নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪ | প্রিন্ট | 179 বার পঠিত
দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বীমা কোম্পানি ব্যাংকাস্যুরেন্স কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। অধিকাংশ বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বীমা কোম্পানির ব্যাংকাস্যুরেন্স নীতিমালার শর্ত পূরণ করার সক্ষমতা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এবং সংশ্লিষ্ট খাতের কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। নীতিমালায় ঘোষিত মানদন্ড অনুযায়ী সব শর্ত পূরণ করতে পারে, এমন ব্যাংকের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১৫টি।
অপরদিকে ব্যাংকাস্যুরেন্স প্রবর্তনের মতো সক্ষমতা আছে, এমন বীমা কোম্পানির সংখ্যা হবে সর্বোচ্চ ১৯। দেশে ৪৩টি বেসরকারি ব্যাংকসহ মোট ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। লাইফ ও নন-লাইফ মিলিয়ে বীমা কোম্পানি আছে ৮২টি। সেই হিসাবে ব্যাংক ও বীমা খাতের একটি বড় অংশ ব্যাংকাস্যুরেন্সের বাইরে থেকে যাচ্ছে।
ব্যাংকাস্যুরেন্স হলো ব্যাংকে বীমা কোম্পানির পলিসি বিক্রির আইনগত স্বীকৃতি বা নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অনুমোদন। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক দেশে প্রথমবারের মতো ব্যাংকাস্যুরেন্স প্রবর্তনের ঘোষণা দেয়। এর অব্যাবহিত পর ২০ ডিসেম্বর ব্যাংকগুলোর জন্য এ বিষয়ক অবশ্য পালনীয় নীতিমালা ঘোষণা করা হয়।
চলতি মার্চ মাসের ১ তারিখে জাতীয় বীমা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাংকাস্যুরেন্সের উদ্বোধন করেন। নীতি-নির্ধারকরা বলেছেন, দেশের ব্যাংক খাতের গ্রাহকদের বীমা কভারেজ দিয়ে আর্থিক সুরক্ষা বা নিরাপত্তার আওতায় এনে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সেবা দিতে ব্যাংকাসুরেন্স চালু করা হয়েছে।
নীতিমালায় ঘোষিত মানদণ্ড অনুযায়ী ব্যাংকাসুরেন্সে বিমা কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারত্ব ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে লাইসেন্স পেতে হলে একটি ব্যাংকের নিট খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের বেশি থাকা চলবে না। অন্যান্য শর্তাবলির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত রেটিং (ক্যামেলস) ২ থাকতে হবে, ব্যাসেল-৩-এর ঋণমান ২ থাকার বাধ্যবাধকতাও দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ব্যাংকাসুরেন্স প্রবর্তন করতে ইচ্ছুক ব্যাংকটির পরপর তিন বছর ধারাবাহিকভাবে নিট মুনাফা ধনাত্মক বা ইতিবাচক থাকতে হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে সংরক্ষিত মূলধন অনুপাত থাকতে হবে কমপক্ষে সাড়ে ১২ শতাংশ। সিনিয়র ব্যাংকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, এই মুহূর্তে নীতিমালার সব শর্ত পূরণ করতে পারে এমন ব্যাংকের সংখ্যা হবে সর্বোচ্চ ১৫টি। সুতরাং সব ব্যাংক ব্যাংকাসুরেন্স প্রবর্তনের সুযোগ পাচ্ছে না।
শীর্ষস্থানীয় একাধিক বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেছেন, ব্যাংকাসুরেন্স প্রবর্তনে আগ্রহী ব্যাংকের এ-সংক্রান্ত দক্ষ জনবল ও একটি স্বতন্ত্র উইং দরকার হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদিত ব্যাংকাসুরেন্স-সম্পর্কিত কর্মপরিকল্পনাও থাকতে হবে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে আইডিআরএ থেকে লাইসেন্স অর্জন করতে হবে। সবকিছু চূড়ান্ত হলে একটি ব্যাংক সর্বোচ্চ তিনটি লাইফ ও তিনটি নন-লাইফ বিমা কোম্পানির সঙ্গে পলিসি বিক্রয়ের চুক্তি করতে পারবে।
এনসিসি ব্যাংকের কর্মকর্তা ও ব্যাংকটির রিটেইলস ফাইন্যান্স বিভাগের প্রধান এস এম তানভীর হাসান বলেন, পাইলটিং ফেইজ বা শুরুতে একটু সংরক্ষণশীল বা টাইট নীতি থাকা ভালো। এতে করপোরেট সুশাসনে এগিয়ে থাকা ব্যাংকগুলো ব্যাংকাসুরেন্স পদ্ধতির একটি প্রায়োগিক মডেল সৃষ্টিতে কাজ করবে, যা পরে অন্যদের অনুসরণীয় হবে।
ব্যাংকাসুরেন্স নিয়ে শুরু থেকেই কাজ করছে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ রাকিবুল করিম এফসিএ বলেন, ‘ছয় বছর ধরে আমরা দফায় দফায় আলোচনা, গবেষণা ও নীতিমালা প্রণয়নে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামত নিয়ে একটি চূড়ান্ত নীতিমালা ঘোষণা করেছে। আমি বলব, গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এ ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।’
ব্যাংকাসুরেন্সে অংশগ্রহণকারী ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে আইডিআরএ থেকে লাইসেন্স অর্জন করতে হবে। তার পরই কেবল বিমা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করে পলিসি বিক্রির কাজ করতে পারবে ব্যাংক। এ জন্য বিক্রীত বিমা পলিসির বিপরীতে কমিশন পাবে ব্যাংক।
আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশে অনেক বিমা কোম্পানি ব্যবসা পরিচালনা করছে। এসব কোম্পানির সবাই ভালো নয়। সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছে এবং গ্রাহকের বিমা দাবি যথাসময়ে পরিশোধ করছে, এমন কোম্পানির সংখ্যা ১৯টির মতো হবে জীবন বিমায়। আর সাধারণ বিমায় এ সংখ্যা হবে ১০টির মতো।’ আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা প্রথম দিকে কম সংখ্যক বিমা কোম্পানিকে ব্যাংকাসুরেন্স চালু করার সুযোগ দেব। এ সংখ্যা লাইফ ও নন-লাইফ মিলিয়ে ১৫ থেকে ২০টি হতে পারে।’ তিনি বলেন, দেশের বিমা খাতে জনগণকে উন্নত সেবা দিতে ব্যাংকাসুরেন্স প্রবর্তন করা হয়েছে। এ ব্যবস্থার আওতায় ব্যাংকের শাখায় শাখায় বিমা কোম্পানির পলিসি বিক্রি হবে। বিমা গ্রাহককে পলিসি বিক্রয় থেকে শুরু করে কিস্তি ও বিমা দাবি পরিশোধসহ সব সেবা দেবেন ব্যাংক কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, এখন বিমা খাতে মানুষের একটি আস্থার সংকট আছে। ব্যাংক যখন বিমা পণ্য বিক্রি করবে, তখন এ আস্থার সংকট কাটবে। গ্রাহকের কাছে বিশ্বস্ততার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংক বেশি নির্ভরযোগ্য। ব্যাংকাসুরেন্স পাশ্চাত্য দেশগুলোতে প্রবর্তিত হয়েছে অনেক আগেই। পাশের দেশ ভারতে এ ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয় ২০০০ সালে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, এটি প্রবর্তনের ফলে ব্যাংকে তারল্যপ্রবাহ বাড়বে, বিমা কোম্পানির ব্যবসার ব্যয় সাশ্রয় হবে এবং ব্যাংক ও বিমা দুই খাতের চুক্তিবদ্ধ কোম্পানিরই ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া ব্যাংকগুলো বিমা গ্রাহকের জন্য ভবিষ্যতে পৃথক ঋণ ও সঞ্চয় বা আমানতসংশ্লিষ্ট পণ্য সূচনার মাধ্যমে ব্যাংকিং ব্যবসাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার সুযোগ তৈরি হবে।
Posted ৮:১৩ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪
bankbimaarthonity.com | rina sristy