বিবিএনিউজ.নেট | রবিবার, ০৯ জুন ২০১৯ | প্রিন্ট | 571 বার পঠিত
সবচেয়ে বড় বাজেট দিতে যাচ্ছে সরকার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে জন্য সম্ভাব্য বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। আসন্ন অর্থবছরে বাজেটের আকার বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে বাজেট ঘাটতির পরিমাণও।
প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের থেকে ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা বেশি। বাজেটের এই ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎসের ঋণই মূল ভরসা। এ ঋণ ব্যাংকিং খাত ও সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে।
এছাড়া নতুন বাজেটে সম্ভাব্য মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা (জিডিপির ১৩.১ শতাংশ)। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) খাতে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা (জিডিপি’র ৬ দশমিক ৮ শতাংশ) ধরা হয়েছে। আসন্ন বাজেটে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও বাজেটে ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের তৃতীয় মেয়াদে ১৩ জুন সংসদে বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক জনতুষ্টির এই বাজেটে ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে নতুন ভ্যাট আইন ২০১২। রাজস্ব আওতা বৃদ্ধি এবং কর ফাঁকি রোধে অনলাইনে ভ্যাট আদায়ের অবকাঠামো তৈরি করা, ইসিআর মেশিন চালুসহ নানা পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী, ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১৩ লাখ বাড়িয়ে ৮৭ লাখে উন্নীত করাসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারি-বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে।
মেগাপ্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে বাজেটে বরাদ্দ বেশি রাখা হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনের বিষয়টিও থাকবে বাজেটে।
বাজেটের আকার : প্রাথমিকভাবে আসন্ন বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। যা জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি বাজেটের (২০১৮-১৯ অর্থবছর) আকার ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। আসন্ন বাজেটে ব্যয়ের পরিমাণ বাড়ছে ৫৮ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। সে হিসেবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার থেকে নতুন বাজেট ১২ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।
বাড়ছে বাজেটের ঘাটতি : নতুন অর্থ বছরের বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের থেকে ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা বেশি। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের ঘাটতি ছিল এক লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। বাজেটে ঘাটতি পূরণে বৈদেশিক উৎস থেকে নিট ৫২ হাজার ২২০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হতে পারে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এর পরিমাণ ৫০ হাজার ১৬ কোটি টাকা।
এছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নিট ৯৩ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা নেওয়া হবে। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ৬৮ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা (চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এর পরিমাণ ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা) এবং সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ২২ হাজার ২৭০ কোটি টাকা (চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এর পরিমাণ ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা) নেওয়া হতে পারে। গত ৫ বছরে ঘাটতি সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।
নতুন বাজেটে জিডিপি আকার : ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার ধরা হচ্ছে ২৮ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ২ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা বেশি। বর্তমান অর্থবছরে জিডিপির আকার ধরা হয় ২৫ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। আর জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জিডিপি ৭.৬ শতাংশ ধরা হলেও ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
এডিপির আকার : আসন্ন অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক লাখ ৩০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে নেওয়া হবে ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। সে তুলনায় নতুন অর্থবছরের এডিপির আকার বাড়ছে ১৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। নতুন এডিপিতে মোট প্রকল্পের সংখ্যা ১ হাজার ৫৬৪টি। গুরুত্ব বিবেচনায় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পরিবহন খাতে।
বাড়ছে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা : আসন্ন বাজেটে মোট রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। যা জিডিপির ১৩ দশমিক ১ শতাংশের সমান। যেখানে কর রাজস্ব ৩ লাখ ৪০ হাজার ১০০ কোটি, কর বহির্ভূত রাজস্ব ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে।
এনবিআর বহির্ভূত কর রাজস্ব প্রস্তাব করা হচ্ছে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চলতি বাজেট থেকে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ৩৮ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা বেশি। এবছর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য হচ্ছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা।
বাড়বে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা : সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আসন্ন বাজেটে উপকারভোগীর সংখ্যা ১৩ লাখ বাড়িয়ে ৮৭ লাখে উন্নীত করা হবে। বর্তমান বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সাড়ে ৭৩ লাখ মানুষ বিভিন্ন ভাতা পান।
মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা : ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ২ হাজার টাকা মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রায় দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা নগদ ১০ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পান। এর বাইরে তারা বর্তমানে দুই ঈদে সমপরিমাণ দুটি বোনাস, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস ভাতা ও বৈশাখী ভাতা ভোগ করছেন।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে নগদ সহায়তা : দেশে ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোক ও প্যারালাইসিসে আক্রান্ত গরিব রোগীদের ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আসন্ন বাজেটে তা আরও বাড়ানো হবে।
স্বাধীনতার ৪৮ বছরে জাতীয় বাজেটের আকার বাড়তে যাচ্ছে প্রায় ৬৭০ গুণ। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত ১০ বছরে বাজেটের আকার বেড়েছে সাড়ে ৪ গুণেরও বেশি।
বাজেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ঘাটতিও। তবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর ২০২১ সালের মধ্যে এই বাজেট ৭ লাখ কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ওই সময়ের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দুই অংকের ঘরে পৌঁছানোরও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
Posted ৩:০০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৯ জুন ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed