| সোমবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট | 408 বার পঠিত
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নির্দেশনা অমান্য করে সিইও’র দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ। দায়িত্বে থাকাকালে তিনি একের পর এক অনিয়ম, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়, বীমা আইন লঙ্ঘন, নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অমান্যের পাশাপাশি কর্পোরেট সুশাসন পরিপালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে কোম্পানির পর্ষদকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছেন। নানা চাতুর্যের আশ্রয় নিয়ে টিকে থাকতে পরিচালনা পর্ষদকেও অপকৌশলে সম্পৃক্ত করেছেন। সিইও পদে অনুমোদন পেতে এবার হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের অপব্যাখ্যা করেন মীর নাজিম উদ্দিন। তার অনিয়মের খরব বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও বোর্ডের সহযোগিতায় বহাল তবিয়তে সিইও’র কক্ষে বসে নগদ আর্থিক লেনদেন ও কাভারনোট জালিয়াতির কাজ সুকৌশলে করে যাচ্ছেন। যা ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকার প্রতিবেদকের ক্যামেরায় ধরা পড়ে।
জানা যায়, মীর নাজিমউদ্দিন দায়িত্বে থাকাকালীন নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ২০২৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তার নিয়োগ নবায়ন না মঞ্জুর করে ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয় আইডিআরএ। চিঠিতে মীর নাজিম কোম্পানি থেকে যে অতিরিক্ত অর্থ নিয়েছেন তা ফেরত দেয়ার পাশাপাশি নতুন সিইও নিয়োগের জন্য বলা হয়। অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও সিইও হিসেবে কর্তৃপক্ষের দফতরে তার স্বাক্ষর করা চিঠি পাঠিয়ে বীমা আইন ২০১০ এর ৮০(১) এবং বীমা কোম্পানি প্রবিধানমালা ২০১২এর ৪(৫) লঙ্ঘন করে যাচ্ছেন বলে চেয়ারম্যানকে জানানো হয়।
কিন্তু আইডিআরএ’র নির্দেশনা সঠিকভাবে পরিপালন হচ্ছে কিনা তা তদন্তে গেলে পরিদর্শন টিম সরেজমিনে নাজিম উদ্দিনকে সিইওর দপ্তরে বসে কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখেন। এর প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ১৯ অক্টোবর কোম্পানির চেয়ারম্যান বরাবর আরেকটি চিঠি পাঠায় আইডিআরএ এবং মীর নাজিমকে বেআইনিভাবে কাজ করার সুযোগ না দিয়ে নতুন সিইও নিয়োগ দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। নতুন সিইও নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত কোম্পানির উপযুক্ত একজন কর্মকর্তাকে ভারপ্রাপ্ত সিইও’র দায়িত্ব দিয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানোর নির্দেশনা দেয়।
আইডিআরএ’র চিঠির প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ২৬ অক্টোবর কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের ১৪৮তম সভায় কোম্পানি সচিব মো. আক্তারুজ্জামানকে ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রশাসন বিভাগের প্রধান এ বি এম ফজলে মুকিত খানকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে কোম্পানি সচিবের দায়িত্ব প্রদান করা করেন। এ মর্মে কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি প্রেরণ না করে উপসচিব বরাবর চিঠি প্রেরণ করায় আইডিআরএর নির্দেশনা লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে কোম্পানির চেয়ারম্যান সাহিদা আনোয়ারের বিরুদ্ধে। এর আগে কোম্পানির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইডিআরএ পাঠানো চিঠির তারিখ নিয়েও মিথ্যাচার করার অভিযোগ রয়েছে।
ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সাহিদা আনোয়ারের এমন বির্তকিত ও অসংলগ্ন কর্মকান্ডে হতাশা প্রকাশ করেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এছাড়া, মীর নাজিম হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের ভুলভাবে উপস্থাপন ও মিথ্যা ব্যাখ্যা সেখানে কোম্পানির চেয়ারম্যান মীর নাজিমের প্ররোচনায় নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নিকট চিঠি প্রেরণ করে কোম্পানিকে ঝুঁকির পাশাপাশি একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করেছেন। তারা আরো বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে প্রতিটি কোম্পানিতে দক্ষ ও পেশাদার পরিচালনা পর্ষদ প্রয়োজন। শাহীদা আনোয়ার এক্ষেত্রে বিচক্ষণতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এদিকে নানা অনিয়ম ও মীর নাজিমউদ্দিনের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে গত ৯ জানুয়ারি ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের অফিসে এ প্রতিবেদক সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে বসে তাকে আর্থিক লেনদেন ও কাভারনোট জালিয়াতি করতে দেখতে পায়। প্রতিবেদকের উপস্থিতি টের পেয়ে আপনারা ভারপ্রাপ্ত সিইও’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বলে দ্রুত কক্ষ ত্যাগ করেন। পরে ভারপ্রাপ্ত সিইও আকতারুজ্জামানকে মীর নাজিমের উপস্থিতির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমাদের অগোচরে তিনি সিইওর কক্ষে এসেছেন। কেন এসেছেন এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেনি আকতারুজ্জামান। নগদ আর্থিক লেনদেনসহ কাভারনোট জালিয়াতির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মীর নাজিম যদি কোম্পানি থেকে কোন অর্থ নিয়ে থাকেন সেটা ফেরত দিতে বাধ্য, জালিয়াতি হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরে প্রতিবেদকের সামনে সিইওর কক্ষের নেমপ্লেট তড়িঘড়ি করে সরিয়ে ফেলা হয়।
Posted ১০:৪৯ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৪
bankbimaarthonity.com | rina sristy