শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

বৈশ্বিক মন্দাতেও রফতানি আয়ে নতুন মাইলফলক

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২   |   প্রিন্ট   |   101 বার পঠিত

বৈশ্বিক মন্দাতেও রফতানি আয়ে নতুন মাইলফলক

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেই চলতি বছর পণ্য রফতানিতে নতুন মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বছরের প্রথম ১১ মাসে প্রথমবারের মতো দেশে থেকে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। ডিসেম্বরসহ এ আয় ৫৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

বছরভিত্তিতে এবারই প্রথম বাংলাদেশ পণ্য রফতানিতে ৫০ বিলিয়ন ডলারের ক্লাবে প্রবেশ করেছে। অর্থবছরে পণ্য ও সেবা খাতসহ রফতানি আয় ছিল ৬০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

এদিকে, বছরটি শুরুই হয়েছিল রফতানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে। প্রথম চার মাস রফতানি আয় টানা ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি ছিলো। ১১ মাসের মধ্যে ৯ মাসই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে ছিল দেশের রফতানি আয়। কেবলমাত্র সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি মুখে পড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। বৈশ্বিক মন্দাতেও রফতানির প্রধান বাজার ইউরোপ ও আমেরিকায় বছর জুড়ে দাপট দেখিয়েছে দেশের পোশাক। সবমিলিয়ে রফতানি আয়ের ক্ষেত্রে বছরটি ছিলো সন্তোষজক।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, চলতি বছরের ১১ মাসে ৪৯ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। বছরের প্রথম চার মাস টানা রফতানি আয় ৪ বিলিয়ন ডলারে বেশি ছিলো। মাত্র তিন মাস রফতানি আয় ৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে ছিলো। সর্বশেষ নভেম্বরে রফতানি আয় ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ১১ মাসের মধ্যে ৯ মাসই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে ছিল দেশের রফতানি আয়। কেবলমাত্র সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি মুখে পড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে।

ইপিবির তথ্যমতে, বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ৪ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করে। মাসটিতে পণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধি ৪১ দশমিক ১৩ শতাংশ। পরের মাস জানুয়ারিতে ৪ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ। মাসটিতে প্রবৃদ্ধি ৩৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। মার্চে বাংলাদেশের পণ্য রফতানিতে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়। মাসটিতে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৫৪ দশমিক ৮২ শতাংশ। ওই মাসে বাংলাদেশ পণ্য রফতানি করে আয় করে ৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। এপ্রিলেও রফতানি আয় ছিলো ৪ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার, ওই মাসে পণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধি ৫১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার।

তথ্যমতে, বছরের প্রথম চার মাস রফতানি আয় টানা ৪ বিলিয়ন ডলারের উপরে থাকলেও পঞ্চম মাস মে’তে এসে তা ৩ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। আর মে মাসে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি ছিলো ২৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। জুনে রফতানি আয় প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়ে ফেলে। মাসে পণ্য রফতানি হয় ৪ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। এই মাসে প্রবৃদ্ধি ৩৭ দশমিক ১৯ শতাংশ।

এদিকে নতুন অর্থবছরের শুরুতেই জুলাই মাসে রফতানি আয় আবারও ৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামে। মাসটিতে রফতানি থেকে বাংলাদেশের আয় হয় ৩ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। মাসটিতে প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। আগস্টে রফতানি আয় ৪ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার, মাসটিতে প্রবৃদ্ধি ৩৬ দশমিক ১৮ শতাংশ।
বছরের টানা ৮ মাস রফতানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি থাকলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সেপ্টেম্বরে তা নেতিবাচক ধারায় চলে যায়। মাসটিতে আগের বছরের চেয়ে রফতানি কম হয় ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর সেপ্টেম্বরে রফতানি আয় ছিলো ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। অক্টোবরেও নেতিবাচক ধারায় ছিলো রফতানি আয়, মাসটিতে আগের বছরের চেয়ে রফতানি কম হয়েছে ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। মাসটিতে রফতানি আয় ছিলো ৪ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। বছরের শেষ দিকে এসে নভেম্বরে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রফতানি হয়, মাসটিতে রফতানি আয় ৫ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার। একক মাস হিসাবে এটি বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মাসটিতে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ২৬ দশমিক ০১ শতাংশ।

বছর ভিত্তিতে পণ্য রফতানিতে ৫০ বিলিয়ন ডলারে ক্লাবে বাংলাদেশ: চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে প্রথমবারের মতো দেশে থেকে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। ডিসেম্বরসহ এ আয় ৫৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। বছরভিত্তিতে এবারই প্রথম বাংলাদেশ পণ্য রফতানিতে ৫০ বিলিয়ন ডলারের ক্লাবে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।

এর আগে, ২০২১ সালে পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করে ৪৪ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে পণ্য রফতানিতে আয় ছিলো ৩৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, সে বছর পুরো বিশ্ব করোনা মহামারির ছোবলে আক্রান্ত ছিলো।

এদিকে, ২০১৯ সালে পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশের আয় ছিলো ৩৯ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার, ২০১৮ সালে ৩৮ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার ও ২০১৭ সালে ৩৫ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বছর ভিত্তিতে ২০২২ সালে বাংলাদেশ পণ্য রফতানিতে ৫০ বিলিয়ন ডলারে ক্লাবে প্রবেশ করছে।

৫০ বিলিয়ন ডলারের ক্লাবে বাংলাদেশ: চলতি বছরেই বাংলাদেশ প্রথম বারের মতো রফতানি আয়ে ৫০ বিলিয়ন ডলারের ক্লাবে প্রবেশ করে। ২০২১-২২ অর্থবছরের পণ্য থেকে দেশের মোট রফতানি আয় ৫২ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ২শ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়। আর পণ্য ও সেবা মিলিয়ে এই আয় ৬০ বিলিয়ন ডলারের ঘর স্পর্শ করে। এদিকে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৭ বিলিয়ন ডলার। যেখানে পণ্য রফতানি আয়ের লক্ষ্য ৫৮ বিলিয়ন ডলার। লক্ষ্যমাত্রার বাকি আয় ধরা হয়েছে সেবা খাতে।

পোশাক রফতানিতে ইউরোপ-আমেরিকায় দাপুটে বাংলাদেশ: পোশাক দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত। মোট রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে পোশাক থেকে। পোশাকের প্রধান বাজার ইউরোপ ও আমেরিকা। এই দুটি বাজারেই দাপুটে অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) দেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে ৪৩ শতাংশ, যেখানে পুরো বিশ্ব থেকে তারা আমদানি করেছে মাত্র ২৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির দিক থেকে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থানই সবার উপরে।

এছাড়া চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে ১৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধিতে চীন ও ভিয়েতনামের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। পোশাক রফতানির শীর্ষে থাকা দুটি দেশের চেয়েই যুক্তরাষ্ট্রে বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের প্রবৃদ্ধি বেশি। দেশটিতে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে যেখানে বিশ্ব থেকে পোশাক রফতানি বেড়েছে ৩৪.৬১ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৫০ শতাংশের বেশি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান সারাবাংলাকে বলেন, রফতানি আয়ে ২০২২ সাল ভালোই গেছে। করোনা মহামারি কাটিয়ে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম। এরমধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।

মুদ্রাস্ফীতি বাড়ায় সবাই পোশাক কেনাকাটা কমাতে বাধ্য হয়েছেন। আমরা যেসব দেশে পোশাক রফতানি করি সেখানে সবাই পোশাকের ব্যয় কমিয়েছে, কারো কাছে পোশাকের বাজেট থাকছেই না। তারমধ্যেও আমরা ইউরোপ-আমেরিকায় অন্যান্য দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি করেছি। সবমিলিয়ে বলা যায় ২০২২ সাল পোশাকসহ রফতানি আয়ের জন্য ভালো একটি বছর গেছে।

তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সাল আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের। কারণ বছরটিতে নির্বাচনের উত্তাপ থাকবে। বছরটি রাজনৈতিক বছর। রাজনৈতিক দলগুলো নানা ধরণের পোগ্রাম দেবে, প্রতিটি দলকে ভাবতে হবে, রাজনীতির কারণে যেন অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। এমন কোন পোগ্রাম তারা দেবেনা যাতে দেশের মানুষ ও অর্থনীতির ক্ষতি হয়। আগামী বছরটি রাজনীতি ও অর্থনীতির দুই দিক থেকেই চ্যালেঞ্জের।

জানতে চাইলে এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, আমরা সব সময় রেসপেক্টেবল এক্সপোর্ট ডেস্টিনেশন ছিলাম। করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নানামূখী চ্যালেঞ্জ থাকে। কিন্তু আমাদের রফতানি আয়ে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি রয়েছে, কখনও প্রবৃদ্ধি কম ছিলো কিংবা কখনও বেশি। সরকারের নীতি সহায়তা, উদ্যোক্তাদের সাহসিকতা ও শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে বাংলাদেশের রফতানি আয় ক্রমাগত বেড়ে চলছে। অদূর ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে। ক্রমাগত রফতানি আয় বেড়ে চলায় উদ্যোক্তারাও আরও সাহসী হবে। এতে দেশের বাইরে ইতিবাচক বার্তাও যাবে।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস-চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান বলেন, পুরো বছর জুড়েই দেশের রফতানি আয় আশাব্যঞ্জক ছিলো। ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রফতানিতে ৩৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিলো। অর্থবছরটিতে ৫২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি হয়। সেবা খাত মিলিয়ে তা ৬০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ছিলো। করোনা মহামারির যে আঘাত তা কাটিয়ে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে এখন প্রবৃদ্ধি কিছুটা স্লথ। পুরো বছরজুড়ে যে রফতানি হয়েছে, রফতানি আয়ের যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে-তা খুবই সন্তোষজনক।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৩:৪১ অপরাহ্ণ | শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11391 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।