বিবিএনিউজ.নেট | বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট ২০১৯ | প্রিন্ট | 595 বার পঠিত
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ সাধারণ বীমা কোম্পানির আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তালিকাভুক্ত ৩৫টি সাধারণ বীমা কোম্পানির মধ্যে আগের বছরের তুলনায় মুনাফা বেড়েছে ২৬টির। গত বছর নগদ অর্থ সংকটে ছিল এমন একটি প্রতিষ্ঠান তারল্য সংকট থেকে বিরিয়ে এসেছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) আর্থিক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই দিয়েছে বীমা কোম্পানিগুলো।
অধিকাংশ কোম্পানির মুনাফার চিত্র ভালো দেখালেও তালিকাভুক্ত সাতটি সাধারণ বীমার শেয়ার প্রতি সম্পদ আগের বছরের তুলনায় কমে গেছে। সেই সঙ্গে ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক অবস্থায় রয়েছে পাঁচটির। এর মধ্যে তিনটির ক্যাশ ফ্লো চলতি বছরে নতুন করে ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। বাকি দুটির ক্যাশ ফ্লো গত বছরও ঋণাত্মক অবস্থায় ছিল।
নিয়ম অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে প্রতি তিন মাস পরপর আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হয়। এরই আলোকে তালিকাভুক্ত ৩৫টি সাধারণ বীমা চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিক শেষে জানুয়ারি-জুন সময়ের প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। যা নিয়ম অনুযায়ী স্টক এক্সচেঞ্জেও পাঠিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথমার্ধে বা প্রথম ছয় মাসে আগের বছরের তুলনায় মুনাফা কমে যাওয়া নয়টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি (বিজিআইসি), নর্দার্ন ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্স ও ব্যাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স।
আপরদিকে ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়া প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স ও ঢাকা ইন্স্যুরেন্স। এর মধ্যে অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স ও রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের ক্যাশ ফ্লো গত বছরও ঋণাত্মক ছিল।
ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স ও অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারপ্রতি সম্পদের মূল্যও কমেছে। এছাড়া সম্পদের মূল্য কমে যাওয়া প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স ও এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স।
দেশে ব্যবসা করা বেসরকারি সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে বড় প্রতিষ্ঠান গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স। চলতি বছর মুনাফা পতনের দিক থেকে প্রতিষ্ঠানটি সবার ওপরে রয়েছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধের ব্যবসায় কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ১ টাকা ২৪ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৫৯ পয়সা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় শেয়ারপ্রতি মুনাফা কমেছে ৩৫ পয়সা।
মুনাফায় বড় ধরনের পতনের পাশাপাশি কোম্পানির শেয়ারপ্রতি সম্পদের মূল্যও কমে গেছে। চলতি বছরের জুন শেষে গ্রীন ডেল্টার শেয়ারপ্রতি সম্পদের মল্য দাঁড়িয়েছে ৭৬ টাকা ৩৯ পয়সা, যা আগের বছরে ছিল ৮১ টাকা। এ হিসাবে প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে কোম্পানিটি সম্পদ হারিয়েছে ৪ টাকা ৪১ পয়সা।
এদিকে গত বছরের তুলনায় মুনাফার প্রবৃদ্ধিতে সবার ওপরে রয়েছে প্রাইম ইন্স্যুরেন্স। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা গত বছরের তুলনায় বেড়ে এগারো গুণ ছাড়িয়েছে। শতকরা হিসাবে মুনাফা বেড়েছে ৯৬৭ শতাংশ। চলতি বছরের ছয় মাসে বীমা কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৬৪ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ৬ পয়সা।
মুনাফায় বড় ধরনের উন্নতি হওয়ার পাশাপাশি কোম্পানিটির তারল্য অবস্থারও উন্নতি হয়েছে। অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো বা পরিচালন নগদ প্রবাহের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ছয় মাসে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ২০ পয়সা। অথচ গত বছরের প্রথম ছয় মাসে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ছিল ঋণাত্মক ৭৪ পয়সা। ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হওয়ার অর্থ, নগদ অর্থের সংকট দেখা দেয়া।
মুনাফা প্রবৃদ্ধিতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স। চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ১ টাকা ৩৩ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৮৪ পয়সা। মুনাফার পাশাপাশি কোম্পানিটির সম্পদের পরিমাণও বেড়েছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. বখতিয়ার হাসান এ প্রসঙ্গে বলেন, বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতার কিছুটা অভাব আছে। কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে প্রায়ই গ্রাহককে হয়রানির অভিযোগ ওঠে। যদি বীমা কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা বাড়ানো যায় এবং দাবি পাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকের হয়রানি বন্ধ হয় তাহলে বীমা খাত প্রসারের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে।
যোগাযোগ করা হলে প্রাইম ইন্স্যুরেন্স’র ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ মনিরুল হক বলেন, আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবসা করেছি। এ কারণে আমাদের মুনাফা বেড়েছে। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারব না।
Posted ৩:৩৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed