নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ০৯ মে ২০২০ | প্রিন্ট | 426 বার পঠিত
করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে রপ্তানি আয়ে। এপ্রিল মাসে রপ্তানি আয় নেমেছে আগের মাসের পাঁচ ভাগের এক ভাগে।গত বছরের এপ্রিলের তুলনায় এই পতনের হার আরও বেশি।
শুধু তাই নয়,এই সময়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান এই খাতের আয় রেমিট্যান্স আয়ের অর্ধেকে নেমেছে। রপ্তানি আয়ে এতবড় পতন এবং তা রেমিট্যান্সের নিচে নেমে আসার ঘটনা অভাবনীয়। দেশের ইতিহাসে কখনোই আর ওমন ঘটনা ঘটেনি।
রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
মূলত ইউরোপ-আমেরিকার অনেকটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আয় এত বড় হোঁচট খেয়েছে।এতে মূল ভূমিকা রেখেছে তৈরি পোশাকের অর্ডার বাতিল।করোনায় পর্যুদস্ত ইউরোপ-আমেরিকার ক্রেতাদের বড় অংশই তাদের অর্ডার বাতিল অথবা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ এর আগে জানিয়েছিল,এপ্রিলে পোশাক রপ্তানি ৮৫ ভাগ কমে গেছে।এখন অফিসিয়াল পরিসংখ্যানে ওই তথ্যের বাস্তব প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।
ইপিবির তথ্য অনুসারে,গত এপ্রিল মাসে বিশ্ববাজারে সব মিলিয়ে ৫২ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। আগের মাসেও এর পরিমাণ ছিল ২৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার।সেই হিসেবে মার্চ মাসের তুলনায় ২২১ কোটি ২০ লাখ ডলার বা প্রায় ৮১ শতাংশ কমেছে।এপ্রিলে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মার্চের পাঁচ ভাগের এক ভাগে।
গত বছরের এপ্রিল মাসের তুলনায় এবারের এপ্রিলে রপ্তানি আয় কমেছে ২৫১ কোটি ৪২ লাখ ডলার বা প্রায় ৮৩ শতাংশ। গত বছরের এপ্রিলে দেশে পণ্য রপ্তানি করে ৩০৩ কোটি ৪২ লাখ ডলার আয় করেছিল। চলতি বছর মার্চে বাংলাদেশ থেকে ২৭৩ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছিল। ২০১৯ সালের মার্চে রফতানি হয় ৩৩৪ কোটি ২ লাখ ৩০ হাজার ডলারের পণ্য।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স আয় হয়েছে ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলার,যা আগের মাসের চেয়ে ১৮ শতাংশ কম। কিন্তু এপ্রিলে রপ্তানি আয়ের দাঁড়িয়েছে এরও অর্ধেকে।
চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস থেকে রফতানি প্রবৃদ্ধির যে নেতিবাচক ধারা শুরু হয়। নভেল করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের আগে ফেব্রুয়ারিতেও যা অব্যাহত ছিল। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে মার্চে নেতিবাচক ধারার মাত্রা আরো বেড়ে যায়। ইপিবির পরিসংখ্যান অনুসারে,মার্চে বাংলাদেশের সব পণ্যের রফতানি কমেছে ১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। আর এপ্রিলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। রফতানি কমেছে ৮২ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যের ভিত্তিতে হালনাগাদ রফতানি পরিসংখ্যান গণমাধ্যমে প্রকাশ করে ইপিবি। তবে বর্তমানে সাধারণ ছুটি চলমান থাকায় সংস্থাটি প্রভিশনাল উল্লেখ করে শুধু ওয়েবসাইটে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সে ক্ষেত্রে ছুটি শেষে পরিসংখ্যান হালনাগাদ করা হলে সামান্য পরিবর্তন হলেও হতে পারে।
একক মাসের বিস্তারিত পরিসংখ্যান প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করে না ইপিবি। সমন্বিত পরিসংখ্যান প্রতিবেদনটিতে দেখা যায় চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল, ১০ মাসে বিশ্ববাজারে ২ হাজার ৯৪৯ কোটি ৩৮ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ৩ হাজার ৩৯৩ কোটি ৭২ লাখ ৩০ হাজার ডলারের পণ্য। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ৪৪৪ কোটি ৩৩ লাখ ৯০ হাজার ডলারের রফতানি কম হয়েছে। অর্থাৎ ১০ মাসের হিসাবে রফতানি কমেছে ৮২ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে বিশ্ববাজারে ২ হাজার ৮৯৭ কোটি ৩৮ লাখ ৩০ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৩ হাজার ৯০ কোটি ৩০ লাখ ২০ হাজার ডলারের পণ্য। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ১৯২ কোটি ৯১ লাখ ৯০ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি কম হয়েছে। অর্থাৎ নয় মাসের হিসাবে রপ্তানি ঋণাত্মক বা কমেছে ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রপ্তানির নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির এ ধারা শুরু হয়, ১০ মাস শেষেও যা অব্যাহত আছে। করোনার প্রাদুর্ভাবের প্রভাবে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির মাত্রা আরো বেড়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ইতিবাচক। জুলাইয়ে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। জুলাই-আগস্ট দুই মাসে শুরু হয় নেতিবাচক ধারা। ওই দুই মাসে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশ। তিন মাস শেষে প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে রফতানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। অর্থবছরের পাঁচ মাস শেষেও রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এরপর চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে প্রবৃদ্ধি হয় ঋণাত্মক ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
রপ্তানি খাতের শীর্ষ তিন পণ্য হলো পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত এবং পাট ও পাটজাত পণ্য। অর্থবছরের ১০ মাসের পরিসংখ্যান বলছে,পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি বাড়লেও কমেছে পোশাক এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি। তবে দেশের মোট রফতানির ৮৪ শতাংশ অবদান রাখা পণ্য পোশাকের রপ্তানি কমার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক রপ্তানিতে। করোনার প্রাদুর্ভাবে একের পর এক কার্যাদেশ বাতিল ও ক্রেতা দেশগুলোর লকডাউন পরিস্থিতিতে রফতানি আরো কমেছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এপ্রিলের রপ্তানিতে প্রাদুর্ভাবের প্রভাব বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ মার্চের ২৬ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশের রপ্তানি কার্যক্রম কম-বেশি সচল ছিল কিন্তু এপ্রিলের সারা মাসই বন্ধ ছিল কারখানা।
Posted ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৯ মে ২০২০
bankbimaarthonity.com | saed khan