নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট | 193 বার পঠিত
হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে অস্বাভাবিক হারে টাকা পাচারের পরিমাণ বেড়েছে। গত এক বছরে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা ৭৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ (৭.৮ বিলিয়ন ডলার) পাচার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবহার করে বিলিয়ন ডলারের ডিজিটাল হুন্ডি কারবার করা ১৬ জনের (সিআইডি) সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর সময় এমন তথ্য দেয় সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া।
বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান বলেন, যে ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদে গত ৪ মাসে ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা পাচারের তথ্য দিয়েছে তারা।
আটকরা হচ্ছেন- দিদারুল আলম সুমন, খোরশেদ আলম ইমন, রুমন কান্তি দাস জয়, রাশেদ মাঞ্জুর ফিরোজ, আক্তার হোসেন, হোসাইনুল কবির, নবীন উল্লাহ, মো. জুনাইদুল হক, আদিবুর রহমান, আসিফ নেওয়াজ, ফরহাদ হোসাইন, আবদুল বাছির, আবদুল আউয়াল সোহাগ, ফজলে রাব্বি ও মাহাবুবুর রহমান সেলিম।
বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায়ের ৫ হাজার এজেন্ট এমএফএস মাধ্যমে হুন্ডির সঙ্গে জড়িত। এসব এজেন্ট গত ৪ মাসে ২৫ হাজার কোটি এবং বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
তাদের কাছ থেকে ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৬৮০ টাকা, ৪ সিমে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ৪৭ হাজার ২২৯ ইলেকট্রনিক মানি ও ৩৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
আটক ১৬ জনের মধ্যে ছয়জন বিকাশ এজেন্ট, তিনজন বিকাশের ডিস্ট্রিবিউটর সেলস অফিসার, তিনজন বিকাশের ডিএসএস, দুইজন হুন্ডি এজেন্ট, একজন হুন্ডি এজেন্টের সহযোগী ও একজন হুন্ডি পরিচালনাকারী।
মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, এমএফসের মাধ্যমে হুন্ডি করে এমন ৫ হাজারের বেশি এজেন্টের সন্ধান পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায়ের ৫ হাজার এজেন্ট এমএফএস মাধ্যমে হুন্ডির সঙ্গে জড়িত। এসব এজেন্ট গত ৪ মাসে ২৫ হাজার কোটি এবং বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
দেশের টাকা বিদেশে পাচার নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিন ধরেই বৈধ-অবৈধ আয় করে সেই টাকা বিদেশে পাচার করছেন অনেকে। কিছু পক্ষ জেনে অর্থপাচার করে আবার অনেকে ব্যাংকের বাধায় পড়ে দরকারে হুন্ডি করে।
প্রবাসী শ্রমিক ভাইবোনেরা, বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসরত অনাবাসী বাংলাদেশিরা (এনআরবি), ফ্রিল্যান্সার ও ব্যবসায়ীরা হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধভাবে দেশে টাকা আনেন।
গত কয়েক বছরে ব্যাংকিং চ্যানেল বহির্ভূত অবৈধভাবে মোবাইল ব্যাংকিং হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় প্রবাসী আয়ে তুলনামূলক কিছুটা হলেও ভাটা পড়ে। হুন্ডি বন্ধে সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে বন্ধ করা যাচ্ছে না। উল্টো দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।
দেশে ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণ তদন্ত করতে গেলে হুন্ডির মাধ্যমে এক বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ ৭.৮ বিলিয়ন ডলার পাচারের তথ্য পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ।
সিআইডি প্রধান বলেন, হুন্ডি সবসময় দেশের রিজার্ভের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের অর্থনীতির ঝুঁকি মোকাবিলায় হুন্ডি কার্যক্রমের বিষয়ে নজরদারি শুরু করে সিআইডি। অনুসন্ধানে জানা যায়, একটি সংঘবদ্ধ চক্রের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার এবং দেশের বাইরে অবস্থানরতদের কষ্টার্জিত অর্থ বিদেশ থেকে বাংলাদেশে না এনে স্থানীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করার মাধ্যমে মানি লন্ডারিং অপরাধ করার তথ্য পাওয়া যায়। হুন্ডি চক্রটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে তা দেশে না পাঠিয়ে এর সমপরিমাণ অর্থ স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ করে।
তিন গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করে চক্রটি
মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন হুন্ডি ব্যবসায় জড়িত চক্রটি তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ থাকে। প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে এবং দেশ থেকে যারা টাকা পাচার করতে চায় তাদের দেয়। দ্বিতীয় গ্রুপটি পাচারকারী ও তার সহযোগীরা দেশীয় মুদ্রায় উক্ত অর্থ এমএফএস এজেন্টকে দেয়। আরও তৃতীয় গ্রুপ তথা এমএফএস এজেন্টরা বিদেশে অবস্থানকারীর কাছ থেকে প্রাপ্ত এমএফএস নম্বরে দেশীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করে। এসব চক্র প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে এমএফএস ব্যবহার করে ক্যাশ ইনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হুন্ডি করছে।
আটকদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ নেওয়া হবে বলে জানান সিআইডি প্রধান।
Posted ৬:৪২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy