বিবিএনিউজ.নেট | সোমবার, ২২ জুলাই ২০১৯ | প্রিন্ট | 642 বার পঠিত
দেশের কিছু বীমা কোম্পানি গ্রাহকদের দাবি পরিশোধ করছে না। তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড বীমা খাতের ওপর আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। বীমা নিয়ন্ত্রক সরকারি এ সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশে বীমা শিল্প বিকাশের যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কয়েকটি বীমা প্রতিষ্ঠানের দাবি পরিশোধের হার খুবই কম। বীমা দাবি নিষ্পত্তিতে আশ্রয় নেয়া হচ্ছে দীর্ঘসূত্রতার। অভাব রয়েছে জবাবদিহিতারও। এতে বীমা খাতের ওপর আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে।
এ অবস্থায় গ্রাহকদের বীমা দাবি নিষ্পত্তির জন্য আইডিআরএ পাঁচজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, গ্রাহকদের বিভিন্ন অভিযোগ শোনার জন্য বীমা কোম্পানিগুলোকে ১৪ আগস্টের মধ্যে তাদের নিজ নিজ কার্যালয়ে একটি করে হটলাইন কল সেন্টার স্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে আইডিআরএ’র সদস্য (প্রশাসন) গকুল চাঁদ দাস এ প্রতিবেদককে বলেন, এ আদেশের ফলে বীমা গ্রহীতাদের দাবি দ্রুত নিষ্পত্তি হবে এবং এ খাতে স্বচ্ছতাও আসবে। বীমা গ্রহীতাদের ভোগান্তি কমাতে বীমা কার্যালয়ে নির্দিষ্ট সময়ে কল সেন্টার স্থাপনের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
আইডিআরএ বলছে, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বীমা গ্রহীতারা অনেক লিখিত অভিযোগ দাখিল করছেন এবং অনেকে আবার মৌখিকভাবে কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করছেন। এসব অভিযোগ নিষ্পত্তিতে বীমাকারী কোম্পানিগুলো দীর্ঘসূত্রতার আশ্রয় নিচ্ছে এবং জবাবদিহিতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। বীমা কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনার জন্য কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নিয়মিত পরীবিক্ষণ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে পাঁচ কর্মকর্তাকে এ বিষয়গুলো দেখার দায়িত্ব আইডিআরএ।
জানা গেছে, এসব কর্মকর্তা আটটি দায়িত্ব পালন করবেন। এগুলো হলো- বীমা দাবিসংক্রান্ত কোনো লিখিত বা মৌখিকভাবে প্রাপ্ত অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বীমা প্রতিষ্ঠানের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে প্রাথমিকভাবে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করবেন। প্রাপ্ত অভিযোগ, দাবি নিষ্পত্তি এবং অনিষ্পন্ন দাবির অভিযোগসংক্রান্ত তথ্য কোম্পানিভিত্তিক রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করবেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা প্রতি সপ্তাহের প্রতিবেদন পরবর্তী সপ্তাহের রোববার কর্তৃপক্ষের সদস্যের (আইন) কাছে দাখিল করবেন। প্রাথমিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিষ্পত্তির হিসাব প্রতি সপ্তাহে কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বীমাকারীর দাবি রেজিস্ট্রার নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করবেন। বীমাকারীর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দাবির তথ্য পরীক্ষা করে নিয়মিতভাবে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দাবি নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেবেন।
বীমাকারীর সাথে প্রাথমিক যোগাযোগের মাধ্যমে দাবি নিষ্পত্তি না হলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অভিযোগ কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট শাখায় প্রেরণ করতে হবে। এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তাকে অবহিত রেখে প্রয়োজনীয় বীমা প্রতিষ্ঠানে অন-সাইট পরিদর্শন করবেন।
যে পাঁচজন কর্মকর্তাকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারা হলেন- ড. শেখ মুহাম্মদ রেজাউল ইসলাম, নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব); কাজী মনোয়ার হোসেন, নির্বাহী পরিচালক (যুগ্মসচিব); মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, পরিচালক (যুগ্মসচিব); মোহাম্মদ শাহ আলম, পরিচালক (উপসচিব) এবং আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক, পরিচালক (উপসচিব)।
এদিকে বীমা কোম্পানিগুলোকে কল সেন্টার স্থাপনের নির্দেশ দিয়ে আইডিআরএ কর্তৃপক্ষ বলেছে, বাংলাদেশের বীমা খাতকে জনপ্রিয় এবং এর প্রতি জনমনে আস্থা সৃষ্টি করার উদ্যোগের অভাব রয়েছে। বীমা বিষয়ে জনসাধারণের অনেক জিজ্ঞাসা রয়েছে। জনসাধারণ জানতে চান, তারা কোথায় বীমা করবেন, কিভাবে বীমা করবেন, কী ধরনের পলিসি ক্রয় করবেন, অভিযোগ থাকলে কোথায় ও কিভাবে অভিযোগ করবেন, বীমা করলে কী কী সুবিধা পাবেন, যথাসময়ে বীমা প্রমিয়াম পরিশোধ না করলে ও পলিসি স্যারেন্ডার করলে কী অসুবিধা হবে এবং বীমা গ্রাহকদের বীমা দাবি ও অভিযোগ কিভাবে নিষ্পত্তি হবে। জনসাধারণকে এসব বিষয়ে স্বচ্ছ ও সাবলীল ধারণা প্রদান করতে প্রতিটি বীমা কোম্পানির নিজ নিজ কার্যালয়ে কল সেন্টার স্থাপন করা জরুরি।
এমতাবস্থায় প্রতিটি বীমা কোম্পানিকে আগামী ১৪ আগস্ট ২০১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) থেকে হটলাইন নম্বর সংগ্রহ করে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে কল সেন্টার স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে আইডিআরএ। এ হটলাইন নম্বর প্রতিটি বীমা কোম্পানিকে তাদের নিজ নিজ ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করতে হবে।
Posted ১২:৩৫ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২২ জুলাই ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed