বিবিএনিউজ.নেট | বুধবার, ২৮ আগস্ট ২০১৯ | প্রিন্ট | 979 বার পঠিত
দেশে বিএমডব্লিউ, অডিআই, মার্সিডিজ বেঞ্জ, প্রাডো, লেক্সাস, হামার, ডিসকভারের মতো বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি ও বিক্রি হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে গাড়ির ক্রেতা ও বিক্রেতারা তাদের আয়কর নথিতে গাড়ির ব্র্যান্ড ও প্রকৃত মূল্য না দেখিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতি বছর গাড়ি পরিবর্তন করলেও কর নথিতে গাড়ির ব্র্যান্ড ও রেজিস্ট্রেশন উল্লেখ করে না।
এ অবস্থায় বিলাসবহুল গাড়ির মালিক ব্যক্তি, কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে কর দিয়েছে কি না বা কর ফাইলে দেখানো হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রাথমিকভাবে ৮৯২টি বিলাসবহুল গাড়ির তথ্য চেয়ে কেন্দ্রীয় কর জরিপ অঞ্চল থেকে সম্প্রতি দেশের সব কর কমিশনারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকি উদঘাটন হবে বলে মনে করেন কর কর্মকর্তারা। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এনবিআরের নির্দেশে ২০১২ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ছয় বছরে বিএমডব্লিউ, ভলভো, মার্সিডিজ বেঞ্জ, লেক্সাস, জাগুয়ার, হামার, প্রাডো, ওয়াগন, ডিসকভারি, হ্যারিয়ারের মতো বিলাসবহুল গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের তথ্য চেয়ে সম্প্রতি বিআরটিএ’কে চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় কর জরিপ অঞ্চল। ৯৩০টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের যাবতীয় তথ্য দেয় বিআরটিএ। এর মধ্যে ৮৯২টি গাড়ির ই-টিআইএন খুঁজে পাওয়া গেছে। ৮৯২টি গাড়ির মধ্যে ৫৭৮টি বিএমডব্লিউ, ৩৩৩টি অডিআই, ৩৮টি জাগুয়ার, ১৪টি মার্সিডিজ ও পাঁচটি ভলভো গাড়ি রয়েছে। ই-টিআইএন, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির নাম অনুযায়ী গাড়ির তালিকা কেন্দ্রীয় কর জরিপ অঞ্চল থেকে সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলের কমিশনারকে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, ‘রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী গাড়ির মালিক গাড়ি ক্রয়ে বিনিয়োগ এবং সংশ্লিষ্ট করবর্ষে আয়কর নথিতে এই গাড়িসমূহ প্রদর্শিত হয়েছে কি না, তা যাচাই করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কর ফাঁকি উদঘাটন ও ৯৩ ধারায় পুনঃউম্মোচন এবং অগ্রগতি জানাতে অনুরোধ করা হলো।’ চিঠিতে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর, করদাতা বা প্রতিষ্ঠানের নাম, ই-টিআইএন নম্বর, গাড়ির মডেল, ব্র্যান্ড, সিসি, চেসিস নম্বর দেওয়া হয়। কিছু গাড়ির টিআইএন খুঁজে পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, কর ফাঁকি দিতে ভুয়া টিআইএন ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া আরও কিছু বিলাসবহুল গাড়ির তালিকা জরিপ অঞ্চলের হাতে রয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, গাড়ির তালিকায় কিছু ওষুধ কোম্পানি, ব্যাংক, বিমা, আবাসন কোম্পানি, গার্মেন্টস, লংকাবাংলা, ফিনিক্স, আইডিএলসি, আইপিডিসি, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ন্যাশনাল, ইসলামিক ফাইন্যান্সের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠান, নিটল, এসিআই, রানার মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া স্বনামধন্য ব্যক্তিও তালিকায় রয়েছেন। ক্ষেত্রবিশেষে ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের একাধিক গাড়ি রয়েছে।
