বিবিএনিউজ.নেট | শুক্রবার, ৩১ মে ২০১৯ | প্রিন্ট | 538 বার পঠিত
সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চলতি অর্থবছর ২ লাখ ৮০ হাজার ৬৩ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করার কথা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। কিন্তু এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে আহরণ হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৯০ কোটি টাকা। ফলে লক্ষ্য অর্জন করতে হলে অর্থবছরের শেষ দুই মাসে (মে ও জুন) ১ লাখ ৬ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করতে হবে সংস্থাটিকে।
এনবিআর সূত্র জানায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) আদায় হওয়া ১ লাখ ৭৩ হাজার ৯০ কোটি টাকার মধ্যে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে এসেছে ৬৭ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। এছাড়া শুল্ক বা কাস্টমস থেকে ৫৩ হাজার ৮১ কোটি এবং আয়কর থেকে ৫২ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা আহরণ হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আহরণে ধীরগতি দেখা দেয়ায় এবং কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় সম্প্রতি লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে ৬ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ২ লাখ ৮০ হাজার ৬৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে মূসকে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা, আয়করে ৯৬ হাজার ৬৩২ কোটি ও শুল্কে ৭৯ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের ১০ মাস শেষে যে রাজস্ব আহরণ হয়েছে, সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দুই মাসে তার সঙ্গে আরো ১ লাখ ৬ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা আহরণ করতে হবে। এর মধ্যে মূসক বাবদ আহরণ করতে হবে ৩৬ হাজার ৭১০ কোটি টাকা, আয়করে ৪৩ হাজার ৯১৩ কোটি ও শুল্কে ২৬ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, এ রাজস্ব আদায়ে গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে ১৩ মে পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে এনবিআর। এ বিশেষ কমিটি মে ও জুন মাসের রাজস্ব আহরণ পরিস্থিতি তদারক করবে। এ কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন এনবিআরের সদস্য কালিপদ হালদার। রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে কমিটিকে ব্যাংক হিসাব জব্দ করা ও সার্টিফিকেট মামলা করার বিশেষ ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে। এছাড়া রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে কমিটি শুল্ক ও মূসকের বকেয়া রাজস্ব আদায়, মামলা নিষ্পত্তি, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) মাধ্যমে আদায়সহ অন্যান্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কমিটি রাজস্ব আদায়ের অগ্রগতি নিয়ে প্রতি সপ্তাহে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়াকে অবহিত করবে।
এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাজেটে রাজস্ব আহরণের একটা লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতেই হবে এমন নয়। তবে আমাদের কাছাকাছি যেতে হবে। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আহরণে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এ হিসাবে অন্তত ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা আদায় হলে এটাকে সন্তোষজনক বলা যেতে পারে। এর জন্য আমাদের কমিটি কাজ করছে। আসন্ন বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করবেন।
চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৪০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিল সরকার। পরবর্তী সময়ে তা সংশোধন করে ২১ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা কমিয়ে ৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা করা হয়। আগামী ৩০ জুন জাতীয় সংসদে এ সংশোধিত বাজেট অনুমোদন হবে বলে এনবিআর সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্যে মূসক থেকে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা, আয়কর বাবদ ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৮৮ কোটি এবং শুল্ক থেকে ৯২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে।
রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, রাজস্ব বোর্ডের সক্ষমতা বিবেচনা না করে বাজেটে রাজস্ব আহরণে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়। আর এখন এটা একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে নিয়মিত রাজস্ব আদায়ে ঘাটতির পরিমাণ বাড়ছে। সামনে আরো বাড়বে। রাজস্ব আহরণের পরিধি বাড়াতে এনবিআরের সক্ষমতা আরো বাড়ানো উচিত।
Posted ৩:২০ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ৩১ মে ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed