কামারুন-নাহার-মুকুল | বুধবার, ০৯ জুন ২০২১ | প্রিন্ট | 470 বার পঠিত
বীমা একটি সেবামূলক পেশা; দেশের একটি ‘সম্ভাবনাময় ও গুরুত্বপূর্ণ’ আর্থিক খাত। বীমার উৎপত্তি সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা খুবই দূরুহ। তবে সংগৃহীত তথ্য থেকে জানা যায়, ইটালিকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয় কয়েকটি দেশে চতুর্থ শতাব্দীতে বীমা ব্যবসার শুরু হয়। ১৮১৮ সালে এ উপমহাদেশে ইউরোপীয় উদ্যোক্তারা কলকাতায় The ‘Oriental Life Insurance Company’ নামে একটি জীবন বীমা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বীমা ব্যবসার সূচনা করে। পর্যায়ক্রমে অগ্নি-বীমা ও নৌ-বীমার গোড়াপত্তন হয়। তবে তৎকালীন ব্রিটিশ আমলে অর্থাৎ ১৯০৭ সালে প্রথম বঙ্গ প্রদেশে বীমার প্রচলন হয়। ১৯২৮ সালে The Indian Insurance Company Act.’ নামে একটি বীমা আইন পাস করা হয়। ১৯৩৮ সালে এটি সংশোধিত, পরিমার্জিত ও সংযোজিত হয়ে আবার ঘোষিত হয়।
১৯৩৮ সালের প্রণীত বীমা আইনের আলোকে বীমাশিল্প পরিচালিত হতো। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ৭৫টি বীমা কোম্পানি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বীমা ব্যবসায় সম্পৃক্ত ছিল। তবে ওই কোম্পানিগুলোর কেবল শাখা অফিসই ছিল এ অঞ্চলে। ওই কোম্পানিতে পশ্চিম পাকিস্তানিরা নিজ দেশে কিংবা পূর্ব পাকিস্তানের কোথাও উচ্চতর বিশেষজ্ঞ পদে কোনো বাঙালিকে যোগ্য হিসেবে বিবেচনায় আনেনি। তবে এ দেশের কিছুসংখ্যক ক্ষণজন্মা আলোর দ্যুতি বীমাকে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে গেছেন। সর্বাগ্রে বলতে হয় খোদা বক্স নামটি। এ নামটি নতুন প্রজন্মের কাছে অপরিচিত হলেও বাংলাদেশের ইন্স্যুরেন্সের ইতিহাসে অদ্বিতীয় একটি নাম। তিনি বেছে নিয়েছিলেন চ্যালেঞ্জিং পেশা ইন্স্যুরেন্সকে। ১৯৩৫ সালে কলকাতার ওরিয়েন্টাল গভর্নমেন্ট সিকিউরিটি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে কর্মজীবন শুরু করেন। দেশ বিভাগের পর ১৯৫২ সালে ঢাকায় এসে ইস্টার্ন ফেডারেল ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির (ইফু) পূর্ব পাকিস্তান শাখায় লাইফ ম্যানেজার পদে যোগদান করেন। বৃহত্তর কর্মক্ষেত্রে অসীম পরিশ্রম ও প্রবল দক্ষতায় বীমা বাণিজ্যকে ধর্মীয় কুসংস্কারের আঁধার পেরিয়ে আলোর জগতে নিয়ে আসেন।
১৯৬০ সালে গোটা পাকিস্তানের লাইফ সেকশনের লাইফ ম্যানেজার হন। তিনিই ছিলেন জীবন বীমা করপোরেশনের প্রথম ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ১৯৭৩ সালে গঠিত এ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পান তিনি। বর্তমানে ঢাকার ব্যবসাকেন্দ্রে যে জীবন বীমা ভবনটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, সেটি আসলে ইফু ভবনের কিছুটা পরিবর্তিত নকশায় খোদা বক্সের স্বপ্নেরই বাস্তবায়ন। তিনিই প্রথম বাঙালি, যিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে শত শত বীমাকর্মী তৈরি করেছিলেন। ‘ইফু’কে ভূমিশয্যা থেকে পাকিস্তানের ৩৭টি কোম্পানির মধ্যে শীর্ষস্থানে তুলে আনার মূল চালিকাশক্তি ছিলেন তিনি। পাঁচ দশকেরও আগে তার মৃত্যু হলেও বীমাশিল্পের ইতিহাসে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে।
বাংলাদেশের বীমা জগতের অবিস্মরণীয় আরেক নাম এম এ সামাদ। যার প্রকৃত নামটি মুহাম্মদ আজিজুস সামাদ। এ নামটি অনেকেই জানেন না। নামটি এম এ সামাদ নামের আড়ালে লুকিয়ে আছে। ১৯৫১ সালে তিনি বীমাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। সেই সাথে বীমা যে একটি সম্মানজনক শিল্প তা তার অদম্য প্রচেষ্টায় প্রমাণ করতে দৃঢ় ছিলেন। তিনি বীমার কারিগর তৈরির উজ্জ্বল নক্ষত্র। ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন দেশের প্রথম এবং একমাত্র রাষ্ট্রীয় বীমা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমি’। তিনি ছিলেন এ একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। তিলে তিলে গড়ে তোলেন দেশের বেসরকারি খাতের প্রথম এবং একমাত্র সাধারণ বীমা কোম্পানি বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি. (বিজিআইসি)। বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতা এবং অর্জিত জ্ঞানের আলোকে লিখেছেন বীমার ওপর এ দেশের সর্বাধিক গ্রন্থ। তিনি ছিলেন বীমাশিল্পের স্বপ্নদ্রষ্টা।
যেমন পদ্মা মেঘনা যমুনা বহমান, তেমনি আরেকটি নাম শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ১৯৬১ সালে আলফা ইন্স্যুরেন্সের কন্ট্রোলার অব এজেন্সি হিসেবে যোগ দেন। এটাই ছিল তার রাজনীতির বাইরে প্রথম কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা আর এটাই ছিল তার প্রথম ও শেষ চাকরি। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে অফিস ছিল তার। ১৯৫৮ সালে আইয়ুুব খানের মার্শাল ল’ জারি হওয়ায় দেশে রাজনীতি বন্ধ ছিল। বঙ্গবন্ধু আপাদমস্তক একজন রাজনীতিবিদ। রাজনীতি না করে কীভাবে বাঁচবেন তিনি? ‘আলফা ইন্স্যুরেন্স’-এ চাকরির সুযোগ নিয়ে চাকরির অন্তরালে রাজনীতি করতেন তিনি। আর গোপনে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়তা বজায় রাখতেন। সারা দেশে নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করতেন। কোম্পানির কাজে ঢাকার বাইরে যাওয়ারও সুযোগ পেতেন। ‘আলফা ইন্স্যুরেন্স’ দফতরে বসেই তিনি ছয়দফা রচনা করেন। এটি তার রাজনৈতিক জীবনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। বঙ্গবন্ধু দেশকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তার গুরুত্ব ও তাৎপর্য ছয়দফার মধ্যে বিবৃত হয়েছে। ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামে একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়; দেশ পায় একটি মানচিত্র। ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানবাহিনীর বিশেষ বিমানে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। সাথে অনেক জনের মধ্যে ছিলেন বীমা অঙ্গনের গোলাম মওলা। তারা দু’জন ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ভারতের ওরিয়েন্টাল ফাইন্যান্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগদানের মাধ্যমে গোলাম মওলার বীমাজগতে প্রবেশ। ১৯৬৬ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন গ্রেট ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। স্বাধীন বাংলাদেশে সাধারণ বীমা করপোরেশনের তিনিই ছিলেন প্রথম ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
স্বাধীন বাংলাদেশে ফেরার পর বঙ্গবন্ধু তার দূরদৃষ্টির মাধ্যমে ব্যাংক-বীমা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করে সচল রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ Bangladesh Insurance (Emergency Provision) Order, ১৯৭২ সালে জারি করা হয়। এতে ১৯৩৮ সালের বীমা আইনটি বাংলদেশের বীমা আইন বলে বিবেচিত হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। তবে মাত্র ৫ মাস পরে একই বছর ৮ আগস্ট রাষ্ট্রপতির ৯৫নং আদেশ বলে তৎকালীন ৭৫টি বীমা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করে প্রথমে ৫টি সংস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১. বাংলাদেশ জাতীয় বীমা করপোরেশন, ২. কর্ণফুলী বীমা করপোরেশন, ৩. তিস্তা বীমা করপোরেশন, ৪. সুরমা জীবন বীমা করপোরেশন, ৫. রূপসা জীবন বীমা করপোরেশন।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সব বীমা কোম্পানি জাতীয়তাকরণ করার পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল সামাজিক সেবা ও জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বেশিরভাগ বীমা কোম্পানির মালিক ছিল পশ্চিমারা, যারা এদেশে বীমা ব্যবস্থাকে দক্ষ ও শক্তিশালী করার জন্য খুব কমই নজর দেয়। যার ফলে বাংলাদেশের বীমা কোম্পানিগুলো পরিচালনার জন্য একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তির অভাব দারুণভাবে পরিলক্ষিত হয়। ১৯৭৩ সালের ১৪ মে বীমা করপোরেশন অধ্যাদেশ (Insurance Corporation Ordinance, 1973) ঘোষণার মধ্য দিয়ে ৫টি বীমা সংস্থাকে দুটি সংস্থার অধীনে আনা হয়। ১. জীবন বীমা করপোরেশন ও ২. সাধারণ বীমা করপোরেশন।
