বিবিএনিউজ.নেট | সোমবার, ০৬ জানুয়ারি ২০২০ | প্রিন্ট | 533 বার পঠিত
জীবন বীমা কোম্পানির ব্যবসায়িক চিত্র পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশনের বেসিস তৈরী করেন একজন অ্যাকচুয়ারি (সম্পদ ও দায় নিরূপণকারী)। এছাড়া জীবন ও সাধারণ উভয় ধরনের বীমা প্রতিষ্ঠানের পলিসি ডিজাইন করেন তারা। বীমা ব্যবসায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখা স্বত্বেও দেশে অনুমোদন প্রাপ্ত পূর্নাঙ্গ কোন অ্যাকচুয়ারি নেই। মূলত নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে অনুমোদন প্রাপ্ত মাত্র একজন অ্যাসোসিয়েট অ্যাকচুয়ারি দিয়ে চলছে বীমা কোম্পানিগুলো। এ অবস্থায় দেশের বীমা খাতে নজর পড়েছে বিদেশী অ্যাকচুয়ারিদের।
সম্প্রতি দেশীয় বীমা কোম্পানিগুলোকে অ্যাকচুয়ারিয়াল সেবা দিতে যোগাযোগ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যাকচুয়ারিয়াল ফার্ম মিলিমান। দেশে প্রতিষ্ঠানটির পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন একাডেমি অব লার্নিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সাবেক সদস্য সুলতান উল আবেদীন মোল্লা। আগামী মাসে বীমা কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তাদের (সিএফও) সঙ্গে দেশের অ্যাকচুয়ারিয়াল অ্যাক্টিভিটিজ নিয়ে একটি সেমিনার করবে বিদেশী এ প্রতিষ্ঠান।
সেমিনারে মিলিমানের পক্ষে উপস্থিত থাকবেন তাদের সিঙ্গাপুর অফিসের প্রতিনিধি কার্লস কার্নিয়ারো ও ভারতের মুম্বাই অফিসের প্রতিনিধি সংকেত কাওথার। জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অ্যাকচুয়ারিয়াল সেবা দিয়ে যাচ্ছে মিলিমান।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, একেকটি কোম্পানির ভ্যালুয়েশনের জন্য একজন অ্যাকচুয়ারি পেয়ে থাকেন ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা, বিশেষ ক্ষেত্রে এর পরিমাণ আরও বেশি হয়। দেশে অ্যাকচুয়ারি সংকট দূর করতে ২০০৪ সালে ইনস্টিটিউট অব অ্যাকচুয়ারিস অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ বীমা একাডেমি (বিআইএ)। তবে চুক্তির ১৫ বছরেও কোনো অ্যাকচুয়ারি পায়নি বাংলাদেশ। অ্যাকচুয়ারি তৈরিতে আমাদের এ ব্যর্থতার সুযোগ বিদেশীরা নিবে এটাই স্বাভাবিক।
একাডেমি অব লার্নিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং আইডিআরএ’র সাবেক সদস্য সুলতান উল আবেদীন মোল্লা বলেন, বাংলাদেশে অ্যাকচুয়ারির সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। নেই বললেও ভুল হবে না। এ অবস্থায় মিলিমানের মতো বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠান যদি অ্যাকচুয়ারিয়াল সেবা দিতে চায়- তা অবশ্যই খাতটির জন্য ইতিবাচক। বীমা পলিসির আধুনিকায়নের পাশাপাশি স্কলারশিপের মাধ্যমে নতুন অ্যাকচুয়ারি তৈরিতেও কাজ করবে তারা। প্রথম অবস্থায় ৩২টি জীবন বীমা কোম্পানিকে নিয়ে কাজ শুরু করলেও পরবর্তীতে সাধারণ বীমা ব্যবসা আধুনিকায়নের ইচ্ছা তাদের রয়েছে। আইন অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমোদন নিয়েই এ দেশে কাজ করবে মিলিমান।
আইডিআরএ বলছে, অ্যাসোসিয়েট সোহরাব উদ্দীন ছাড়াও দেশে বর্তমানে দু’জন পূর্ণাঙ্গ অ্যাকচুয়ারি আছেন। তাদের একজন আইডিআরএ’র সাবেক চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ। আরেকজন হলেন প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর হালিম। এরমধ্যে বীমা কোম্পানিগুলোর ভ্যালুয়েশনের জন্য শুধু সোহরাব উদ্দিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে অনুমোদন নিয়েছেন।
এদিকে ২০১১ সালে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ গঠিত হওয়ার পর বিদেশি অ্যাকচুয়ারি নিয়োগে কিছু শর্তারোপ করায় বাংলাদেশে কাজ করা ছেড়ে দিয়েছেন আরেক প্রবাসী অ্যাকচুয়ারি আফসার উদ্দিন আহমেদ। বিদেশে থাকলেও আগে তিনি বাংলাদেশি বীমা কোম্পানিগুলোকে ভ্যালুয়েশন সেবা দিচ্ছিলেন। তবে ২০১১ সালের পর বিদেশি, প্রবাসী কিংবা অনাবাসী কোনো অ্যাকচুয়ারি বাংলাদেশে সেবা দেয়ার জন্য অনুমোদন চাননি।
আইডিআরএ’র শর্ত অনুযায়ী বিদেশী কোনো অ্যাকচুয়ারি দ্বারা নিরীক্ষাকার্য সম্পন্ন করতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। বেতন-ভাতা ও অন্য আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। সম্পদ ও ঝুঁকি মূল্যায়নের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত অ্যাকচুয়ারিকে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় অ্যাকচুয়ারিকে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে। শুধু তাই নয়, প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর কোনো কারণে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ তলব করা মাত্রই অ্যাকচুয়ারিকে হাজির হতে হবে। ভবিষ্যতে আর্থিক অবস্থা নিয়ে অ্যাকচুয়ারি তার নিজস্ব মতামত কোম্পানির ব্যবস্থাপনার কাছে তুলে ধরবে এবং প্রতিবেদনটি আইডিআরএ’র কাছে জমা দিতে হবে। কোম্পানির প্রশাসনিক ভূমিকায় কাজ করার জন্য অ্যাকচুয়ারিকে কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি নিতে হবে।
Posted ২:৩৪ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৬ জানুয়ারি ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed