মো. মানসুর আলম সিকদার | রবিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২১ | প্রিন্ট | 981 বার পঠিত
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) গত ২৪ অক্টোবর এ মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, বীমা আইন, ২০১০-এর অধীনে প্রণীত বীমা এজেন্ট (নিয়োগ, নিবন্ধন ও লাইসেন্স) প্রবিধানমালা ২০২১ সরকার কর্তৃক চূড়ান্তকৃত হওয়ায় নন-লাইফ ৮৪/২০২১-এর ক্রমিক নং (১) এবং (২)-এর কার্যকারিতা স্থগিত করা হলো। অর্থাৎ ১৫ শতাংশ এজেন্ট কমিশন পুনরায় চালু হলো। ফলে কমিশন বাণিজ্য এবং বীমা শিল্পে অসুস্থ প্রতিযোগিতা আবারও বেড়ে যাবার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আইডিআরএ থেকে নিবন্ধন নেয়া প্রতিনিধি বা ব্রোকার ছাড়া কেউ এ কমিশন পাবে না। বীমা আইন, ২০১০-এর ৫৮(১) ধারার বিধানে বলা হয়, ‘কোনো নন-লাইফ বীমা কোম্পানি বীমা ব্যবসা অর্জন বা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বীমা এজেন্ট বা এজেন্ট নিয়োগকারী বা ব্রোকার ব্যতীত অন্য কাহাকেও প্রিমিয়ামের উপর শতকরা হারে পারিশ্রমিক বা পারিতোষিক পরিশোধ করিবে না।’ ওই ধারায় কমিশনের পদ্ধতি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকায় বীমা ব্যবসা আহরণে কোনো কোনো বীমাকারী প্রতিষ্ঠান তাদের খেয়াল খুশি মতো বিভিন্ন ফরমেটে কমিশন প্রদানসহ প্রিমিয়ামের সঙ্গে সমন্বয় করা শুরু করে। বীমা শিল্পের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে, নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির উন্নতি এবং বর্তমান কমিশন পদ্ধতির অব্যবস্থাপনা দূর করার জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গত ১৫ জানুয়ারি,২০১২ একটি সার্কুলার জারি করে, যা ১ মার্চ ২০১২ থেকে কার্যকর হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘কোনো অবস্থাতেই বীমা কোম্পানির পলিসি অথবা কভার নোটের প্রিমিয়ামের টাকা কমিশনের টাকার সঙ্গে অথবা অন্য কোনো প্রদেয় টাকার সঙ্গে সমন্বয় করা যাবে না। তবে প্রিমিয়ামের বিপরীতে কোনো কমিশন প্রদেয় থাকলে তা অবশ্যই লাইসেন্সধারী বীমা প্রতিনিধির বা ব্রোকারের নামে অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেকের মাধ্যমে প্রদান করতে হবে। আবার আইডিআরএ থেকে নিবন্ধন নেয়া প্রতিনিধি বা ব্রোকার ছাড়া কেউ এ কমিশন পাবে না।’
ধারণা করা হচ্ছে, অসুস্থ প্রতিযোগিতা পূর্বের মত আবারও শুরু হতে পারে। পূর্বে কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেয়া ১৫ শতাংশ এজেন্ট কমিশনের হার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত উন্নীত হয়েছিল। গত ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২ তারিখে কর্তৃপক্ষ সার্কুলার নম্বর নন-লাইফ-৩৪/২০১২ জারি করে। সেখানে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এভাবে, ‘বীমা আইন, ২০১০ (২০১০ সনের ১৩ নং আইন)-এর ৫৮(১) ধারার প্রতি সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক অবহিত করা যাইতেছে যে, উক্ত ধারার শর্তাবলির ব্যত্যয় ও লঙ্ঘন, যথা বীমা ব্যবসা অর্জন বা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বীমা এজেন্ট বা এজেন্ট নিয়োগকারী বা ব্রোকার বহির্ভূত সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রিমিয়ামের উপর শতকরা হারে বেতন প্রদান, কর্তৃপক্ষের গোচরীভূত হইয়াছে।
বীমা খাতের শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও উন্নয়নের স্বার্থে এই ধরনের ব্যত্যয় ও লঙ্ঘন কাম্য নয়।’ তাই মনে হচ্ছে, পূর্বের ন্যায় অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে। তবে সেগুলো যাতে না হয় সে জন্য আইডিআরএ-এর জনবল বৃদ্ধির মাধ্যমে যথাযথ তদারকি বাড়াতে হবে এবং বীমার উপর অভিজ্ঞ লোক সম্পৃক্ত করতে হবে।