জীর্ণ ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এমন কোনো খাত ছিল না যেখানে পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু সরকারকে হাত দিতে হয়নি। বীমাসহ অন্যান্য যে সকল খাতে জাতীয়করণ নীতি করা হয়; তা ওই সময়ের জন্য- বিশেষ করে নব্য-স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ ছিল। কারণ ষাট ও সত্তর দশকে বিশ্বের বহু দেশে বিশেষ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিগুলো জাতীয়করণ করা হয় এবং সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি চালু করা হয়, যাতে কিছু লোকের কাছে দেশের অর্থ একত্রিত না হতে পারে।
বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন বীমাশিল্পের জন্য অ্যাকচ্যুয়ারির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু দেশের একমাত্র অ্যাকচ্যুয়ারি শাফাত আহমেদ চৌধুরীকে লন্ডন থেকে ডেকে এনে কন্ট্রোলার অব ইন্স্যুরেন্স পদে নিয়োগ দেন। তিনিই অ্যাকচ্যুয়ারির ওপর দেশের প্রথম উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনকারী ব্যক্তি। ১৯৬৩ সালে লন্ডনের বিশ্বখ্যাত ঈগল স্টার ইন্স্যুরেন্স কো. এবং প্রুডেনশিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে অ্যাকচ্যুয়ারি বিভাগে ট্রেইনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করে সম্পূর্ণরূপে স্তব্ধ করে দেয়া হলেও তার স্বপ্ন সেদিন থেমে যায়নি। স্বাধীন বাংলাদেশে তাঁর মাত্র সাড়ে তিন বছরের কিছু বেশি সময়ের শাসনামলে তিনি বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে মাথা তুলে দাঁড়ানোর জন্য যে সকল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন তা সেদিন গুমরে মরে যায়নি। ১৯৮৩ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বীমা করপোরেশনের পাশাপাশি ব্যক্তি-মালিকানায় বীমা ব্যবসার অনুমতিও দেয়া হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচুর বেসরকারি বীমা ব্যবসা চালু আছে। প্রতিবছরই নতুন নতুন বীমা কোম্পানির উদ্ভব ঘটছে।
বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন সরকারপ্রধান হিসেবে শপথ গ্রহণ করে ২১ বছরের অন্ধকারকে দু’হাতে সরিয়ে দিয়ে বীমা প্রসারের জন্য যুগোপযোগী আইন করেন। ২০১০ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত বীমা ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে যে বীমা আইন, ১৯৩৮ কার্যকর ছিল, তা ২০১০ সালের ১৮ মার্চ রহিত করে বীমা আইন ২০১০ এবং একইসাথে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১০ প্রণয়ন করেন। ২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারি বীমা অধিদফতরকে বিলুপ্ত করে একজন চেয়ারম্যান এবং চারজন সদস্যের সমন্বয়ে প্রথম বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়। বীমা খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক জাতীয় বীমানীতি-২০১৪ প্রণয়ন-পূর্বক বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও পরিকল্পনা নিয়ে তিনি সেই ভিত্তির ওপরই নতুনভাবে দেশ গঠনে কাজ করতে শুরু করেন। তিনি ব্যক্ত করেন যে, রাজনীতির পাশাপাশি জীবন-জীবিকার জন্য তিনি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে কাজ করেছেন। তাই তিনি বীমার গুরুত্ব জানতেন।
বীমার গুরুত্ব বুঝে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে বীমা বিষয়ে আইন প্রণয়ন করেন। ইন্স্যুরেন্স একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন, যাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয় এবং বীমার ওপর দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হতে পারে।
‘বিশ্বব্যাপী বীমা খাতের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করার তাগিদে মিউনিক রি-ইন্স্যুরেন্স এবং মাইক্রো ইন্স্যুরেন্সের নেটওয়ার্কের সহযোগিতায় বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর থেকে তিনদিনব্যাপী ১৫তম আন্তর্জাতিক ক্ষুদ্রবীমা সম্মেলন ২০১৯ প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজন করেছিল। সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবকল্যাণে বীমাশিল্পকে ব্যবহার করার জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, তথ্যের অপ্রাপ্যতা বীমা গ্রাহকদের বড় সমস্যা। বীমাশিল্পে গ্রাহকদের আস্থার