বিবিএনিউজ.নেট | বুধবার, ২৭ মার্চ ২০১৯ | প্রিন্ট | 622 বার পঠিত
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়ছেই। চলতি মার্চ মাসের ২২ দিনেই ১১০ কোটি (১.১ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
মাস শেষে এর পরিমাণ ১৫০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে তথ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, বাজারে ডলারের কোন সংকট নেই।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক রেমিটেন্সে সুখবর দিয়ে শেষ হয়েছিল ২০১৮ সাল। গত বছরে এক হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ (১৫.৫৪ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা।
যা ছিল ২০১৭ সালের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি।
তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালেল প্রথম মাস জানুয়ারিতে ১৫৯ কোটি ৭২ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল এক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স।
দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারি ছিল ২৮ দিনে; তারপরও ১৩২ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছিল।
তৃতীয় মাস মার্চের ২২ দিনে (১ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত) ১০৯ কোটি ৫৭ লাখ ৩০ হাজার ডলারের রেমিটেন্স পাটিয়েছেন প্রবাসীরা।
মাস শেষে আরও নয় দিনের রেমিটেন্স যোগ হলে এই মাসে মোট রেমিটেন্সের পরিমাণ ১৫০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে জানুয়ারি মাসের কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে রেমিটেন্স বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তারই প্রভাব পড়ছে রেমিটেন্স প্রবাহে।”
রেমিটেন্স বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশী মুদ্রার সঞ্চয়নও (রিজার্ভ) সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। সোমবার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, গত ৭ মার্চ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের ১০০ কোটি ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পরও রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি অবস্থান করছে।
রেমিটেন্স আরও বাড়াতে মার্কিন ডলার-টাকার বিনিময় হার ৮৫ টাকা করার পরামর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেন, ভারত, চীন, ভিয়েতনামসহ অনেক দেশ মার্কিন ডলারের বিপরীতে তাদের মুদ্রার ব্যাপক অবমূল্যায়ন করেছে। বাংলাদেশেও হয়েছে; তবে এ দেশগুলোর তুলনায় কম।
তবে গত এক বছরে টাকার বিপরীতে ডলার বেশ খানিকটা শক্তিশালী হয়েছে।
সোমবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৪ টাকা ২৫ পয়সা। এক বছর আগে ২০ মার্চ ছিল ৮২ টাকা ৯৫ পয়সা।
এ হিসাবে এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ১ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এক হাজার ৪১ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছে বাংলাদেশে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি রেমিটেন্সের নিম্নগতি সরকারের নীতিনির্ধারকদের কপালে ভাঁজ ফেলেছিল।
স্থানীয় বাজারে ডলারের তেজিভাব এবং হুন্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে গত অর্থবছর রেমিটেন্স বাড়ে। খরা কাটিয়ে বাংলাদেশ ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষ করে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে।
বর্তমানে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। তাদের পাঠানো অর্থ বাংলাদেশে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। বাংলাদেশের জিডিপিতে রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মত।
এদিকে মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি অর্থবছরের ২৫ মার্চ পর্যন্ত ( গত বছরের ১ জুলাই থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত) প্রায় ২০০ কোটি ডলার বাজারে ছাড়া হয়েছে।
এর মধ্যে ৯০ শতাংশই কিনেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে পর্যাপ্ত ডলার থাকায় তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কেনার প্রয়োজন হচ্ছে না বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।
“পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সরকারের বড় বড় প্রকল্পের সরঞ্জাম আমদানির জন্য সরকারি পর্যায়ে আমদানি বেড়েছে। সেই চাহিদার যোগান দিয়ে বাজার স্থিতিশীল রাখতেই ডলার বিক্রি করা হচ্ছে।”
“বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার কেনা-বেচা একটা স্বাভাবিক বিষয়। বাজারে যখন ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায় তখন কেনা হয়। আবার যখন চাহিদা বেড়ে যায় তখন বিক্রি করা হয়। এখন সেটাই করা হচ্ছে।
“এখন বাজারে ডলারের কোন সংকট নেই।”
Posted ১১:১২ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৭ মার্চ ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed