রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

ডেল্টা লাইফে অনিয়ম: প্রশাসক নিয়োগের দাবি সাবেক চেয়ারম্যানের

আদম মালেক   |   মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০   |   প্রিন্ট   |   1193 বার পঠিত

ডেল্টা লাইফে অনিয়ম: প্রশাসক নিয়োগের দাবি সাবেক চেয়ারম্যানের

অনিয়ম ও দুর্নীতির করালগ্রাসে ডুবতে বসেছে একসময়কার সুপ্রতিষ্ঠিত জীবন বীমা কোম্পানি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স। প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন পরিপালনে ব্যর্থতা, অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম করে বীমাগ্রাহক পরিচালক নিয়োগ, অনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রচলিত ব্যাংক সুদের চেয়ে নিম্ন হারে এফডিআর রাখা, কোম্পানির সম্পদ পারিবারিক কাজে ব্যবহারসহ নানা অনিয়ম কোম্পানিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। এজন্য কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুরুর রহমান ও তার মেয়ে এবং কোম্পানির বর্তমান সিইও আদিবা রহমানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

গত ৭ ডিসেম্বর বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র কাছে এ অভিযোগপত্র পাঠান আরেক সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসাইন। এমনটাই জানা গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে

জানা গেছে, ২০০৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত কোম্পানির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসাইন। সে সময় সম্পদ ও লাইফ ফান্ড বৃদ্ধিসহ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সফলতা অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে রয়েছে- গুলশানে কোম্পানির নিজস্ব ভবন ডেল্টা লাইফ টাওয়ার, বগুড়ার কেন্দ্রস্থলে ক্রয়কৃত জমিতে ২১তলা ভবন নির্মান, খুলনায় সোঁনাডাঙ্গায়ও আরেকটি ২১তলা ভবন নির্মান, মতিঝিল কালভার্ট রোডস্থ একটি বহুতল ভবনে ৩টি ফ্লোর ক্রয় করা এবং ৮’শ কোটি টাকার লাইফ ফান্ডকে ২৬’শ কোটি টাকায় উন্নীত করা।

চেয়ারম্যানের দক্ষ পরিচালনায় মাত্র ৬ বছরে এর প্রবৃদ্ধি ২২৫ শতাংশে দাঁড়ায়। কোম্পানির এমন বিবিধ উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে পুঁজিবাজারে থাকা শেয়ারেও। সে সময়ে প্রতিটি শেয়ারের দাম ১৮’শ টাকা থেকে বেড়ে ৬৩ হাজার টাকায় দাঁড়ায়, যা এখন পর্যন্ত একটি রেকর্ড হয়ে আছে। কিন্তু ২০১১ সালে মঞ্জুর রহমানের পুনরায় দায়িত্ব গ্রহণের পর ক্ষীণ হয়ে আসে ডেল্টা লাইফের প্রাণশক্তি। বিভিন্ন ক্ষেত্রেই পশ্চাদমুখীতা কোম্পানিকে গ্রাস করতে থাকে। লাইফ ফান্ডের প্রবৃদ্ধি ২২৫ শতাংশ থেকে মাত্র ৫০ শতাংশে নেমে আসে।

অভিযোগ রয়েছে, কোম্পানিতে বর্তমান সিইওর বাবা এবং সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুরুর রহমান ২০০১ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সে সময় পরিচালনা পর্ষদে ৮ জন বীমা গ্রাহক অর্ন্তভুক্তির বিধান জারি হলে জাল স্বাক্ষরে নিজের লোকদের পরিচালক করেন তিনি। পরবর্তীতে বোর্ডের অন্যান্য সদস্যরা এ নিয়ে মামলা করলে আদালত এসব পরিচালকের নির্বাচন স্থগিত করে। অপরদিকে কোম্পানিকে পারিবারিক সম্পত্তিতে পরিণত করার অভিযোগ রয়েছে মঞ্জুরুর রহমানের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা পরিচালক না হয়েছে তার স্ত্রী-পুত্র ও কন্যারা উদ্যোক্তা পরিচালক হিসেবে পরিচালনা পর্ষদে রয়েছে।

তাছাড়া বিএসইসির আইন অনুযায়ী অনেক পরিচালক ২ শতাংশ ধারণ না করেও পর্ষদে থেকে আইন ভঙ্গ করছেন। অথচ ২ শতাংশ শেয়ার ধারণসহ উদ্যেক্তা পরিচালক হয়েও পরিচালনা পর্ষদে জায়গা হয়নি সাবেক চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসাইনের। আবার বীমা আইনে একই পরিবারে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারধারণ না করার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু নিজে ও পরিবারের অন্য সদস্যরা ২২ শতাংশ শেয়ার কুক্ষিগত করে নিয়মিত সে আইন ভাঙছে সাবেক এই চেয়ারম্যান ও তাঁর পরিবার। ২০০১ সালে তাঁর কন্যা আদিবা রহমানের বিরুদ্ধে ডিফেক্টো এমডি থাকাবস্থায় তহবিল তছরুপের অভিযোগ ওঠে এবং মামলা দায়ের হয়। পরে অর্থ ফেরৎ দিয়ে সে যাত্রায় দায় মুক্ত হন আদিবা রহমান। এর বাইরে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ তাদের ব্যাংক হিসাবে প্রেরণের নির্দেশ থাকলেও তা ভঙ্গ করে চেকের মাধ্যমে প্রদানেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সূত্রের দাবি, সাবেক এই চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের অনিয়মের আমলনামা বেশ লম্বা। প্রচলিত ব্যাংক সুদের হার থেকে অনেক কম রেটে এফডিআর করা ও ভালো কোম্পানির পরিবর্তে জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার পেছনে অনৈতিক আর্থিক সুবিধা রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এমনকি অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে দরপত্র আহ্বান ছাড়াই ভারতীয় একটি কোম্পানি থেকে ৩ গুন বেশি দামে সফটওয়্যার ক্রয় করেছেন।

কোম্পানির সম্পদ পারিবারিক কাজে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে মঞ্জুরুর রহমানের বিরুদ্ধে। নিজস্ব চা বাগান ও পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজনে নিয়মিত ব্যবহার করছেন ডেল্টা লাইফের জিপ। আবার কোম্পানির অর্থেই তাঁর বাসবভনের ডেকোরেশনের কাজ হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি। অথচ এখনও সল্প মূল্যের দাবী আদায় করতে নিয়মিত অফিসের বারান্দায় ঘুরছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবি শত শত গ্রাহক।

এ প্রসঙ্গে কোম্পানীর সাবেক চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসাইন বলেন, ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্সের পরিচালনা পরিষদে মঞ্জুরুর রহমান না থাকলেও সক্রিয় তার স্বজন ও অনুসারীরা। তাদের অনিয়ম দুর্নীতিতে ডুবতে বসেছে কোম্পানিটি। কোনোভাবেই নিরাপদ নয় ২০ লক্ষ বীমা গ্রাহকের সঞ্চিত অর্থ। তাই ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে প্রশাসক নিয়োগ জরুরি হয়ে পড়েছে।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৫:৪২ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।