শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

বাংলাদেশি কর্মীদের হতাশ করা উচিত নয় ইউরোপের

বিবিএনিউজ.নেট   |   বুধবার, ২৮ অক্টোবর ২০২০   |   প্রিন্ট   |   303 বার পঠিত

বাংলাদেশি কর্মীদের হতাশ করা উচিত নয় ইউরোপের

চলতি বছর করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বড় ধাক্কা খেয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। উন্নত দেশগুলোই যখন এই সংকট মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অবস্থা আরও শোচনীয় হওয়ার কথা। তবে সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপ ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ায় ক্ষয়ক্ষতি যতটা মারাত্মক হওয়ার শঙ্কা ছিল, ততটা হয়নি। এ নিয়ে আবারও বিশ্ব মিডিয়ায় আলোড়ন তুলেছে বাংলাদেশ। খ্যাতনামা অনেকের মুখেই ফুটছে প্রশংসা ফুলঝুরি।

সম্প্রতি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কর্মসংস্থান ও সমাজ বিষয়ক কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান টমাস জেকোভস্কি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সুদীর্ঘ একটি কলাম লিখেছেন। গত ২৭ অক্টোবর ইউরোপের প্রভাবশালী দ্য পার্লামেন্ট ম্যাগাজিনে প্রকাশিত লেখাটির সারমর্ম তুলে ধরা হলো জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য-

বিশ্ব অর্থনীতিতে চরম আঘাত হেনেছে করোনাভাইরাস মহামারি। এর দ্বিতীয় ঢেউ অনেক দেশেই নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে এনেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এর সদস্য দেশগুলোর পুনর্গঠনে ৭৫০ বিলিয়ন ইউরো দিতে রাজি হয়েছে, এর মধ্যে ৩৯০ বিলিয়নই অনুদান। অন্য দেশগুলোকেও তাদের অপেক্ষাকৃত ছোট অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে পুঁজির সর্বোচ্চ সংস্থান করতে হয়েছে।

এটি বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য চরম সত্য। বৃহৎ বাজারে সীমিত অথবা শূন্য যোগসূত্র থাকায় তারা নাগরিকদের জন্য স্থায়ী উদ্ধার কর্মসূচির প্রয়োজনীয় অর্থ ধার করতে অক্ষম। এর প্রভাব পড়েছে লাখ লাখ মানুষের জীবনে।

বাংলাদেশ তেমনই একটি দেশ। যদিও তারা ‘সামান্য উন্নত দেশগুলোর’ একটি হওয়ার চেয়েও বেশি কিছু। বাংলাদেশের বেশিরভাগই সফল উন্নয়নের গল্প। আমরা ৫০ বছরেরও কম সময়ে দেশটিতে একইসঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং গণতন্ত্র সুসংহতকরণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লক্ষ্য করেছি।

এক্ষেত্রে ধন্যবাদ দিতে হয় ইইউ ও বাংলাদেশের মধ্যে অস্ত্র ছাড়া বাকি সব বাণিজ্য উন্মুক্তকরণকে। বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প হচ্ছে এর অর্থনীতির মেরুদণ্ড। ৪৫ লাখ কর্মী নিয়োগ ও রপ্তানির ৮০ ভাগ দখল করে এটি দেশটির এক নম্বর শিল্পে পরিণত হয়েছে।

এটিই বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক প্রস্তুতকারক দেশে পরিণত করেছে। এদিক থেকে তারা একমাত্র চীনের পেছনে রয়েছে। অনেক নামী-দামী পশ্চিমা ব্র্যান্ডই বাংলাদেশে নিজদের পণ্য উৎপাদন করছে।

পোশাক শিল্প বাংলাদেশের জিডিপির যেমন গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তেমনি দেশটি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সংবাদেরও রূপ দিচ্ছে। এ কারণেই ইইউতে এখনও অনেকে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে নারীদের শোষণ এবং ২০১২ ও ২০১৩ সালে দু’টি পোশাক কারখানায় ধ্বংসাত্মক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত করে। যদিও তা ভুল।

গত সাত বছরে অনেক কিছুই বদলে গেছে। ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, শ্রমিকরা আইনিভাবে ন্যূনতম মজুরির পাশাপাশি অন্য সুবিধা পাচ্ছেন। কারখানার নিরাপত্তা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। এর জন্য ভবনের পাশাপাশি কাপড় নিরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার নিয়মকে ধন্যবাদ দিতে হয়।

তবে করোনাভাইরাস মহামারি প্রকাশ করে দিয়েছে যে, কোনও দেশ মাত্র একটি শিল্পের ওপর নির্ভরশীল হলে তা বোঝায় পরিণত হতে পারে। উল্লেখযোগ্যভাবে চাহিদা কম থাকায় পশ্চিমা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো অর্ডার বাতিল করতে শুরু করেছে। কেউ কেউ নির্ধারিত উৎপাদন ব্যয় না দিয়েই সরে গেছে বলে খবর রয়েছে।

দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক অংশীদাররা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর (আরএমজি) জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ সরবরাহ করেছে। সরকারের এই সমর্থন আরএমজি খাতকে তাদের কর্মীদের নিয়োজিত রাখতে সহায়তা করেছে।

তারপরও, ক্রেতারা যখন দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন না করেন, তীব্র সংকটের মুখোমুখি হয়ে হাজার হাজার শ্রমিক বিনা বেতনেই বাড়ি ফিরে যাওয়ার হুমকিতে পড়েন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নভিত্তিক সংস্থাসহ অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ‘ফোর্স ম্যাজিউর’ ধারা চালু করে অর্ডারের জন্য অর্থ দেয়ার দায়িত্ব এড়িয়ে গেছে। তাদের যুক্তি, কোভিড-১৯ উত্থানের ফলে তারা চুক্তিভিত্তিক বাধ্যবাধকতা পালন থেকে অব্যাহতি পেয়েছে।

এই অজুহাত অবশ্যই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি শুধু ইউরোপীয় ব্যবসায়িক নীতির খারাপ চিত্রই তুলে ধরছে না, বরং পুরো সরবরাহ ব্যবস্থা ঝুঁকিতে ফেলেছে। বাংলাদেশের শ্রমিকরা যে কাজ করেছে, তার জন্য বেতন পাওয়ার অধিকার রয়েছে তাদের। সুতরাং, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো চুক্তি মেনে চলা এবং ইতোমধ্যে উৎপাদিত পণ্যের অর্থ প্রদান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ইইউ বাজার উন্মুক্ত করে বাংলাদেশের ভবিষ্যতকে রূপ দিয়েছে। এখন এই বাজারে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ম মেনে চলবে তা নিশ্চিত করার সময় এসেছে। যদিও ইইউতে অনেক প্রতিষ্ঠানই স্বেচ্ছায় মানবাধিকার ও পরিবেশগত ঝুঁকির সঙ্গে যুক্ত তাদের কার্যক্রম প্রকাশ করেছে, তবে এখনও একটি বিস্তৃত এবং সুসংহত পদ্ধতি অনুপস্থিত।

প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা এবং কার্যকলাপ বৃদ্ধিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সুনির্দিষ্ট সাধারণ নীতিমালা প্রস্তাব করা প্রয়োজন। এছাড়া সম্প্রদায়, ভোক্তা, বিনিয়োগকারী, সংস্থা এবং বিশেষত যারা সবচেয়ে বেশি দুর্বল, সেই শ্রমিকদের সুরক্ষায় স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। সুতরাং আসুন, আমরা তাদের ত্যাগ না করি; তারা ন্যায্য শর্তের ওপর নির্ভর করতে পারে তা নিশ্চিত করতে আমাদের সংহতি দেখাই।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১:৫১ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৮ অক্টোবর ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11390 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।