নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ২০ আগস্ট ২০২২ | প্রিন্ট | 214 বার পঠিত
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে ১৭ আগস্ট বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) উদ্যোগে ভার্চুয়ালি আলোচনা ও দোয়ার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রবীণ সদস্য বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন।
ভার্চুয়ালি আলোচনায় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অংশ গ্রহণ করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব শেখ মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী এবং আইডিআরএ’র সদস্যসহ বিভিন্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান, পরিচালকবৃন্দ এবং মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান ও বিআইএ’র নিবার্হী সদস্য মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ও সংগ্রামী জীবনী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের নেতা জিন্নার ঘোষনার সঙ্গে সঙ্গে তার সামনে রাষ্ট্রভাষা ঊর্দুর প্রতিবাদ জানিয়েছে। বঙ্গবন্ধু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার পক্ষে ছিলেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের আলফা ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে চাকরিতে যোগদান করেন। বঙ্গবন্ধুর এই অফিসে বসেই ৬ দফা প্রস্তাব তৈরি করেছেন। সর্বদলীয় সম্মেলন যোগদানের আগে বঙ্গবন্ধু কারাগারে ছিলেন। তাকে মুক্তি দেয়ার পর তিনি ওই সম্মেলনে যোগদান করেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন। ওই নির্বাচনে ১৬৯টি আসনের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীরা ১৬৭টি আসনে বিপুল ভোটে জয়ী হন। আর শোচনীয় পরাজয় বরণ করে পাকিস্তান।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু পরে বাধ্য হয়ে সোহরাওয়াদী উদ্যানে ৭ই মার্চের জনসভায় ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছেন। তার ভাষণই ছিল স্বাধীনতার ডাক। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় লাভ করি। এই নেতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন, আমরা তাকে কী দিলাম। বঙ্গবন্ধু ভাবতেই পারেননি, তাকে হত্যা করা হবে। বঙ্গবন্ধু বাঙালীদের ভাগ্যের পরিবর্তন চেয়েছেন। প্রশাসনে, সেনাবাহিনীতে, পুলিশে বড় বড় পদে বাঙালী ছেলেরা পদোন্নতি পাবে। প্রতিটি বাহিনীর প্রধান হবেন বাঙালী ছেলেরা। কিন্তু ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে। এটা ইতিহাসের এক লজ্জাজনক ঘটনা, সেই মহান নেতাকে স্বাধীনতার মাত্র ৪৪ মাসের মাথায় হত্যা করা হয়েছে।
রুপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিআইএ’র নির্বাহী সদস্য পিকে রায় তার বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা। একজন সফল রাজনীতিবিদ ছিলেন। কিন্তু তাকে হত্যার পর তার অসমাপ্ত কাজ তার সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সম্পন্ন করার জন্য। তিনি ইন্স্যুরেন্স সেক্টরকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। আমাদেরকে আপন করে নিয়েছেন।
চাটার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম বলেন, ৭ই মার্চের মহাসমাবেশে আমিও উপস্থিত ছিলাম। তার ঐতিহাসিক ভাষনেই বঙ্গবন্ধু জাতির পিতার উপাধি পেয়েছেন। তিনি বাঙালী জাতিকে পাকিস্তানীদের জুলুম নির্যাতন থেকে মুক্ত করার জন্যই দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছেন। ১৯৫৬ সালে বঙ্গবন্ধু মন্ত্রীত্ব লাভ করেছিলেন। কৃষি ও শিল্পখাতকে অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন। রাজনীতির স্বার্থে ১৯৫৭ সালে মন্ত্রী সভা থেকে বঙ্গবন্ধু পদত্যাগ করেছিলেন। পরে বঙ্গবন্ধ ৬ দফা ঘোষণা দেওয়ার পর একাধিক বার কারাগারে গিয়েছেন।
পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম এর প্রেসিডেন্ট ও বিআইএ’র নির্বাহী সদস্য বিএম ইউসুফ আলী বলেন, বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মসাতের মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সহযোগিতার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার অনুরোধ জানান। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অসাম্প্রদায়িক, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা সহযোগিতা করে সফল রাষ্ট্র গড়ে তুলতে পারলেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে।
রুপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস বলেন, এই দোয়া মাহফিলে বীমা কোম্পানি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্য এবং স্বজনদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। বঙ্গবন্ধু জীবিত অবস্থায় সবাই বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু বলতেন। তাকে যে কোন বাঙ্গালী হত্যা করতে পারে সে কথা তিনি বিশ্বাস করতেই পারতেন না। সেজন্য তিনি গণভবনের পরিবর্তে ধানমন্ডির নিজ বাসায় থাকতেন। এখান থেকেই তিনি নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে গেছেন।
অনুষ্ঠানের অতিথি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী তার বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপরিবারে হত্যাকাণ্ড জাতির জন্য লজ্জাজনক ব্যাপার এবং এই হত্যাকাণ্ডের যাতে বিচার না হয় তার জন্যও ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে এটিকে বৈধতা দেয়। এ বিষয়গুলো বাঙালি জাতির জন্য লজ্জার, কাপুরোচিত বিষয় হিসেবে আজও বিবেচিত হয়।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ। তিনি বলেন, ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ পৌঁছে দিতে হতে। তারা যেন এটি ধারণ করতে পারে সে পদক্ষেপ নিতে হবে। সভাপতির ভাষণে বঙ্গবন্ধুর যেসব খুনিদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি তাদের মরণোত্তর বিচার দাবি করেন বিআইএ প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন। তিনি বলেন, বিচার প্রক্রিয়ার আগেই যেসব খুনির মৃত্যু হয়েছে তাদের মরণোত্তর বিচার করলে জাতি অন্তত তাদের পরিবারগুলোকে চিনে রাখবে, ধিক্কার জানাতে পারবে।
সভা শেষে ১৫ই আগস্টের ভয়াল রাতে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয় এবং একই সাথে বঙ্গবন্ধু পরিবারের জীবিত সদস্যসহ বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু এবং সুস্থ জীবন কামনা করে দোয়া পরিচালনা করেন।
আলোচনা আরও অংশ গ্রহণ করেন মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আহমেদ, বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মেজর জে. (অব.) আব্দুল হাফিজ মল্লিক, নিটল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান ও বিআইএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট এ কে এম মনিরুল হক, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের ভাইস চেয়ারম্যান ও বিআইএ’র প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন আহমেদ পাভেল, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য (নন-লাইফ) নজরুল ইসলাম ও সদস্য (লাইফ) কামরুল হাসান, সদস্য মঈনুল ইসলাম প্রমুখ। আলোচনায় বক্তাগণ, ইন্সুরেন্স সেক্টরে বিশেষ অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধু এবং তার কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক ও সংগ্রামী জীবনের নানাবিধ বিষয়ে স্মৃতিচারণ করেন।
Posted ৮:১২ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২০ আগস্ট ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy