এস জেড ইসলাম | রবিবার, ০৯ মে ২০২১ | প্রিন্ট | 604 বার পঠিত
(ধারাবাহিক প্রতিবেদন-১)
ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে একের পর এক আইন ভাঙ্গায় অনিয়মের আতুড় ঘরে পরিনত হয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের প্রটেক্টিভ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবত সিইও না থাকা এবং লাইসেন্স ছাড়াই এজেন্ট কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া বীমা আইনে উদ্যোক্তা পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ারধারণের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে সেটাও পূরণ করেনি। আবার প্রতিষ্ঠানটি বীমা আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে আইপিওতে আসতেও ব্যর্থতার পাশাপাশি নিয়মিতভাবে বীমা আইন লঙ্ঘন করছে। আইডিআরএ এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমনটা জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্রায় ১৪ মাসের অধিক সময়ধরে মুখ্য নির্বাহী নেই প্রটেক্টিভ ইসলামী লাইফে। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সিইও’র দায়িত্ব পালন করছেন ডা. কিশোর বিশ্বাস। গত বছরের ২১ জুন তিনি এ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি তাকে সিইও অনুমোদন দিতে আইডিআরএ’র কাছে আবেদন করে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ। কিন্তু সিইও পদে অযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই পদে তাকে বহাল রেখেছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ। ফলে আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরবর্তী সময় পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানে তার স্বাক্ষরিত সকল প্রকার নির্দেশনা ও প্রাপ্ত বেতন-ভাতার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বীমা খাতে। কিশোর বিশ্বাস গত বছরের ২১ জুন কোম্পানিতে সিইও চলতি দায়িত্ব লাভ করেন।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সিইও নিয়োগে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি এবং এর গ্রাহকরা ঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ বীমা আইনের ৮০(৪) ধারা অনুযায়ী তিন মাসের অধিক সময় পর্যন্ত সিইও পদ শূণ্য না রাখার বিষয়ে বলা হয়েছে। তবে প্রযোজ্যক্ষেত্রে আইডিআরএ’র অনুমোদন নিয়ে তা আরো তিন মাস অর্থাৎ মোট ছয় মাস খালি রাখার সুযোগ রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে একজন সিইও নিয়োগ দিয়ে অনুমোদনের জন্য আইডিআরএকে চিঠি দিতে হয়। কিন্তু তা করতে ব্যর্থ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যে নিয়মিত সিইও ছাড়াই এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কার্যক্রম চালাচ্ছে এই বীমা কোম্পানিটি। যা বীমা আইনের লঙ্ঘন। ফলে আইনের ৮০(৫) ধারা মোতাবেক যেকোন সময়ে কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ করতে পারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম শুরুর পর প্রায় আট বছর হতে চললো কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। অথচ বীমা আইনের ২১(১) ধারা অনুসারে ‘বীমাকারীর মূলধন ও শেয়ারধারণ বিধিমালা- ২০১৬’ অনুযায়ী কোম্পানি নিবন্ধনের তিন বছরের মধ্যে আইপিওতে আসার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এক্ষেত্রে ১৩ জুলাই ২০১৬ তারিখে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে বর্তমান সময় পর্যন্ত অতিরিক্ত ৪ বছর ৯ মাস অতিক্রম হয়েছে। কিন্তু এখনও তা পরিপালন করতে না পারায় বীমা আইনের ১৩০(খ) অনুযায়ী এককালীন পাঁচ লাখ টাকাসহ প্রতিদিনের জন্য পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য্য করতে পারে আইডিআরএ। আর এমনটি হলে প্রায় কোটি টাকা জরিমানার মুখে পড়তে হবে প্রতিষ্ঠানটিকে। সেক্ষেত্রে গ্রাহকদের আমানত থেকেই এই জরিমানা পরিশোধ করতে হবে। ফলে ঝুঁকির মুখে পড়বে পলিসিহোল্ডাররা।
আবার মাঠকর্মী বা এজেন্টদের নিবন্ধন ছাড়াই কার্যক্রম চালানোর বিষয়েও অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। বিষয়টি অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি মোট ৩০৭ জন মাঠ কর্মীর মাধ্যমে আটটি বিভাগে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এরমধ্যে শুধু ঢাকা বিভাগেই রয়েছে ২৩৪ জন এজেন্ট। কিন্তু মাত্র ৪৯ জন এজেন্ট আইডিআরএ থেকে নিবন্ধন সনদ পেয়েছিল। অর্থাৎ মোট এজেন্টদের মাত্র ২০.৯ শতাংশ হলো নিবন্ধিত। তবে তাদের সে নিবন্ধন মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়েছে এক বছরের বেশি সময় আগে। এক্ষেত্রে নিবন্ধনবিহীন এজেন্টদের মাধ্যমে কার্যক্রম চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বীমা আইন লঙ্ঘন করে চলেছে। যদি এ কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে আইডিআরএ আর্থিক জরিমানার মুখে পড়তে হয় তবে সেজন্য গ্রাহকরাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। যা সার্বিক বীমাখাত নিয়ে আস্থাহীনতা সৃষ্টি করতে সাধারণ মানুষের মাঝে।
Posted ৪:২৩ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৯ মে ২০২১
bankbimaarthonity.com | rina sristy