বীমা গ্রাহকদের যথাযথ স্বার্থ সংরক্ষণ: নন-লাইফ ৬১/২০১৯ গত ৩০ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে এবং সার্কুলার নম্বর নন-লাইফ ৬২/২০১৯ গত ৩ জুন ২০১৯ তারিখে। এছাড়া সার্কুলার নম্বর নন-লাইফ ৬৪/২০১৯ গত ২ জুলাই ২০১৯ তারিখে এবং পরবর্তী সময়ে ওই সার্কুলারকে বর্ধিত করে জারি হলো আরেকটি সার্কুলার, নম্বর নন-লাইফ ৬৮/২০১৯ গত ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯। ওই সার্কুলার দুটির বিষয় ছিল নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর আর্থিক ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে এবং উদ্দেশ্য ছিল বীমা গ্রাহকদের যথাযথ স্বার্থ সংরক্ষণের নিমিত্তে বীমা কোম্পানিগুলোয় Good Governance তথা সুদৃঢ় অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ওই পদক্ষেপগুলোয় কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বিরাজমান/লুকায়িত ব্যাংক হিসাব বন্ধকরণ, অনিয়ন্ত্রিত কমিশন প্রদান বন্ধকরণ, সর্বোপরি সরকারের রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধ করা।
Gentleman Agreement পরিপালন : আইডিআরএ কর্তৃক প্রদত্ত সব সার্কুলারের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নকল্পে বিআইএ সব নন-লাইফ বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান এবং মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার সমন্বয় বেশ কয়েকটি সভার আয়োজন করেছে। ছোট ছোট কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায়, এজেন্ট কমিশনের কারণে যেন ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় অথবা কোনো কোম্পানি ব্যবসা না হারায় অথবা এক কোম্পানির ব্যবসা যেন অন্য কোম্পানি না নিয়ে যায়, সেদিকে খেয়াল রেখে বিআইএ কিছু পিরিয়ডের জন্য একটি Gentleman Agreement পরিপালন করার পরামর্শ দেয়। পাশাপাশি, গ্রাহকদের কমিশনের ব্যাপারে সচেতন করা এবং বীমা কোম্পানিতে কর্মরত সব কর্মকর্তাকে অবহিত করার জন্য বিআইএ ও আইডিআরএ কর্তৃক পৃথকভাবে বেশকিছু জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হয়।
সব উন্নয়ন কর্মকর্তাকে কমিশনের ভিত্তিতে বীমা এজেন্ট হিসেবে পদায়ন করতে হবে: প্রায় পাঁচ মাস পর্যবেক্ষণের পর বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ যখন অনুধাবন করতে পারে যে এজেন্ট কমিশনের ওপর অগ্রিম কর কর্তন নিয়ে একটি বিভ্রান্তি দেখা দিচ্ছে, ঠিক তখনই কমিশন বিভ্রাট এবং বীমা ব্যবসায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য কর্তৃপক্ষ গত ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ তারিখে সার্কুলার নম্বর নন-লাইফ ৭৫/২০২০ জারি করে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘শুধুমাত্র বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের লাইসেন্সধারী এজেন্টকে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর কর্তন করে ১৪.২৫ শতাংশ কমিশন পরিশোধ নিশ্চিত করার স্বার্থে, ১ মার্চ, ২০২০ তারিখ থেকে নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোতে ব্যবসা আহরণের নিমিত্ত সব উন্নয়ন কর্মকর্তাকে কমিশনের ভিত্তিতে বীমা এজেন্ট হিসেবে পদায়ন করতে হবে।
বেতন ভাতা খাতে নিট প্রিমিয়ামের ওপর ১০ শতাংশের বেশি ব্যয় করা যাবে না: নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর বেতন ভাতা (Salary and allowance) খাতে বার্ষিক ভিত্তিতে নিট প্রিমিয়ামের ওপর ১০ শতাংশের বেশি ব্যয় করা যাবে না।’ সার্কুলারটি পরিপালনের সুনির্দিষ্ট তারিখ থাকলেও উন্নয়ন কর্মকর্তাদের এজেন্ট হিসেবে রূপান্তরের প্রক্রিয়া যৌক্তিকভাবে সম্পন্ন করার স্বার্থে, পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে বেশ কয়েকবার সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
মোটরযান বীমায় থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স গ্রহণ অত্যাবশ্যকীয় না: বর্তমান বিদ্যমান কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে অনেক ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বীমা পলিসির সংখ্যা কমে গিয়েছে এবং রেভিনিউ হ্রাস পেয়েছে। এদিকে মোটরযান বীমায় থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স গ্রহণ অত্যাবশ্যকীয় না থাকায় এবং কম্প্রিহেনসিভ ইন্স্যুরেন্স পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর না হওয়ায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর বীমা কোম্পানির রেভিনিউ কিছুটা সংকোচন হয়েছে।
এদিকে এজেন্ট কমিশন শূন্য শতাংশ করার পরও কিছু কিছু বীমা কোম্পানি কমিশন প্রদান করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে গ্রাহকমুখে প্রচলিত আছে : এজেন্ট কমিশন শূন্য শতাংশ করার পরও কতিপয় বীমা কোম্পানি কমিশন প্রদান করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে গ্রাহকমুখে প্রচলিত আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের ১৫ শতাংশের অধিক কমিশন দেয়া বন্ধ এবং আইডিআরএ সার্কুলার অনুযায়ী ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত সব বিষয়ে সহযোগিতার সম্মতি দেয়া সত্ত্বেও কিছু কিছু ব্যাংক কর্মকর্তার কাছ থেকে কমিশন প্রদান বন্ধে সহযোগিতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেসব বীমা কোম্পানি সততা ও নিষ্ঠা এবং আইডিআরএ কর্তৃক প্রদত্ত বিধিনিষেধ মেনে ব্যবসা পরিচালনা করছে, তাদের পক্ষে নতুন গ্রাহক আনয়ন দূরের বিষয় বরং পুরনো গ্রাহকদের ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
অন্যদিকে আনএথিক্যাল কম্পিটিশনের কারণে অনেক বীমা কোম্পানির ব্যবসা কমে যাচ্ছে :
বিভিন্ন কারণে অনেক বীমা কোম্পানির ব্যবসা কমে যাচ্ছে কিন্তু তাদের ম্যানেজমেন্ট এক্সপেনসেস বৃদ্ধি পাচ্ছে যা, ‘নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবসা ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণী বিধিমালা, ২০১৮’-এর ব্যতয় ঘটছে এবং বছর সমাপ্তিতে তাদের মুনাফা অতিমাত্রায় হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে ২৪ অক্টোবর ২০২১ তারিখে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এই মর্মে সিদ্ধান্ত হয় যে, বীমা আইন, ২০১০-এর অধীনে প্রণীত বীমা এজেন্ট (নিয়োগ, নিবন্ধন ও লাইসেন্স) প্রবিধানমালা ২০২১ সরকার কর্তৃক চূড়ান্তকৃত হওয়ায় নন-লাইফ ৮৪/২০২১-এর ক্রমিক নং (১) এবং (২)-এর কার্যকারিতা স্থগিত করা হল।
১৫ শতাংশ বীমা এজেট কমিশন বহাল রইল : নন-লাইফ ৮৪/২০২১ (১) এ উল্লেখ ছিল সার্কুলার নং নন-লাইফ ৩২/২০১২, তারিখ ১ এপ্রিল ২০১২ অনুযায়ী নন-লাইফ (সাধারণ) বীমা খাতে ব্যবসা অর্জন বা সংগ্রহের বিপরীতে ১৫ শতাংশ বীমা এজেট কমিশন সংক্রান্ত জারিকৃত অন্যান্য নির্দেশনাবলী পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হলো। কিন্তু তা আবার তবে ২৪ অক্টোবর ২০২১ তারিখে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)-এর কার্যকারিতা স্থগিত করা হলো। (২) ছিল নন-লাইফ বীমা খাতে ব্যবস্যা অর্জন বা সংগ্রহের বিপরীতে বীমা এজেন্ট কমিশন ১৫ শতাংশ-এর পরিবর্তে ০ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো। অর্থাৎ নন-লাইফ (সাধারণ) বীমা খাতে ব্যবসা অর্জন বা সংগ্রহের বিপরীতে ১৫ শতাংশ বীমা এজেট কমিশন বহাল রইল। তবে ২৪ অক্টোবর ২০২১ তারিখে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এই মর্মে সিদ্ধান্ত হয় যে, বীমা আইন, ২০১০-এর অধীনে প্রণীত বীমা এজেন্ট (নিয়োগ, নিবন্ধন ও লাইসেন্স) প্রবিধানমালা ২০২১ সরকার কর্তৃক চূড়ান্তকৃত হওয়ায় নন-লাইফ ৮৪/২০২১-এর ক্রমিক নং (১) এবং (২)-এর কার্যকারিতা স্থগিত করা হলো। অর্থাৎ ১৫ শতাংশ শতাংশ এজেন্ট কমিশন পুনরায় চালু রইলো।
নন-লাইফ ৩২/২০১২, তারিখ ১ এপ্রিল ২০১২) এবং নন-লাইফের কমিশন হার সংক্রান্ত জারি বহাল রইল : উপরোক্ত বিষয় ও সূত্রোক্ত সার্কুলারের প্রেক্ষিতে কার্যত সার্কুলার নং নন-লাইফ ৩২/২০১২, তারিখ ১ এপ্রিল ২০১২ অনুযায়ী নন-লাইফ (সাধারণ) বীমা খাতে ব্যবসা অর্জন বা সংগ্রহের বিপরীতে ১৫ শতাংশ বীমা এজেট কমিশন প্রদান সংক্রান্ত সার্কুলার নং নন-লাইফ ৩২/২০১২, তারিখ ১ এপ্রিল ২০১২ এবং নন-লাইফের এজেন্ট কমিশন হার সংক্রান্ত সবকিছুই বহাল রইলো।
উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা প্রিমিয়ামের শতকরা হারে দেয়া যাবে নাঃ উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা কর্মকর্তাদের সংগ্রহ করা প্রিমিয়ামের শতকরা হারে দেয়া যাবে না। চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ বাদে সকল উন্নয়ন কর্মকর্তার নিয়োগ পত্রে সংশ্লিষ্ট বীমাকারীর পে-স্কেল অনুযায়ী বেতন-ভাতা উল্লেখ ও প্রদান করতে হবে।
ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের জন্য নির্ধারিত ব্যাংক হিসাব থেকে অ্যাকাউন্টপেয়ি চেকের মাধ্যমে দিতে হবে : সার্কুলার (নন-লাইফ ৬৪/২০১৯) অনুযায়ী সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা কর্তৃপক্ষের সার্কুলার (নন-লাইফ ৬৪/২০১৯)-এর তিন নম্বর দফায় উল্লেখ করা ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের জন্য নির্ধারিত ব্যাংক হিসাব থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ ব্যাংক হিসাবে ট্রান্সফার বা অ্যাকাউন্ট পেয়ী চেকের মাধ্যমে দিতে হবে। এই আইন বহাল রইলো।
উপরোক্ত সিদ্ধান্তের ফলে কতিপয় বীমা প্রতিষ্ঠানে যা ঘটতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন তা হচ্ছে নিম্নরূপ:
ক) এজেন্ট কমিশন ১৫ শতাংশ
খ) উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা সর্বসাকুল্লে ২৫ শতাংশ (আনুমানিক)
গ) শাখা প্রধানদের শাখার টার্গের-এর উপর ১০ শতাংশ (আনুমানিক)।
মোট ৫০ শতাংশ ডেপেলোপমেন্ট কষ্ট হতে পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, একটি প্রিমিয়ামের ১) আপনি এজেন্ট কমিশন দিবেন, ২)উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা দিবেন, ৩) আবার শাখা প্রধানদের টার্গেট ফ্রি করে দিয়ে তাকেও বেতন-ভাতা দিবেন? এতটা কি সম্ভব? বিদেশে রি-ইন্স্যুরেন্স-এর টাকা পাঠাতে ১০ শতাংশ ট্যাক্স কাটা হবে। অর্থাৎ একটি গরুকে কতবার জবাই দেয়া যায়? খেয়াল করে দেখুন। এখানে বীমা কোম্পানিগুলো কি করতে পারে? তবে অনেক বীমা প্রতিষ্ঠান আছে যে, তারা নিয়মের বাহিরে এক চুলও নড়ে না এবং আইডিআরএ-এর নিয়ম যথাযথ পরিপালন করে থাকে। সামান্য কটা বীমা কোম্পানির জন্য এই ধরনের সমস্যা হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।
কিছু বীমা প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত কমিশন দেয়ার কারণে যেই অসুবিধাগুলো হতে পারে তা সংক্ষিপ্ত ভাবে দেখুন :
-বীমা কোম্পানিগুলো ঝইঈ তে রি-ইন্স্যুরেন্স করবে কিভাবে?
-বীমা দাবি নিষ্পত্তি করবে কিভাবে?
-বেতন বোনাস দিবে কিভাবে?
-ইনক্রিমেন্ট দিবেন কিভাবে?
-অন্যান্য খরচ কিভাবে কি ভাবে মিটাবে?
-ডিভিডেন্ড দিবে কীভাবে?
