বিবিএনিউজ.নেট | শনিবার, ০৪ মে ২০১৯ | প্রিন্ট | 740 বার পঠিত
স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে বিদেশিরা। ফলে দেশের অর্থনীতিতে সুবাতাস দেখা দিয়েছে। ২০১৮ সালে দেশে ৩৫০ কোটি ডলারের বেশি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে। যা ২০১৭ সালের তুলনায় প্রায় ৬৮ শতাংশ বেশি। এক বছরের হিসাবে এটি দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ এবং ৩০০ কোটি ডলারের ঘর ছোঁয়ার নতুন মাইলফলক। এর আগে ২০১৫ সালে প্রথমবার বিদেশি বিনিয়োগ ২০০ কোটি ডলারের ঘর অতিক্রম করেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সার্ভে প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
নিজ দেশের বাইরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদেশিরা অনেক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হলো—দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ডুইং বিজনেস সূচক, ব্যবসার ছাড়পত্র এবং জমি ও শ্রমের সহজলভ্যতা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০২১ সালে মধ্যম ও ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্য পূরণে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ দরকার। বিশেষ করে বছরে বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে এক হাজার কোটি ডলার।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে, এটা দেশের জন্য স্বস্তিদায়ক। তবে এই বৃদ্ধি সত্ত্বেও দেশের জিডিপি অনুপাতে এটা ২ শতাংশ বা এর নিচে থাকবে, যা আমাদের পাশের দেশগুলোর তুলনায় কম। তাই আমাদের আরো বেশি বিদেশি বিনিয়োগের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।’ জিডিপি প্রবৃদ্ধির সন্তোষজনক হার, সার্বিক রাজনৈতিক পরিবেশে স্থিতিশীলতা, এনার্জিসহ অবকাঠামো খাতে উন্নয়নে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বলেও মনে করেন তিনি।
ডুইং বিজনেস সূচকের মাধ্যমে একটি দেশে ব্যবসা করার নিয়ম-কানুন ও প্রক্রিয়া কতটা সহজ বা কঠিন, তার তুলনামূলক চিত্র উঠে আসে। বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা সহজীকরণসংক্রান্ত ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট ২০১৮ অনুযায়ী, ১৯০টি দেশের মধ্যে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৯তম। ২০১৭ সালে এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭৬তম। অর্থাৎ গত বছর অবনতি হয়েছে। তবে ২০২১ সালের মধ্যে ডুয়িং
বিজনেস সূচকে ১০০-র নিচে আসতে ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এরই মধ্যে বিডায় পাইলট আকারে ওয়ান স্টপ সার্ভিস কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যেখানে মিলছে প্রায় ১৫টি সেবা।
বিডার নির্বাহী সদস্য নাভাস চন্দ্র মণ্ডল কালের কণ্ঠকে বলেন, ডুয়িং বিজনেসে পিছিয়ে থাকলেও সামাজিক ও অন্যান্য সূচকে অনেক উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। এ জন্য বিদেশিরা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে। ফলে ইকুইটি বা নতুন বিনিয়োগ বাড়ছে। আবার যারা আগে থেকে এখানে আছে তারাও উল্লেখযোগ্য পুনর্বিনিয়োগ করছে। মোট কথা, যারা বাংলাদেশে একবার বিনিয়োগ করে, তারা আর ফেরত যেতে চায় না। এখানে রিটার্নও পাওয়া যায় বেশি।
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকারের পক্ষ থেকে নানা প্রণোদনা ও বিভিন্ন উৎসাহমূলক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে অন্তত ১৭টি খাতে কর অবকাশ সুবিধা পাচ্ছে বিদেশিরা। বিদেশিদের মুনাফা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রেও বিধি-বিধান শিথিল করা আছে। মুনাফাসহ শতভাগ মূলধন ফেরত নেওয়ার পাশাপাশি নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠায় যন্ত্রপাতির অবচয় সুবিধা, শুল্কমুক্ত যন্ত্রাংশ আমদানি এবং রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে কম সুদে ঋণ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে বিদেশিরা। এ ছাড়া বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের একটি কার্যকর পদক্ষেপ হচ্ছে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) স্থাপন, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইজেড) প্রতিষ্ঠার অনুমতি দান। এসব সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যই হলো বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে দেশে মোট নিট এফডিআই এসেছে ৩৬১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার; যা ২০১৭ সালের তুলনায় ১৪৬ কোটি ডলার বা ৬৭.৯০ শতাংশ বেশি। ২০১৭ সালে দেশে সরাসরি নিট বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছিল ২১৫ কোটি ১৫ লাখ ডলার।
গত বছর দেশে যে পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে, তার মধ্যে ইকুইটি মূলধন বা নতুন বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১১২ কোটি ৪১ লাখ ডলার। আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ৫৩ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ে বহুজাতিক কম্পানির পুনর্বিনিয়োগ হিসেবে এসেছে ১৩০ কোটি ৯১ লাখ ডলার। আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ১২৭ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। এ ছাড়া গত বছর আন্তঃকম্পানির ঋণ হিসেবে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ১১৮ ডলার।
Posted ৩:০৭ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৪ মে ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed