বিবিএনিউজ.নেট | রবিবার, ১২ মে ২০১৯ | প্রিন্ট | 476 বার পঠিত
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়েই আগামী অর্থবছরের রাজস্ব বাজেট প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এমপি। নতুন অর্থবছরের রাজস্ব বাজেট নিয়ে এনবিআরের বাজেট প্রস্তুতি কমিটির সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি ওই নির্দেশ দেন। বিশেষভাবে ভ্যাট বা মূসক আইন ২০১২ বাস্তবায়নে ব্যবসায়ীদের মতামতের গুরুত্ব দিতে বলেন তিনি। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেনের দপ্তরে রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠক হয়। দুপুর ১২টায় শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে বৈঠক।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, বৈঠকের শুরুতেই ওঠে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই থেকে এনবিআরে পাঠানো চিঠির প্রসঙ্গ। ভ্যাট আইন ২০১২ বাস্তবায়নে এনবিআরের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করা হয় ওই চিঠিতে। ওই সময় এনবিআর চেয়ারম্যান অর্থমন্ত্রীকে বলেন, গত দুই বছরে ভ্যাট আইন নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি মেনেই একক হারের পরিবর্তে একাধিক হার নির্ধারণ, ভ্যাট অব্যাহতির সীমা ৩৬ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ লাখ টাকায় উন্নীত করা এবং টার্নওভার করের সীমা তিন কোটি টাকা পর্যন্ত ৪ শতাংশসহ অন্যান্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর পরও এফবিসিসিআইয়ের অভিযোগ দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
সূত্র মতে, এফবিসিসিআইয়ের চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, এনবিআর ২ মে বৈঠক ডেকেও বৈঠক করেনি। এ প্রসঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নির্ধারিত দিনে এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে বৈঠক না হওয়ার জন্য এনবিআর দায়ী নয়। বৈঠক শুরু হওয়ার অল্প সময় পরই এফবিসিসিআই প্রতিনিধিরা চলে যান।
বৈঠকে থাকা এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, অর্থমন্ত্রী তাঁদের আগামী অর্থবছরে ভ্যাট আইন কার্যকর করার প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়ে বলেন, আইনটি যেহেতু ব্যবসায়ীদের নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে, তাই এনবিআরকে আইনটি নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। যেসব ক্ষেত্রে এখনো মতের মিল হয়নি তা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। আগামী অর্থবছরে বিতর্কহীন বাজেট প্রণয়নে সবাইকে চেষ্টা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কারো অসহযোগিতা বা গাফিলতি মেনে নেওয়া হবে না।
জানা যায়, করপোরেটের করের হার কোন খাতে কতটা কমানো হলে কী পরিমাণ রাজস্ব আদায় কমবে তার হিসাব শোনেন অর্থমন্ত্রী। তবে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেননি। আগামী অর্থবছরে আবাসন খাতে নীতি সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে একমত হন অর্থমন্ত্রী ও এনবিআর চেয়ারম্যান।
অর্থপাচার ঠেকানোর পদক্ষেপ : অর্থপাচার ঠেকাতে কী ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বলে বৈঠকে উপস্থিত থাকা এক কর্মকর্তা জানান। তিনি বলেন, বিশেষভাবে মিথ্যা ঘোষণায় ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলে আমদানি-রপ্তানি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত রাজস্ব বাজেটে বহু স্তরবিশিষ্ট ভ্যাট আদায়ের বিধান রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভ্যাটের হার থাকবে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে রেয়াত নেওয়ার সুবিধা রাখা হবে। এর চেয়ে কম হারে ভ্যাটে রেয়াত নেওয়ার সুবিধা বাতিল করা হবে। ভ্যাটের আওতা বাড়াতে নানা কৌশল নেওয়া হবে। ভ্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে অনলাইনে পরিশোধের সুযোগ রাখা হচ্ছে। প্যাকেজ ভ্যাট বাতিল করে স্ল্যাবভিত্তিক হারে ভ্যাট আদায় করা হবে। ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে ভ্যাটমুক্ত সীমা নির্ধারণ করা হবে। ব্যবসায়ীদের সহজে ব্যবহৃত যন্ত্রের মাধ্যমে ভ্যাট পরিশোধে উৎসাহিত করা হবে।
সূত্র মতে, আগামী অর্থবছরে বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে দিকনির্দেশনা দেন অর্থমন্ত্রী। শিল্পে অধিক ব্যবহৃত পণ্যের ভ্যাটের কম হার নির্ধারণের নির্দেশ দেন। কোন পণ্যে কত হারে ভ্যাট হবে তা নির্ধারণ করতে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে তালিকা বানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলেন তিনি। জাহাজ ভাঙা ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পে রাজস্ব সুবিধা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। সিদ্ধান্ত মতে, ওষুধ ও চামড়া শিল্পে এবং অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র আমদানিতে রাজস্ব সুবিধা বাড়ানো হবে।
করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর সম্ভাবনা নিয়ে কথা : জানা যায়, করমুক্ত আয়সীমা ২০ হাজার টাকা বাড়ানো সম্ভব কি না সে নিয়ে এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন অর্থমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে কিছুটা ছাড় দেওয়ার জন্য ওই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এনবিআর সূত্র মতে, পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে কর্মকর্তারা পরামর্শ নেন অর্থমন্ত্রীর কাছে। আগামী অর্থবছরে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রাখার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী ও এনবিআরের বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তারা একমত হন। আগামী অর্থবছরের রাজস্ব বাজেটে বিভিন্ন বন্দরে স্ক্যানিং মেশিন বসানো, ই পেমেন্টে, ই ফাইলিংয়ের বিষয় উল্লেখ করতে বলেন মন্ত্রী। রাজস্বের আওতা বাড়াতে সুস্পষ্ট ঘোষণাও রাখতে বলেন বাজেটে। তিনি রাজস্ব বাজেট সহজ ভাষায় প্রণয়ন করার নির্দেশ দেন। বক্তৃতায় আইনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা না রেখে অতি সংক্ষেপে উল্লেখ রাখতে বলেন।
জানা যায়, অর্থবছরের শেষ সময়ে চলতি মাসে রাজস্ব আদায়ে জোর বাড়াতে পরামর্শ দেন মন্ত্রী। বড় মাপের প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বকেয়া আদায়ে কঠোর হতে বলেন তিনি।
বৈঠক শুরু হওয়ার আগে উপস্থিত সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী অর্থবছরে ভ্যাট আইন ২০১২ বাস্তবায়ন করা হবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে ভ্যাট আইন ২০১২-এর অভিন্ন হার পরিবর্তন করে বহুস্তর করাসহ বিভিন্ন বিষয় নির্ধারণ করেছি। চলতিবারে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও কাছাকাছি হবে। এটা আশার কথা। প্রতিবছরই প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। কর জিডিপির অনুপাত বাড়ানো হবে।’
Posted ১:৪০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১২ মে ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed