শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x
করোনার কারণে সংকটে বাংলাদেশের বস্ত্র খাত

অর্ডার বাতিল হওয়ায় চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ১০ লাখ পোশাক শ্রমিক

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ০৬ জুন ২০২০   |   প্রিন্ট   |   426 বার পঠিত

অর্ডার বাতিল হওয়ায় চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ১০ লাখ পোশাক শ্রমিক

করোনার কারণে চরম সংকটে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্প। ইতিমধ্যে হাজার হাজার কোটি টাকার অর্ডার বাতিল হয়েছে। এতে বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখ পোশাক শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন বলে সম্প্রতি ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বিজিএমইএ-র বরাত দিয়ে করোনা সংকটে বলে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

অন্যদিকে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে ১ জুন পর্যন্ত দেশের সব শিল্প খাত মিলিয়ে এখন পর্যন্ত সাড়ে ১৭ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কর্মসংস্থান হারানোর তথ্য পেয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই)। এর মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি শ্রমিক পোশাক খাতের। মূলত কারখানাগুলো উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহার করতে না পারার পাশাপাশি কাজের ঘাটতিতে কর্মসংস্থান হারাতে যাচ্ছেন খাতটির প্রচুর শ্রমিক। পোশাক খাতের উদ্যোক্তা প্রতিনিধিদের দাবি, কারখানা বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি টিকে থাকতে ব্যয় সংকোচনের তাগিদে শ্রমিক ছাঁটাইয়ে বাধ্য হচ্ছেন কারখানা মালিকরা। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে তারা বলছেন, এ প্রেক্ষাপটে পোশাক খাতের ৪০ লাখ শ্রমিকের মধ্যে ২০ শতাংশ বা আট লাখ শ্রমিক ছাঁটাই হয়ে যেতে পারেন।

শ্রম ও শিল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আসন্ন মন্দা মোকাবেলায় শিল্প-কারখানাগুলো ব্যয় সংকোচনের পরিকল্পনা নিয়েছে। আবার উৎপাদন সক্ষমতা অনুযায়ী পর্যাপ্ত কাজও নেই কারখানাগুলোয়। এ কারণে ধীরে ধীরে বাড়ছে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা। বর্তমানে কারখানাগুলো সাকল্যে উৎপাদন সক্ষমতা মাত্র অর্ধেক ব্যবহার করতে পারছে। অব্যবহূত থেকে যাচ্ছে বাকি অর্ধেক। এরই ধারাবাহিকতায় অদূর ভবিষ্যতে আরো শ্রমিক ছাঁটাই হবে বলে মনে করছেন শিল্প মালিক প্রতিনিধিরা। অনেক ক্ষেত্রেই কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে, আবার অনেক ক্ষেত্রে ব্যয় কমিয়ে কারখানা টিকিয়ে রাখার তাগিদে আইনানুগ পদ্ধতিতেই এ ছাঁটাইয়ের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে দাবি করছেন তারা।

নিটওয়্যার খাতের কারখানা মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানালেন, কোনো কারখানাই সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার করতে পারছে না। ৩৫ শতাংশ সক্ষমতায় কারখানা সচল রেখেছে এমন ঘটনাও আছে। বড় কারখানাগুলোও ৬০ শতাংশের বেশি সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছে না। এ প্রেক্ষাপটে শ্রমিক ছাঁটাই হবেই।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে যা হয়েছে তাসহ চলমান পরিস্থিতিতে ৪০ লাখ শ্রমিকের অন্তত ২০ শতাংশ কাজ হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা করছি।

শ্রম ও শিল্পসংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রায় সব পোশাক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বাছাই করা হচ্ছে এক বছরের কম সময় ধরে কাজ করছেন এমন শ্রমিকদের।

এদিকে পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ড. রুবানা হক পোশাক শ্রমিকদের কভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য স্থাপিত এক ল্যাব উদ্বোধনকালে বলেন, পোশাক কারখানায় বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। কিছু ক্রয়াদেশ ক্রেতারা আবার দেবেন বলে জানিয়েছেন। এর পরও ৯৯ শতাংশ কারখানাকে ৫৫ শতাংশ ক্যাপাসিটিতে চালাতে হবে। ম্যাকেঞ্জির তথ্য বলছে, বিশ্বে কনজাম্পশন কমবে ৬৫ শতাংশ। কনজাম্পশন যদি ৬৫ শতাংশ কমে, তাহলে আমরাও আশা করতে পারি না, পোশাকের চাহিদা বাড়বে। জুনে আমরা ৫৫ শতাংশ ক্যাপাসিটিতে আছি, জুলাইয়ে কী হবে আমরা জানি না, বুঝতেই পারছি এক ধরনের ধাক্কা আমাদের সামলাতে হবে।

শ্রমিক ছাঁটাই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছাঁটাই শুরু হবে জুন থেকে। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতা। কিন্তু করার কিছু নেই। কারণ ৫৫ শতাংশ ক্যাপাসিটিতে কারখানা চললে আমাদের কাছে ছাঁটাই ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। কিন্তু এ ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের জন্য কী করা হবে সে বিষয়ে সরকারের কাছে বিনীতভাবে আবেদন, আমরা কীভাবে একসঙ্গে এ সংকট অতিক্রম করতে পারব? কারণ ছাঁটাই আসলে হবে। তবে এটিও ঠিক, যদি হঠাৎ পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়, তাহলে এ শ্রমিকরাই আমাদের অগ্রাধিকারে থাকবেন। অন্তত এটি আমাদের চেষ্টা থাকবে।

এদিকে করোনার প্রাদুর্ভাবে কারখানা বন্ধের পর জেলাভিত্তিক শ্রমিক ছাঁটাইয়ের তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেয় ডিআইএফই। সংস্থাটির হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, নভেল করোনাভাইরাসজনিত সংকটে শ্রমিক ছাঁটাই না করার বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা থাকলেও এরই মধ্যে অনেক শ্রমিক কর্মসংস্থান হারিয়েছেন।

মোট ২৩ জেলা থেকে ১ জুন পর্যন্ত এ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের তথ্য সংগ্রহ করে ডিআইএফই। এর মধ্যে যে কয়টি জেলা থেকে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের তথ্য পাওয়া গেছে, তার মধ্যে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী। জেলাগুলোর মোট ৬৭টি কারখানার ৮২ হাজার ৭৯২ শ্রমিকের মধ্যে ছাঁটাই হয়েছেন ১৭ হাজার ৫৭৯ জন। ছাঁটাইকৃতদের মধ্যে পোশাক খাতের শ্রমিক ৯০ শতাংশেরও বেশি।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৪:৩৭ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৬ জুন ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11390 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।