নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২২ | প্রিন্ট | 155 বার পঠিত
আইন কানুন ও বিধি-বিধান মেনে যেসব কোম্পানি বীমা ব্যবসা পরিচালনা করবে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বীমা খাতের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী। শনিবার (২২ অক্টোবর) পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্সের বার্ষিক সম্মেলন ও বীমা দাবির চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
ব্যবসায়িক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকারী মাঠ পর্যায়ের কর্মী ও কর্মকর্তাদের নিয়ে কক্সবাজারের হোটেল সী প্যালেসে তিনদিনব্যাপী এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান বলেন, এখাতে সবাই যাতে আইন মেনে কাজ করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সেটি অবশ্যই নিশ্চিত করবে। যারা আইন মানবে না তাদেরকে মানাতে হবে। না মানলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, যারা আইন-কানুন বিধি-বিধান মেনে বীমা ব্যবসা পরিচালনা করবে আমরা তাদের প্রশংসা করবো। আগামী বছর থেকে কর্তৃপক্ষ বীমা কোম্পানির গ্রেডিং করবে এবং এটি শুধু প্রিমিয়াম সংগ্রহের ভিত্তিতে নয়। এর ক্রাইটেরিয়া হবে গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষা। যে সমস্ত ক্রাইটেরিয়ায় গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষা নিশ্চিত হয় আমরা সে সমস্ত ক্রাইটেরিয়া এখানে রাখবো।
ব্যবসায়িক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকারী কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানিয়ে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান বলেন, জীবন বীমা কোম্পানির মাঠকর্মী হিসেবে আপনারা কেবল ব্যবসা করছেন না প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জাতীয় অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। দেশের সঞ্চয় বৃদ্ধি করতে কাজ করছেন। সাধারণ মানুষকে বুঝিয়ে লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করছেন। সেই টাকা কোম্পানি দেশের কোথাও না কোথাও বিনিয়োগ করে এবং সেখানে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। এভাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশীয় অর্থনীতিতে আপনারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।
এভাবে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এ সময় জিডিপিতে বীমা খাতের অবদান বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, গত এক দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুপরিকল্পিত ও দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে। কিন্তু সেখানে দেশজ অর্থনীতিতে বীমা খাতের অবদান খুবই কম। দেশে মোট ৮১টি বীমা কোম্পানি রয়েছে, এত কর্মী রয়েছেন, কিন্তু জিডিপিতে সে তুলনায় বীমা খাতের অবদান নেই। দেশের মোট অর্থনীতির আকার যেভাবে বাড়ছে বীমা খাত তার সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারছে না।
পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সসহ দু’একটি কোম্পানি বীমা খাতে ভালো করছে উল্লেখ করে আইডআিরএর চেয়ারম্যান বলেন, যারা ভালো করছে তা দেখে ও জেনে আমার ভালো লাগে। কিন্তু গোটা বীমা খাতের চিত্র একসাথে দেখে আমি হতাশ হই।
দেশের বীমা খাত পিছিয়ে থাকার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে বীমা খাতের সর্বোচ্চ অভিভাবক সংস্থার এই চেয়ারম্যান বলেন, বীমা খাত পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ বীমার প্রতি মানুষের আস্থার সংকট। বিশেষ করে জীবন বীমা। কারণ আমরা মানুষের বিশ্বাস রক্ষা করতে পারি না। মানুষ বিশ্বাস করে আমাদের কাছে তার আমানত তুলে দেয়। আমরা বলি যে ব্যাংকে সঞ্চয় করলে একজন গ্রাহক শুধু লাভ পাবেন আর ইন্স্যুরেন্স করলে লাভের পাশাপাশি কোম্পানি তার আর্থিক ঝুঁকিও গ্রহণ করবে। কিন্তু বাস্তবে অনেকে সেটি মানে না। আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে আমরা একটি পলিসি করতে গ্রাহককে যতটা উৎসাহিত করি প্রিমিয়াম নবায়ন করতে ততটা উৎসাহিত করি না। আমি এটি শুনে অত্যন্ত হতভম্ব হয়েছি যে কেউ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবেই এটি করে। তারা চায় যে প্রিমিয়াম নবায়ন না হোক। এটি শুনে আমি অবাক হয়েছি। এজন্যই আমাদের লাইফ ইন্স্যুরেন্স খাতে তামাদি পলিসির হার বাড়ছে।
একজন মানুষ আপনার কথা শুনে পলিসি করলে তারপর ভিন্ন অভিজ্ঞতা হলে এটির নেতিবাচক প্রচারণা হয়। অনেক গ্রাহক মেয়াদ পূর্তিতেও সঠিক সময়ে বীমা দাবী পায়না। এই হার অনেক বেশি। যদিও পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স ভালো কাজ করছে।
আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান বলেন, যথাসময়ে বীমা দাবী পরিশোধ না করলে, মানুষ সঠিক সময়ে তার অর্থ ফিরে না পেলে, বীমা সেক্টর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। জিডিপিতে বীমা খাতের অবদান কমবে।
পপুলার লাইফের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান বলেন, মাঠ পর্যায়ে যারা পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের হয়ে কাজ করছেন আপনাদের মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। আপনাদের মাধ্যমে গ্রাহকরা পলিসি করে উপকৃত হলে ওই গ্রাহকরাই অন্যজনকে পলিসি করতে উৎসাহিত করবে। সেক্ষেত্রে গ্রাহকই গ্রাহক তৈরি করবে বলে যে মডেলের কথা বলা হচ্ছে, আপনারা সেটি বিনা পয়সায় করতে পারবেন।
পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বি এম ইউসুফ আলীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল্যাহ হারুন পাশা, আইডিআরএ’র নির্বাহী পরিচালক মো. হারুন-অর-রশিদ।
Posted ১:১৬ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy