আদম মালেক | মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০১৯ | প্রিন্ট | 609 বার পঠিত
পাঁচ বছর আগেও রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল জনতা ব্যাংক। ভালো করপোরেট গ্রুপের ঋণ, রপ্তানি আয় ও কর্মকর্তাদের দক্ষতার কারণেই জনতা ব্যাংককে অনুসরণের চেষ্টা করতো অন্যান্য ব্যাংকগুলো। অল্প সময়ের মধ্যে পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এখন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পড়েছে জনতা ব্যাংক। গত আড়াই বছরে ব্যাংকটির খেলাপি বেড়েছে ৪ গুণেরও বেশী। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৪ হাজার ৯৮৫ কোটি আর চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৪১০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এদিকে খাতওয়ারি হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয়ই মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেক রয়েছে। খেলাপি ঋণের শীর্ষ তালিকায় আছে জনতা ব্যাংক। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২১ হাজার ৪১০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপির ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। সম্প্রতি এই ব্যাংকেরই ক্রিসেন্ট গ্রুপের ৫ হাজার কোটি টাকা ও অ্যাননটেক্স গ্রুপের প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে।
জনতা ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এই ব্যাংকে ঋণখেলাপির মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে ‘অ্যাননটেক্স গ্রুপ’। বহুল আলোচিত এই গ্রুপের কাছে ব্যাংকের পাওনা চার হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। এরপরেই রয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ। কোম্পানিটির কাছে জনতা ব্যাংকের আটকে আছে তিন হাজার ৫৭২ কোটি টাকা। এই দু’টি গ্রুপই আবার একই মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যারা সম্পূর্ণ প্রতারণা ও তৎকালীন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সহায়তায় এই বিশাল অঙ্কের ঋণ অনুমোদন করিয়ে নিয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত ব্যাংকটির চেয়ারম্যান থাকার সময় সম্পূর্ণ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশাল অঙ্কের ঋণ প্রদান করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে, যার পুরোটাই কয়েক বছর ধরে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়ে আছে। ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে পাঁচ বছর জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ২৭ জুলাই পর্যন্ত এমডি ছিলেন এস এম আমিনুর রহমান। তাদের সময়েই এসব অর্থায়ন হয়েছে।
জনতা ব্যাংকের তৃতীয় শীর্ষ খেলাপির জায়গায় রয়েছে ‘গ্রাম বাংলা এনপিকে’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এর কাছে ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ৩১২ কোটি টাকা। এর পরের অবস্থানেই রয়েছে ‘জনকণ্ঠ গ্রুপ’। জনকণ্ঠ গ্রুপের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২২৯ কোটি টাকা।
বিশাল এই খেলাপি ঋণ উদ্ধারে জনতা ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ নেয়া হয়েছে বলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এ দিকে, বৃহৎ দু’টি ঋণখেলাপি গ্রুপের বিষয়েও জনতা ব্যাংকের একটি ভাষ্য পাওয়া গেছে। ভাষ্য অনুযায়ী, ক্রিসেন্ট গ্রুপের কাছে তিন হাজার ৫৭২ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায়ে ইতোমধ্যে পরিচালনা পর্ষদের নির্দেশে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ব্যাংক ঋণগ্রহীতার মজুদ মালামাল/গোডাউন পাহারা দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে তদারকি করা হচ্ছে। ৬৬১ কোটি টাকার মজুদ মালামাল অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে বিক্রির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে ঋণগ্রহীতার সম্পত্তি বিক্রির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে অ্যাননটেক্সের বিষয়ে জনতা ব্যাংকের বক্তব্য হচ্ছে, সিইও ও এমডির নেতৃত্বে ডিএমডিকে প্রধান করে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তারা প্রতিনিয়ত ঋণগ্রহীতার সাথে আলাপ-আলোচনা করছেন। ঋণ পরিশোধে মার্চ ত্রৈমাসিক পর্যন্ত সময় নিয়ে গ্রাহককে তাগিদপত্র দেয়া হয়েছে। গ্রাহক ঋণ পরিশোধে এগিয়ে না এলে চূড়ান্ত নোটিশ প্রদান করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এসব পদক্ষেপেও খেলাপি ঋণ না কমে বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য গত রোববার খেলাপির সংখ্যা ও ঋণের পরিমাণ অতিমাত্রায় বাড়ার কারণ চিহ্নিত করাসহ তা থেকে উত্তরণে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে সেটি আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানাতে ৬টি ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ব্যাংকগুলো হচ্ছে- জনতা, অগ্রণী, রূপালী, সোনালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনতা ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জনতা ব্যাংকের এই ঋণগুলোর বেশির ভাগই অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেয়া হয়েছে। দেখা গেছে, কোনোরূপ যাচাই-বাছাই না করে পরিচালনা পর্ষদ টপ দুই ঋণখেলাপিকে অর্থ প্রদান করার অনুমোদন দিয়েছে। এই ঋণগুলো এখন আর আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। আদতে এই ঋণ আদায় করা যাবে কি না তা নিয়ে ঘোরতর সন্দেহ রয়েই গেছে।
Posted ২:৫৪ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed