রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

সাড়ে ১০ বছরে খেলাপি বেড়েছে ৫ গুণ

আদম মালেক   |   শনিবার, ১৫ জুন ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   568 বার পঠিত

সাড়ে ১০ বছরে খেলাপি বেড়েছে ৫ গুণ

মহাজোট সরকার ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের সময় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২,৪৮১ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। সাড়ে ১০ বছরে খেলাপির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ। আর অবলোপন করা ঋণ যোগ করলে খেলাপির পরিমাণ দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

তবে ব্যাংক কর্মকর্তারাই বলছেন, প্রকৃত খেলাপি ঋণ আরও অনেক বেশি। অনেক ব্যাংক বড় অঙ্কের ঋণ আদায় করতে পারছে না, আবার তা খেলাপি হিসেবেও চিহ্নিত করছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকও এতে নজর দিচ্ছে না। এ ছাড়া শেয়ারবাজারের অজুহাতে প্রতিবছরই ব্যাংকগুলো নানা ছাড় নিচ্ছে। এতে করে খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্যও বেরিয়ে আসছে না। পাওয়া যাচ্ছে না ব্যাংকগুলোর স্বাস্থ্যের প্রকৃত চিত্র।

ব্যাংক খাত সূত্রগুলো বলছে, গত সাড়ে ১০ বছরে দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বাড়ার অন্যতম হলো সোনালী ব্যাংকের হল-মার্ক কেলেঙ্কারি। এ ছাড়া বেসিক ও ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি, জনতা ব্যাংকের ক্রিসেন্ট ও অ্যাননটেক্স গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারি, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির কারণে খেলাপি ঋণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তাফা কামাল দায়িত্ব নেয়ার পরই ঘোষণা দেন খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়বে না। এরপর থেকে খেলাপি ঋণ কমাতে নানা ফাঁকফোকর খুঁজতে থাকে সরকার। কিন্তু তারপরও কমেনি খেলাপি ঋণ, উল্টো বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বর’১৮ শেষে ছিল ৯৩ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সুশাসনের অভাব, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, অব্যবস্থাপনা ও নানা অনিয়মে দেয়া ঋণ আর আদায় হচ্ছে না। অন্যদিকে বিশেষ সুবিধায় পুনর্গঠন করা ঋণ আবার খেলাপি হচ্ছে। ফলে লাগামহীনভাবে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। এতে করে জনগণের আমানত গ্রহণ করলেও তার সুরক্ষা দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের মার্চ মাস শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল) ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৩২ দশমকি ২০ শতাংশ। এই সময় ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণ দাঁড়ায় এক লাখ ৬৭ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা।

২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ছিল ৪৮ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। মার্চ শেষে বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ১৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। আলোচিত সময়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে সাত লাখ পাঁচ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৯ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকাই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। যা মোট ঋণের ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।

এছাড়া বিদেশি ৯ ব্যাংক ঋণ বিতরণ করেছে ৩৬ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ দুই হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৬ দশমিক ২০ শতাংশ। নিয়ম অনুযায়ী, খেলাপি ঋণ তিনটি শ্রেণিতে বিভাজন করা হয়। একটি নিম্নমান, সন্দেহজনক এবং মন্দ বা ক্ষতিজনক মান। মন্দ বা ক্ষতিজনক মানের ঋণ আদায় হবে না বলে ধারণা করা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশির ভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যেন কোনো প্রকার ঝুঁকির মুখে না পড়ে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো প্রভিশন সংরক্ষণ। নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়।

এছাড়া নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকের আয় খাত থেকে অর্থ এনে এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। এতে করে কমছে মুনাফা। ফলে খেলাপির কারণে মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১০:২২ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৫ জুন ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11396 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।