নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ০৬ অক্টোবর ২০২১ | প্রিন্ট | 1153 বার পঠিত
বীমাখাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে আইন অনুসারে বিভিন্ন সময়ে সার্কুলার জারি করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। কিন্তু বিভিন্ন বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে নানা সময়ে সে নির্দেশনা পরিপালন না করে, বরং জালিয়াতির মাধ্যমে ফায়দা লোটার অভিযোগ রয়েছে। এবার তেমনি অভিযোগ উঠেছে পুঁজিবাজারভুক্ত সাধারণ বীমাখাতের ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের সূত্রে এমনটাই জানা গেছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে ২০১০ সালের একটি চিঠি নতুন করে সব কোম্পানির কাছে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, বীমা আইনের ২১(৩) ধারার তফসিল-১ অনুসারে দেশে নিবন্ধিত জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর ন্যূনতম ৩০ কোটি টাকা এবং সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর ন্যূনতম ৪০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে। এক্ষেত্রে কোম্পানির উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের ৬০ শতাংশ শেয়ার বাধ্যতামূলক ধারণ করে অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ফলে যেসব কোম্পানির পরিচালকদের ৬০ শতাংশ শেয়ার ছিল না তারা বাজার দরে শেয়ার কিনবেন, এই ধারণায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা একের পর এক কিনতে থাকে বীমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার।
দীর্ঘ কয়েক মাস যাবৎ স্থায়ী ছিল এমন অবস্থা। এ সময়ে পুঁজিবাজারে বীমা কোম্পানির শেয়ারগুলোর দর ছিল সর্বোচ্চ। বিনিয়োগকারীদের মতে, বীমা কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বৃদ্ধিতে আইডিআরএ’র যেসব নির্দেশনা কলকাঠি হিসেবে কাজ করেছে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ন্যূনতম ৬০ শতাংশ শেয়ার ধারণের নির্দেশনা। শেয়ারের দর এমন আকস্মিক বৃদ্ধিতে অধিক মুনাফা লাভের আশায় অনেক বীমা পরিচালকই তাদের শেয়ারগুলো বিক্রি করতে থাকেন। এমনকি কিছু পরিচালক নিজের কাছে থাকা সব শেয়ারও বিক্রি করে দিয়েছেন। এমন প্রেক্ষাপটে আইন ভঙ্গে জড়িত উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আইডিআরএ। এমনকি শেয়ার বিক্রি বন্ধে নেয়া হয়নি ন্যূনতম পদক্ষেপ।
পুঁজিবাজারে বীমাখাতের শেয়ারদর সর্বোচ্চ থাকাকালে ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের কয়েকজন পরিচালকের বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গ করে শেয়ার বিক্রির কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে বিনিয়োগকারীরা জানান, প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ারধারণের হার ৪৩.১৩ শতাংশ। অথচ আইন অনুসারে তাদের ৬০ শতাংশ শেয়ারধারণ বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের পরিচালকদের আরো ১৬.৮৭ শতাংশ শেয়ার কিনতে হবে। কিন্তু শেয়ারদর বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিচালকরা শেয়ার কেনার পরিবর্তে বিক্রি করে দিচ্ছেন। কেউবা উপহার হিসেবে হস্তান্তর করেছেন পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনদের। এমনকি হাতে থাকা সকল শেয়ার বিক্রি করে পরিচালক পদ হারানোর মতো পরিস্থিতিও সৃষ্টি করেছেন অনেকে। এরপরও শুধু নিয়ন্ত্রক সংস্থার অবহেলায় পদে বহাল আছেন এখনো।হাতে থাকা সকল শেয়ার বিক্রির তালিকায় রয়েছেন পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন। এই পরিচালক গত ১০ আগস্ট ২০২১ ব্লক মার্কেটে ১৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮১১টি শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেন এবং ১৯ আগস্টের মধ্যে সকল শেয়ার বিক্রি করেন। অন্যদিকে দুই উদ্যোক্তা মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ খান ও মোহাম্মদ হান্নান তাদের ছেলে ও স্ত্রীকে উপহার হিসেবে শেয়ার হস্তান্তর করেন। অথচ শুরু থেকেই ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের আইন অনুযায়ী ন্যূনতম শেয়ার নেই। এক্ষেত্রে ৭ থেকে ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে হারুন অর রশীদ খান তার ছেলে আহাদ হারুনকে ৯ হাজার ৭৪৪টি শেয়ার এবং মোহাম্মদ হান্নান তার স্ত্রী আফিফা হান্নানকে ১৪ সেপ্টেম্বর ৪৬ হাজার ৫৯৩টি শেয়ার উপহার হিসেবে হস্তান্তর করেন।
গত ২০ জুন আইডিআরএর চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে বলেন, ‘তাদের (উদ্যোক্তা-পরিচালকরা) পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার কিনতে হবে। এ জন্য হঠাৎ করে শেয়ার কেনার ক্ষেত্রেও জটিলতা আছে। তবে যেহেতু শেয়ারধারণের বিষয়টি আইনগত, তাই জটিলতা থাকলেও আইনগত বিষয়টিকেই আমরা গুরুত্ব দেবো।’ এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে আইডিআরএ’র নির্দেশনা অনুসারে উদ্যোক্তা পরিচালকরা ৬০ শতাংশ শেয়ারধারণ করবে বলে জানায়। এ বিষয়ে অবগত থাকার পর পরিচালকদের দেদার শেয়ার বিক্রি ও হাতবদল করায় ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বীমা আইন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছে।
এক্ষেত্রে আইনের ১৩০ ধারা অনুসারে নির্দেশনা পালনে ব্যর্থতা কিংবা লঙ্ঘনে জরিমানা হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা এবং আইন লঙ্ঘন অব্যাহত থাকলে প্রতিদিনের জন্য পাঁচ হাজার টাকা এবং ১৩৪ ধারা অনুসারে ব্যক্তিগত জরিমানার ক্ষেত্রে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা এবং লঙ্ঘন অব্যাহত থাকলে প্রতিদিনের জন্য অনধিক পাঁচ হাজার টাকা প্রদান করতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বরাবরে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) লিস্টিং রেগুলেশন আইন-২০১৫ অনুসারে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার হস্তান্তর বা বিক্রির পর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তথ্য প্রদান করতে হয়। মোয়াজ্জেম হোসেনের সমস্ত শেয়ার বিক্রির পরও তার পরিচালক পদ রয়েছে কিনা সে বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কোম্পানির চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অরুণ কুমার সাহার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে সিইও অরুণ কুমারের সাথে ব্যক্তিগত নম্বরে বেশ কয়েকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
Posted ১২:২৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৬ অক্টোবর ২০২১
bankbimaarthonity.com | rina sristy