নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট | 465 বার পঠিত
নন-লাইফ বীমা খাতে অবৈধ কমিশন বন্ধে ডামি এজেন্ট অপসারণ, ইন্ট্রিগ্রেটেড সফ্টওয়ার ব্যবহার, নন-ট্যারিফ মার্কেট করার পরামর্শ দিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলেছেন, অবৈধ কমিশন বাণিজ্য বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। অবৈধ কমিশন প্রথা বন্ধ করা গেলে এখাতে বিপুল লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া ডামি এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে বীমা খাতে যে টাকা সরিয়ে নেয়া হচ্ছে সেটা যদি প্রকৃত এজেন্টদের দেয়া হয় তাহলে উৎসাহের সাথে কাজ করতে আগ্রহী হবে লাখ লাখ কর্মী। এতে জিডিপিতে বীমা খাতের অবদান উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।
তারা বলছেন, দেশে নন-লাইফ বীমা কোম্পানির এজেন্টদের জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র নির্ধারিত ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে কমিশন দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এই কমিশন বীমা কোম্পানির লাইসেন্সধারী এজেন্টদের দেয়ার কথা থাকলেও লোভনীয় অফার দিয়ে এজেন্টদের কমিশন দেয়া হচ্ছে গ্রাহককে। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কড়াকড়ি নির্দেশনা থাকায় কমিশন দেয়ার ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো নানা লুকোচুরির আশ্রয় নেয়। কমিশনের টাকা সরবরাহ করতে অভিনব সব কৌশলের পাশাপাশি তৈরি করে ডামি এজেন্ট। এই ডামি এজেন্টগণ কাগজে আছে বাস্তবে নেই। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
নন-লাইফ বীমা খাতে অতিরিক্ত কমিশন বন্ধে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন বলেন, বীমা খাতে অতিরিক্ত কমিশন বন্ধ করতে চাইলে আমরা যারা চেয়ারম্যান ও মুখ্য নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করে আসছি তাদের বিবেক জাগ্রত করতে হবে। আমরা যদি সবাই বলি অতিরিক্ত কমিশন দেবো না তাহলে এ খাতে অতিরিক্ত কমিশন দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু আমরাতো কেউই এই বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছি না। এছাড়া বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এজেন্ট নিয়ে যে নীতিমালা রয়েছে তা বাস্তবায়নের জন্য বিধি-প্রবিধি এখনো তৈরি করা হয়নি। এটা আইডিআরএ’র অতি দ্রুত করা প্রয়োজন। নতুনভাবে বিধি-প্রবিধি তৈরি করে এজেন্ট নিয়োগ দিলে অতিরিক্ত কমিশন দেওয়ার প্রবণতা কিছুটা হলেও কমে আসবে।
নন-লাইফ অতিরিক্ত কমিশন বন্ধে কি করণীয় রয়েছে জানতে চাইলে নিটল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এ কে এম মনিরুল হক ব্যাংক বীমা অর্থনীতিকে বলেন, শুরুতেই বলতে চাই, আমাদের দেশে নন লাইফ বীমা খাতে কমিশন বন্ধ করতে হলে বাস্তবিক কমিশন এজেন্ট তৈরি করতে হবে। বর্তমানে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ১৪.২৫ শতাংশ হারে যে কমিশন দেয়ার বিধান রয়েছে সেটা গ্রাহকের প্রাপ্য নয়, এজেন্টদের প্রাপ্য।
এই ১৪.২৫ শতাংশ কমিশন দিয়ে আমরা যদি বাস্তবিকভাবে জীবন বীমা কোম্পানির মতো এজেন্ট তৈরি করতে পারি তাহলে অনেকাংশে এই অতিরিক্ত কমিশন দেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। আর এটা বাস্তবায়ন করা গেলে লক্ষ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে যে ডামি এজেন্ট তৈরি করে কমিশন দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে সেটা বিশ্বের কোথাও নেই। অবৈধ কমিশন বন্ধ করতে হলে এই ডামি এজেন্ট সরিয়ে বাস্তবিক এজেন্ট তৈরি করতে হবে। সকল জেলা, উপজেলা পর্যায়ে শাখা গঠন করে বাস্তবিক এজেন্ট তৈরি করা যায় তাহলে দেশের লক্ষ লক্ষ লোক যে কমিশন পাবে তা থেকে উপকৃত হতে পারবে।
দ্বিতীয়ত যে বিষয়টি আমি জোর দিয়ে বলবো তাহলো, আইডিআরএ যদি নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ইন্ট্রিগ্রেটেড সফটওয়ারের মাধ্যমে সমস্ত কোম্পানিগুলোকে মনিটরিং করে তাহলে এই অতিরিক্ত কমিশন দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ হবে। আমাদের দেশে নন-লাইফের যে ৪৬টি বীমা কোম্পানি আছে সেগুলো যদি আইডিআরএ এক জায়গায় বসে মনিটরিং করে তাহলে অতিরিক্ত কমিশন কারা দিচ্ছে সেটা সহজেই বের করতে পারবে।
তৃতীয়ত হচ্ছে, নন লাইফ বীমা খাতকে নন ট্যারিফ মার্কেট করা। নন-ট্যারিফ মাকের্ট হলে প্রত্যেক কোম্পানি হিসেব অনুযায়ী প্রিমিয়াম নির্ধারণ করে তাদের দাবি পরিশোধ ও পুনঃবীমা করার বিষয় মাথায় রেখে বীমা করতে হবে। তখন অ্যাকচুয়ারির নির্দেশনা অনুযায়ী বীমা করা হলে এ খাত থেকে অবৈধ কমিশন দেওয়ার প্রবণতা দূর হবে।
অতিরিক্ত কমিশনের বিষয়ে রূপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের উপদেষ্টা পি. কে. রায় এফসিএ বলেন, এটা দীর্ঘদিনের সমস্যা। শুধু আইডিআরএ’র অভিযান বা জরিমানা করে এ সমস্যা সমাধান করা কঠিন। তবে এ ব্যাপারে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ১) অতিরিক্ত কমিশন বন্ধ করতে হলে কোন কোম্পানিতে অতিরিক্ত জনবল রয়েছে কিনা সেটা বের করতে হবে। তবে বর্তমানে আইডিআরএ’র নিকট আমরা প্রতিমাসে যে বেতন-ভাতার বিবরণী দিচ্ছি প্রত্যেকটি কোম্পানি তা সঠিকভাবে দিচ্ছে কি না তা যাচাই করতে হবে। ২) অতিরিক্ত কমিশন বন্ধ করতে হলে একটি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার মধ্যে সমন্বয় সাধন প্রয়োজন। ৩) প্রযুক্তির সহায়তায় অতিরিক্ত কমিশন দেওয়ার প্রবণতা রোধ করা যেতে পারে। আইডিআরএ’র যদি প্রত্যেকটি কোম্পানিকে ইন্ট্রিগ্রেটেড সফ্টওয়ার স্থাপনের নির্দেশনা প্রদান করেন এবং এই সফ্টওয়ারের সাথে আইডিআরএ’র সফ্টওয়ার এর লিংক স্থাপন করা হয় এবং কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তথ্য নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয় তাহলে অতিরিক্ত কমিশন প্রদানের প্রবণতা হ্রাস পাবে।
Posted ৭:২১ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৮ জানুয়ারি ২০২৩
bankbimaarthonity.com | rina sristy