অভাব রয়েছে। কারণ তারা যত বীমা কিস্তি জমা দিয়েছে, তার সব কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে আদৌ জমা হয়েছে কি-না, সে ব্যাপারে অন্ধকারেই রয়ে যায়। বীমাদাবি নিষ্পত্তি বীমাশিল্পের একটি পুঞ্জীভূত সমস্যা, সে সমস্যা থেকে বীমা শিল্পকে বের করে আনা এবং বীমাশিল্পে লেনদেনে স্বচ্ছতা আনার জন্য ১০ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে সকল লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পাদনসহ আরো কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন। বীমাশিল্পের সাথে তার পারিবারিক সংশ্লিষ্টতা বেশ পুরোনো। তার পিতা একসময় বীমা কোম্পানির সাথে যুক্ত ছিলেন। পিতার পেশাকে মূল্যায়ন করে তিনি নিজেকেও বীমা পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে দাবি করেন। এ তথ্যে জানা-অজানা বীমাসম্পৃক্ত ব্যক্তি-পরিবারের মধ্যে সুবাতাস বইতে থাকে।
এ খাতের ব্যাপ্তি বৃদ্ধি এবং জনগণের মধ্যে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে বর্তমান সরকারই একটি দিনকে বীমা দিবস হিসেবে পালনের স্বীকৃতিও দিয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬০ সালে আলফা ইন্স্যুরেন্সে চাকরিতে যোগদান করেছিলেন, সেই ১ মার্চকে ‘বীমা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেয় সরকার। বীমা দিবস হিসেবে ওইদিনটি উদযাপিত হয় দেশব্যাপী। বীমা সম্পর্কিত মেলা, সভা, সেমিনার, শোভাযাত্রার মত আয়োজনও অব্যাহত রাখা হয়।
২০২০ সালের ১ মার্চ প্রথম বীমাদিবস পালিত হয়। সে বছর দেশের পাঁচজন বিশিষ্ট বীমা ব্যক্তিত্বকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। বরেণ্য ব্যক্তিরা বীমাবিদ খোদা বক্স, বীমাবিদ গোলাম মওলা, বীমাবিদ এম শামসুল আলম, বীমাবিদ সাফাত আহমেদ চৌধুরী এবং বীমাবিদ এম এ সামাদ।
আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাসতে হাসতে অবসর নেয়ার পর বীমা কোম্পানিতে চাকরি পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে অডিয়েন্সের সকলে আন্দোলিত হয়; বীমা পরিবারের সদস্যদের আনন্দে বুক ফুলে ওঠে।
এ বছর ১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতীয় বীমা দিবস অনুষ্ঠানে অংশ নেন। বীমাশিল্পের প্রসার এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গ্রাহকের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বীমা কোম্পানিগুলোকে সেবা দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন এক উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। স্বাধীন বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৬৪ ডলার। এদেশে অর্থনীতির যাত্রা শুরু হয় ১৯৭২ সালে। স্বাধীনতার সময় তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বদলে গেছে বাংলাদেশ। সেই তলাবিহীন ঝুড়িটি সম্পদ ভরে ছাপিয়ে উপচে পড়ার উপক্রম এখন।
দেশ আজ উন্নয়নের এক রোল মডেল। আজ তিনি বেঁচে থাকলে বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে নিশ্চয়ই বিস্মিত হতেন। আজ দেশটির অর্জন অনেক, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূূর্ণ। দৃশ্যমান স্বপ্নময় প্রকল্প পদ্মাসেতু। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি করেছে। দেশ এখন নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ। বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন দেখছে উন্নত দেশ হওয়ার। বর্তমান সরকারের লক্ষ্য রয়েছে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু এরপরও বীমা খাতটি কেন যেন উপেক্ষিত। এ খাতটিকে উচ্চতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। যে দেশের বীমা খাত যত শক্তিশালী, সে দেশের অর্থনীতিও তত শক্তিশালী, সে দেশের জনগণও তত নিরাপদ, তাদের জীবনও নিরাপদ এবং দেশের সম্পদও নিরাপদ। এ কথাও অনস্বীকার্য যে, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির পরও দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বীমা খাতের উন্নয়নের বিকল্প নেই।
Posted ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৯ জুন ২০২১
bankbimaarthonity.com | rina sristy