শ্রমিকদের অন্যান্য সুবিধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আমাদের চা শ্রমিকদের মাত্র ২ টাকা করে চাল রেশন (সাবসিডি) দিচ্ছি। আপনি কোথায় পাবেন দুই টাকার চাল বা আটা? আমরা এগুলো লসে দিচ্ছি। তারপর রয়েছে তাদের হাউজিং সুবিধা। তারা ফ্রিতে বাগানের বসতভিটায় বছরের পর বছর ধরে বাস করছে। তারপর রয়েছে চা-বাগানের অনাবাদি জমিগুলোতে সম্পূর্ণ ফ্রিতে কৃষিজাত পণ্য চাষাবাদের সুযোগ। সেখানে তারা হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল-ভেড়া ইত্যাদি পালন করার ফ্রি সুবিধা ভোগ করছে। শুধু তা-ই নয়, প্রতি বছর কোরবানিতে একাধিক গবাদি পশু বিক্রি করে প্রচুর লাভবান হচ্ছে কোনো কোনো চা শ্রমিকপরিবার।

তিনি বলেন, চা-বাগানের নিবন্ধিত চা-শ্রমিকসহ তাদের পুরো পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা-ওষুধ পুরোপুরি ফ্রি। এছাড়াও সবচেয়ে বড় যে ব্যাপারটা সেটা হলো প্রাথমিক শিক্ষা। এটাও সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে আমরা পরিচালনা করছি। অর্থাৎ ৫টি মৌলিক অধিকারের বস্ত্র ছাড়া ৪টি-ই আমরা পূরণ করছি।

বিটিএ এর সচিব ড. কাজী মোজারফ আহাম্মদ বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দিয়েছেন। এখানে তিনি উল্লেখ করেন- আলোচনা চলমান থাকা অবস্থায় চা-শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে আশ্রয় নেওয়া অযৌক্তিক, শ্রম আইনের পরিপন্থি এবং বেআইনি বলে বাংলাদেশীয় চা সংসদ মনে করে। এহেন বিনা নোটিশে কর্মবিরতি পালনের ফলে দেশের চা-উৎপাদন বিঘ্নিত হয়, ফলে বাগান কোম্পানি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ’

দেশের ১৬৭টি চা-বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সরাসরি ভোটে নির্বাচিত বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। এখানে প্রতিটি চা-বাগানের একেক দিন একেকটি বাগানে পৃথক পৃথক আন্দোলন করার কোনো মানে হয় না। এটি চা-শিল্পের জন্য অশনি সংকেত।

চা-শ্রমিক ইউনিয়ন ও চা-বাগান সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশি চা-সংসদ ও বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে। এরপর প্রথা অনুযায়ী নতুন চুক্তি হওয়ার কথা। দুই বছর পরপর দুই পক্ষের মধ্যে এই চুক্তি সম্পাদন হয়ে থাকে। সেই অনুযায়ী ২০১৯ সালের মার্চ মাস থেকে দুই পক্ষের মধ্যে নতুন চুক্তির বিষয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়। চা-শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে তাদের চাহিদা বাংলাদেশি চা-সংসদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে বিভিন্ন বৈঠকে দৈনিক মজুরি বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা চলেছে।

এদিকে বিশ্বব্যাপী কারোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে আলোচনা পিছিয়ে যায়। সম্প্রতি আবার আলোচনা শুরু হয়। এদিকে চুক্তি বিলম্বিত হওয়ায় দুর্গাপূজার আগেই মজুরি বৃদ্ধি ও সে অনুযায়ী বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবিতে চা-শ্রমিকেরা ৬ অক্টোবর থেকে বাগানে বাগানে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন ও মিছিল-সমাবেশ করেছেন।

একপর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার দুপক্ষের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন হলো। নতুন চুক্তির বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ১৪ বার বৈঠক হয়েছে। যদিও চাহিদামতো মজুরি বৃদ্ধি পায়নি শ্রমিকেরা। আগামী ডিসেম্বরে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। এরপর আগামী জানুয়ারি মাসে মালিকপক্ষের কাছে নতুন চার্টার ডিমান্ড দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন করেছেন চা শ্রমিকেরা। নতুন চুক্তি অনুযায়ী চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি করা হয়েছে ১২০ টাকা। আগে ছিল ১০২ টাকা। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এই মজুরি কার্যকর হবে। ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ অক্টোবর ২০২০ পর্যন্ত বকেয়া মজুরি চার দফায় পরিশোধ করা হবে। নতুন মজুরি দেওয়া শুরু হবে ১৯ অক্টোবর থেকে। সামনে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা থাকায় পূজার আগে প্রত্যেক শ্রমিককে বকেয়া টাকার মধ্যে তিন হাজার টাকা করে আগাম পরিশোধ করা হবে।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৩:৪৬ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11397 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।