বি:দ্র: যারা বেশি কমিশন দিয়ে ব্যবস্যা করবে এগুলো তাদের জন্য ওইগুলো প্রযোজ্য।
আইন মোতাবেক চলতে গেলে অবশ্যই প্রতিটি বীমা কোম্পানিকে লোকসানের বোঝা বহন করতে হবে। কিন্তু কোন কোম্পানি কি লোকসানের বোঝা বহন করবে? উত্তর হচ্ছে ‘না’। সে ক্ষেত্রে কি করতে হবে? অবশ্যই একটা উপায় খুঁজে বেব করবে বীমা কোম্পানির লোকগুলো, অপরদিকে এই অপরাধগুলো না করতে পারলে চাকরি করতে পারবে না। এই জন্য কে দায়ী হবে? উত্তর হচ্ছে : এ জন্য ‘সিসটেম’ দায়ী বলে অনেকেই মনে করেন। তবে অবশ্যই আইনের কোন ব্যত্যায় ঘটানো যাবে না যথাযথভাবে বীমা গবেষকদের সাথে বসে গুরুত্বপূর্র্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিতে হবে।
সেখানে কি করতে পারে? এই ব্যাপারে অনেকেই অভিমত প্রকাশ করছেন। যারা বেশি কমিশন দিয়ে ব্যবসা করবেন তাদের যেই সমস্যাগুলো হতে পারে তা নিম্নরূপ:
১) অনেক বীমা কোম্পানিগুলো বিদেশে জব-Insurance Arrengment-এর প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে।
২) বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে প্রিমিয়াম ফাঁকি দিতে পারে।
৩) ঝুঁকি নিজের কাধে রাখতে বাধ্য হবে।
৪) বীমা দাবি নিষ্পত্তি করবে না।
৫) বেশি বেশি অনৈতিক ইচ্ছাকৃত তৈরি করা বীমা নিষ্পত্তি ফান্ড তৈরি করতে পারে।
৬) বীমা প্রিমিয়াম নগত টাকা গ্রহণের মাধ্যমে বিকল্প পন্থায় বীমার ডকুমেন্ট ইস্যু করতে পারে।
৭) আরো বহুবিধ অনৈতিক পন্থায় টাকা বের করতে পারে। যদি সেদিকে কোম্পানিগুলোকে যেতে বাধ্য হয় তবে সেটা হবে দুঃখজনক। তবে আশা করতে চাই আইডিআরএ-এর তদারকির কারণে সেটা পারবে না।
শুধু একটি কথাই বলব যে, বীমা প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে অবশ্যই বীমার দক্ষ লোকবল-এর সমন্বয় বা সহযোগিতা নিয়ে চালাতে হবে। নতুবা বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। যারা বীমা কোম্পানিগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে তারা বীমা সম্পর্কে কতদূর ধারণা রাখেন সেটাও মাথায় রাখতে হবে। যদি ভালো ধারনা না রাখে তবে অবশ্যই তারা বীমার দৃশ্যমান কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। বীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ যদি সঠিকভাবে যথাযথ তদারকি করে তবে অবশ্যই অনিয়মের কিছুই তেমন করতে পারবে না বলে অনেকেই মনে করছেন। এই জন্য তাদের লোক বল বাড়াতে হবে এবং দক্ষ কর্মি বাহিনী তৈরি করতে হবে, যাতে কোন ক্রমেই কেউ আইনের ব্যত্যয় ঘটাতে না পারে। তবে বর্তমানে সমগ্র বীমা সেক্টরে অনেকাংশে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। এখন তেমন কোন বড় ধরনের অনিয়মের কথা শোনা যায় না। যারাই অনিয়ম করছে সেগুলো তদন্তসাপেক্ষে তার ব্যবস্থা নিচ্ছে আইডিআরএ। এমন কি যদি কেউ বীমা দাবি নিষ্পতির ব্যপারে কোন অসুবিধার সম্মুখীন হয় তবে তথ্য প্রদানের জন্য হট লাইনেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
বীমা কর্পোরেট এজেন্ট, ব্যাংকান্স্যুরেন্স এজেন্ট, ব্রকার হাউজ-এর প্রবিধান মালার খসড়া তৈরি হেয়ে গেছে বর্তমানে স্থগিত আছে। অবশ্যই তা বাতিল হয়নি। তাই ঐগুলো প্রজ্ঞাপন আকারে পাশ হলেই বীমা বাজারের প্রেক্ষাপটে অনেক পরিবর্তন আসতে পারে। সেখানে আশঙ্কা করা হচ্ছে বীমা উন্নয়ন কর্মকর্তারা না থাকার সম্ভাবনা আছে। তাই হাজার হাজার বীমাকর্মী তখন বেকার হয়ে পড়তে পারে। এগুলোকে মাথায় রাখতে হবে।
Posted ১১:২২ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২১
bankbimaarthonity.com | rina sristy