নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ১৩ মে ২০২০ | প্রিন্ট | 398 বার পঠিত
করোনাভাইরাসের কারণে অচলাবস্থায় সারাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে এককালীন আড়াই হাজার টাকা করে দেবে সরকার। ইতোমধ্যে এক হাজার ২৫৭ কোটি টাকা ছাড় করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সহায়তার এ অর্থ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিনা খরচে প্রত্যেক পরিবারের হাতে ঈদের আগে পৌঁছে দেয়া হবে।
সরকারের এ কাজে সহযোগিতা করবে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সেবাদানকারী চার প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো-বাংলাদেশ ডাক বিভাগের আর্থিক লেনদেন সেবা ‘নগদ’, ব্র্যাংক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিং ‘বিকাশ’, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ‘রকেট’ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের শিওরক্যাশ।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে কাজ হারানো ৫০ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে দেয়া হবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৪ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। প্রথমদিন ১০ লাখ পরিবারকে এ অর্থ দেয়া হবে। এর পরবর্তী চারদিন ৪০ লাখ পরিবারকে এ অর্থ দেয়া হবে।
ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাজেট-১ শাখা থেকে ৬২৭ কোটি এবং বাজেট-৩ শাখা থেকে ৬৩০ কোটি টাকাসহ মোট এক হাজার ২৫৭ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। এসব টাকা সুবিধাভোগীদের মোবাইল ব্যাংক হিসাবে পাঠাতে সেবা মাশুল বাবদ আরও ৭০০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশ আউটে (অর্থ উত্তোলন) প্রতি হাজারে সাড়ে ১৮ টাকা পর্যন্ত চার্জ কাটে এমএফএস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু সহায়তার এ অর্থ ৫০ লাখ পরিবারকে পৌঁছে দিতে কোনো চার্জ নেয়া হবে না। অর্থাৎ বিনা খরচে সুবিধাভোগীরা পুরো আড়াই হাজার টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে সরকার টাকা পৌঁছানোর জন্য এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো ভর্তুকি বাবদ প্রতি হাজারে মাত্র ৬ টাকা দেবে। ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে বিকাশ ১৫ লাখ পরিবারের কাছে টাকা পৌঁছে দেবে। সবচেয়ে বেশি দেবে নগদ-১৭ লাখ পরিবারকে। রকেট দেবে ১০ লাখ এবং ৮ লাখ পরিবারের টাকা পৌঁছে দেবে শিওরক্যাশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রূপালী ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) খন্দকার আতাউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে ৮ লাখ পরিবারের অর্থ আমাদের পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা শিওরক্যাশের মাধ্যমে ঈদের আগেই এ অর্থ সুবিধাভোগীদের কাছে বিনা খরবে পৌঁছে দেব। এজন্য সরকার সংশ্লিষ্টদের সহায়তায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, জাতির এ ক্রান্তিকালে অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার। সরকারের এ মহতী কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে আমরা কৃতজ্ঞ। কাজটি শতভাগ সম্পূর্ণ করতে আমরা সব প্রস্তুতি গ্রহণ করছি।
সরকারের সহায়তার টাকা পাঠানোর কাজের মধ্যে বিকাশের ভাগে রয়েছে ১৫ লাখের দায়িত্ব। এ বিষয়ে বিকাশের হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশন্স শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিকাশে ক্যাশআউটে খরচ হাজারে ১৮ টাকা ৫০ পয়সা। সরকার আমাদের প্রতি হাজারে ৬ টাকা দেবে। বাকি ১২ টাকা ৫০ পয়সা আমরা ভর্তুকি দিয়ে সম্পূর্ণ বিনা খরচে সহায়তার অর্থ পৌঁছে দেব।’
তিনি বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের এই দুঃসময়ে কর্ম হারিয়ে মানুষ কষ্টে জীবনযাপন করছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের এ শুভ উদ্যোগের সঙ্গে থাকতে পেরে আমরা গর্বিত।
তিনি আরও বলেন, ‘চলতি সপ্তাহে অর্থ পাঠানোর এ কার্যক্রম উদ্বোধন হবে। সরকার আমাদের দায়িত্বে থাকা ১৫ লাখ পরিবারের তালিকা দিলে আমরা পরিচয়পত্রের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে অর্থ বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেব। যাদের অ্যাকাউন্ট থাকবে না তাদের নতুন অ্যাকাউন্টে খুলে টাকা পাঠানো হবে।’
জানা গেছে, উদ্যোগটির সঙ্গে জড়িত রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ। আর পরিবার চিহ্নিত করা হয়েছে স্থানীয় সরকার অর্থাৎ জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের সাহায্যে। তালিকায় রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণশ্রমিক, কৃষিশ্রমিক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কর্মরত শ্রমিক, পোলট্রি খামারের শ্রমিক, বাস-ট্রাকসহ পরিবহন শ্রমিক, হকারসহ নানা পেশার মানুষকে রাখা হয়েছে।
সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সহায়তায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী বর্তমানে যেসব সহায়তা পাচ্ছে, এ তালিকায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তালিকার কাজ শেষ করা হয়েছে ৭ মে। অবশ্য এখনও যাচাইয়ের কাজ চলছে।
Posted ১২:১৬ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৩ মে ২০২০
bankbimaarthonity.com | saed khan