তালিকায় রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মধ্যে রয়েছে হামিদ রিয়েল এস্টেট, আনোয়ার রিয়েল এস্টেট, ইম্পোরি হোল্ডিংস, অ্যালায়েন্স রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট, বেক্সিমকো হোল্ডিংস, সামিট হোল্ডিংস, অ্যাসেট ডেভেলপমেন্ট, ইস্টার্ন হাউজিং, চারুটা হোমস, পূবালী ইঞ্জিনিয়ারিং, নাভানা রিয়েল এস্টেট, অ্যালায়েন্স প্রপার্টিজ, এএনজেড প্রপার্টিজ, শান্তা হোল্ডিংস, হোসেন কনস্ট্রাকশন, লেকশোর সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট, সাউথ ব্রিজ হাউজিং, আল-আমিন কনস্ট্রাকশন, এবিসি বিল্ডিং, রাহাত রিয়েল এস্টেট, বে-ডেভেলপমেন্ট, প্যারাগন ও সামসুল আলামিন রিয়েল এস্টেট প্রভৃতি। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নামে একাধিক গাড়ির রেজিস্ট্রেশন রয়েছে।
ওষুধ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে এরিস্টো ফার্মা, স্কয়ার, এসকেএফ, গ্লোব ফার্মা, সানম্যান বারডেম ফার্মা, গ্লাক্সোস্মিথ প্রভৃতি। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে লংকাবাংলার ৪৫টি, ফিনিক্স ফাইন্যান্স ১৪টি, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স ১১টি, আইডিএলসি ১০টি, আইপিডিসি চারটি, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল দুটি, ইসলামিক ফাইন্যান্স দুটি, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স দুটি, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স বিএমডব্লিউ, হজ ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড, পিপলস লিজিং বিএমডব্লিউ প্রভৃতি। তালিকায় ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- এসআইবিএল দুটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক তিনটি, ইউসিবি চারটি, ঢাকা ব্যাংক পাঁচটি, প্রাইম ব্যাংক একটি, গ্রামীণ ব্যাংক একটি, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক দুটি, ইউনিয়ন ব্যাংক দুটি, ইসলামী ব্যাংক একটি, এনসিসি ব্যাংক একটি প্রভৃতি। এছাড়া এসিআই মোটরস দুটি বিএমডব্লিউ, নিটল মোটরস চারটি অডিআই, রানার মোটরস তিনটি অডিআই, এসকে আকিজ উদ্দিন লিমিটেড বিএমডব্লিউ, মিলেনিয়াম মোটরস জাগুয়ার, এক্সিকিউটিভ মোটরস বিএমডব্লিউ রেজিস্ট্রেশন রয়েছে।
তালিকায় উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে জনতা জুট মিলস, কোকোলা ফুড প্রডাক্টস, লিন্ডা টেক্সটাইল ডায়িং, এনার্জি প্যাক ইঞ্জিনিয়ারিং, গ্লোবাল মার্চেন্টস, রহমত কান্তি ডায়িং, আরবাব পলি প্যাক লিমিটেড, আর্কিটেক স্পিনিং, দেশ এনার্জি লিমিটেড, প্রাইম গার্মেন্টস, প্রাইড লিমিটেড, ইউনিক ইনফ্রোওয়ে লিমিটেড, গ্রোগেস মোটরস, পেট্রোম্যাক্স রিফাইনারি, রেনকন ইম্পোর্টস, আরএ স্পিনিং মিলস, আমরা রিসোর্স লিমিটেড, আরএকে পেইন্টস লিমিটেড, রহিম এনার্জি, বসন্ধুরা পেপার মিলস, বেঙ্গল ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স করপোরেশন, বন্ধু ডিজাইন লিমিটেড, সিএলসি পাওয়ার কোম্পানি, বেলকুচি স্পিনিং মিলস, এনজেড টেক্সটাইল, জাবের অ্যান্ড জোবায়ের কোম্পানি, ন্যাশনাল পলিমার, গ্রাফিক্স টেক্সটাইল লিমিটেড, মিলেনিয়াম টেক্সটাইল, ফকির অ্যাপারেলস, আবুল খায়ের স্টিল, পারটেক্স প্লাম্ব অ্যান্ড পেপার মিলস, ফকির নিটওয়্যার, এজি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, ইনোভেটিভ মোটরস, মণ্ডল ফেব্রিকস, সিরাজ অ্যান্ড ইস্পাত লিমিটেড।
