শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

সঞ্চয়পত্র থেকে কেটে নেয়া টাকা ফেরত হচ্ছে না

বিবিএনিউজ.নেট   |   সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   491 বার পঠিত

সঞ্চয়পত্র থেকে কেটে নেয়া টাকা ফেরত হচ্ছে না

গত জুলাই ও আগস্ট মাসের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা ব্যক্তিদের কাছ থেকে কেটে নেয়া অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেয়া হবে না। শুধু সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীরাই নন, যে কারও আয়ের বিপরীতে নির্ধারিত করের চেয়ে বেশি সরকার কেটে নিলে তা আর ফেরত পাওয়া যাবে না। তবে, পরের বছর রিটার্ন জমা দেয়ার সময় অতিরিক্ত অর্থ সমন্বয় করা যাবে। এভাবে টানা ৫ বছর পর্যন্ত রিটার্ন জমা দেয়ার সময় সমন্বয় করার সুযোগ থাকবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) শামসুন্নাহার বেগম বলেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর নির্দেশনা অনুযায়ী গত জুলাই ও আগস্ট মাসে ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কাটা হয়েছে। আবার এনবিআরের নির্দেশনা অনুযায়ীই সেপ্টেম্বর থেকে ৫ শতাংশ কাটা হচ্ছে। কাজেই যাদের কাছ থেকে ইতোমধ্যে ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কাটা হয়েছে, তারা ওই অতিরিক্ত ৫ শতাংশ অর্থ কোনভাবেই তা ফেরত পাবেন না।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ জুন বাজেট উপস্থাপনের দিন থেকেই সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকেরা বিভ্রান্তিতে পড়েন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বিষয়টি নিয়ে কিছু না বললেও ওই দিন অর্থবিলে সব সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর ১০ শতাংশ উৎসে কর কেটে রাখার ঘোষণা দেন। আগে যা ছিল ৫ শতাংশ। এ নিয়ে সংসদে ও বাইরে ব্যাপক সমালোচনার পর গত ২৯ জুলাই অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দেন, পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের মুনাফার ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ করা হবে। একইসঙ্গে তিনি জানান, উৎসে কর কমানোর প্রজ্ঞাপন যখনই জারি হোক না কেন, তা কার্যকর করা হবে ১ জুলাই থেকে। কিন্তু এ বিষয়ে গত ২৮ আগস্ট একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর।

গত ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫ লাখ টাকা অতিক্রম না করলে এই ধরনের বিনিয়োগ থেকে অর্জিত সুদের ওপর আগের নির্ধারণ করা উৎসে কর ১০ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো। তবে পেনশনার সঞ্চয়পত্রসহ সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ৫ লাখ টাকার বেশি হলে আইন অনুযায়ী উৎসে কর কাটার হার হবে ১০ শতাংশ।

ফলে গত ১ জুলাইয়ের পর পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের বিপরীতে অর্জিত মুনাফার ওপর যারা ১০ শতাংশ উৎসে কর দিয়েছেন, তাদের তা ফেরত পাওয়ার আর কোন সুযোগ থাকছে না।

এ প্রসঙ্গে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ‘কারও কাছ থেকে সরকার অতিরিক্ত কর কেটে নিলে তাকে টাকা ফেরত দেয়ার নিয়ম নেই। তবে, তিনি আয়কর রিটার্নে তা উল্লেখ করে সমন্বয় করতে পারবেন।’ তিনি বলেন, ‘গত জুলাই থেকে যাদের আয় থেকে ১০ শতাংশ উৎসে কর কাটা হয়েছে, তারা যেহেতু টাকা ফেরত পাবেন না, সেহেতু তারা আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার সময় কেটে নেয়া অতিরিক্ত অর্থ সমন্বয় করতে পারবেন।’

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা ব্যক্তিরা ২ মাসের জন্য কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়লেও বাকি ১০ মাস তারা লাভ করবেন। আর দুই মাস পরে হলেও সরকারের সিদ্ধান্তটা ভাল হয়েছে। এনবিআর প্রজ্ঞাপনটা জুলাই মাসেই করতে পারলে আরও ভাল হতো।’

তিনি বলেন, ‘কারও কাছ থেকে বেশি টাকা কেটে নিলে তা সমন্বয় করে ফেরত পাওয়া যায় না। এই সমস্যা দূর হচ্ছে না মূলত অটোমেশন না হওয়ার কারণে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে বেশি টাকা কেটে নিলে ক্লেইম করার পর ফেরত পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশে এই সিস্টেম নেই।’ কর্মকর্তাদের আগ্রহ না থাকার কারণেই এই সিস্টেম চালু হচ্ছে না। দক্ষ লোক পাওয়া গেলে ও অটোমেশন সিস্টেম চালু হলে এনবিআরের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে। সরকারেরও অনেক বেশি রাজস্ব বাড়বে।’

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, করদাতাদের অনেকেই বেশি কর দিয়ে থাকেন। কারণ, কর কমর্কতার্রা সারা বছরই আমদানি, পেমেন্ট, বিল ও সুদের আয়ের মতো আয় অগ্রিম আয়কর কাটেন। অনেক সময় বিদেশে ট্যাক্স দেয়ার পর আবারও দেশে ট্যাক্স কাটা হয়।

এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়ম মেনে আবেদন করলে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত পাওয়ার সুযোগ আছে। ‘আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪’ অনুযায়ী, করদাতা যদি নির্ধারিত পরিমাণের অতিরিক্ত কর দিয়ে থাকেন, তবে তা তিনি ফেরত পাবেন।

কর আইন অনুযায়ী, করদাতারা প্রযোজ্য ট্যাক্সের সঙ্গে ফেরতযোগ্য অর্থ সমন্বয় করতে পারেন অথবা তারা নগদ অর্থ ফেরত দাবি করতে পারেন। তবে, অনেক করদাতা হয়রানি ও জিজ্ঞাসাবাদের ভয়ে কখনই অতিরিক্ত অর্থ ফেরতের আবেদন করেন না।

এ প্রসঙ্গে আয়কর আইনজীবী গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘নির্ধারিত করের চেয়ে কেউ বেশি টাকা দিয়ে থাকলে তিনি পরের বছরে রিটার্ন জমা দেয়ার সময় সমন্বয় করতে পারবেন। এভাবে টানা ৫ বছর পর্যন্ত সমন্বয় করার সুযোগ আছে।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও রিফান্ড সিস্টেম ছিল। তখন নির্ধারিত পরিমাণের বেশি অর্থ কেটে নেয়ার পর দাবি অনেকেই ফেরত পেতেন। কিন্তু এখন ফেরত দেয়ার কোন নিয়ম নেই।’ তবে, রিটার্ন জমা দেয়ার সময় পরের বছরে সমন্বয় করার সুযোগ আছে বলেও তিনি জানান।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ২:১১ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11390 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।