আরও রয়েছে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, গ্রেটওয়্যাল সিরামিক, জিবিবি পাওয়ার লিমিটেড, ইউনাইটেড আশুগঞ্জ পাওয়ার, পাওয়ার প্যাক মাল্টি এরিয়া, জে কে সিনথেটিক মিলস, ইউনিক হোটেল রিসোর্ট লিমিটেড, মাহমুদ ডেনিম, দিগন্ত সোয়েটার, ডেকো গার্মেন্টস, কান্তি কনসার্ন, কান্তি ফ্যাশনস, থার্মেক্স টেক্সটাইল, মেনস ফ্যাশন, বাগেরহাট সি ফুড, ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং, চায়না বাংলা সিরামিক, টান্সকম ডিস্ট্রিবিউশন, প্রাইম টেক্সটাইল, নভোর্টিজ বাংলাদেশ, বাটারফ্লাই মার্কেটিং লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড, বেক্সিমকো এলপিজি, হামিদ ওয়াশিং মিলস, হোম বাউন্ড প্যাক, এমএফ কনজিউমার, বিএএসএফ বাংলাদেশ, সিলভার কম্পোজিট, সোহাগ পরিবহন, সামিট অয়েল অ্যান্ড স্পিনিং, এসজি লজিস্টিক, ইস্টকোস্ট স্পিনিং, কেআর স্টিল, আর আর এল শিপব্রেকিং, আশিয়ান কম্পোজিট টেক্স, এমএনআর সোয়েটার, ফারিহা কান্তি টেক্সটাইল, মেঘনা কান্তি কম্পোজিট, অ্যামিউজিং ফ্যাশনস, ইসলাম গার্মেন্টস, রাইজিং স্পিনিং, হাজী হাশেম স্পিনিং, বেস্ট ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড, বারাকা কনজিউমার, বসন্ধুরা মাল্টি পেপার, ল্যাবএইড লিমিটেড, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, রূপসা ট্যাংক টার্মিনাল অ্যান্ড রিফাইনারি, মোহাম্মদী ফ্যাশনস সোয়েটার, আদর কম্পোজিট, রাকিব উদ্দিন টেক্সটাইল, ফখরুদ্দিন টেক্সটাইল, সামুদা পাওয়ার লিমিটেড, এস আলম কোল্ডরোল স্টিল, আমান স্পিনিং, রশিদ অটোমেটিক রাইস মিলস, প্যারামাউন্ট কেবল্স, পূর্বাচল স্টিল মিলস, ইউনাইটেড পাওয়ার, পান্না ব্যাটারি, আম্বার ডেনিম মিলস, গোল্ডেন হারভেস্ট, বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স, সুমিটো করপোরেশন, এক্স সিরামিকস, ট্রান্সকম লিমিটেড, পপুলার ডায়াগনস্টিক, এলিট সিকিউরিটি সার্ভিস প্রভৃতি।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় কর জরিপ অঞ্চলের কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বিআরটিএ থেকে এসব গাড়ির যাবতীয় তথ্যসহ তালিকায় পেয়েছি। কর ফাইল যাচাই করতে কর অঞ্চল অনুযায়ী গাড়ির তালিকা পাঠানো হয়েছে। কর ফাইলে গাড়ি না দেখানো হলে কর ফাঁকি উদঘাটন করে জরিমানাসহ আদায়ের ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি। এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, ‘কিছু টিআইএনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। ভুয়া টিআইএন দিয়ে কীভাবে রেজিস্ট্রেশন হলো তা যেন বিআরটিএ খতিয়ে দেখে, তা ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।’
Posted ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৮ আগস্ট ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed