নাসির আহমাদ রাসেল | সোমবার, ১৭ অক্টোবর ২০২২ | প্রিন্ট | 227 বার পঠিত
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নতুন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের বীমা খাত। বীমায় গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে, বীমা খাতের ইমেজ পুনরুদ্ধারে ইতিমধ্যে নানা উদ্যোগ নিয়েছে আইডিআরএ। বীমার ইমেজ পুনরুদ্ধারের প্রশ্নে কোনো ধরনের ছাড় না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের বীমা খাতের সর্বোচ্চ এই অভিভাবক সংস্থা। বিশেষ করে গত ১০ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় বীমা দিবসকে ‘খ’ শ্রেণি থেকে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত করার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়ার পর আরো বেশি তৎপর হয়ে উঠেছে কর্তৃপক্ষ। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী দুটি শর্তে পহেলা মার্চ বীমা দিবসকে ‘খ’ শ্রেণি থেকে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত করার অনুমোদন দিয়েছেন। এর একটি হলো, কোনো বীমা দাবি বকেয়া থাকতে পারবে না। আরেকটি বীমার ইমেজ সংকট দূরীকরণ বা গ্রাহকের আস্থা ফেরানো।
প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার আলোকে ধারাবাহিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গতকাল রোববার দেশের সব লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করে আইডিআরএ। সভায় বীমা শিল্পের বিকাশে এ খাতের সম্ভাব্য উন্নয়ন ও সার্বিক অগ্রগতি এবং সমস্যা নিয়ে মতবিনিময় হয়। আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় কর্তৃপক্ষের সকল সদস্য, সকল নির্বাহী পরিচালক, সকল পরিচালক এবং কর্মকর্তারা অংশ নেন। সভায় নির্বাহী পরিচালক (লাইফ) সামগ্রিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স সেক্টরের একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেন। এরপর শুরু হয় মুক্ত আলোচনা।
সভায় জীবন বীমা খাতের উন্নয়নে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান। এসব নির্দেশনা পরিপালন হলে বীমা খাতকে শক্তিশালীকরণ ও গ্রাহকের আস্থা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে বলে মনে করছে আইডিআরএ।
মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের ওই সভায় গ্রাহকদের দাবি পরিশোধের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান। এর অংশ হিসেবে ২০২২ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত যে পলিসিগুলো মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে সেসব বীমা দাবি পরিশোধের উপায় সংক্রান্ত বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা অতি দ্রুত আইডিআরএ দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এছাড়া লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর বীমা দাবি পরিশোধের হার বাড়ানো, দ্রুত সকল বকেয়া বীমা দাবি পরিশোধের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেছেন, বাংলাদেশ বীমা শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে আইডিআরএ সম্পূর্ণ অটোমেশনের আওতায় চলে আসলে বীমা কোম্পানিগুলোকে এই সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত হতে হবে এবং সে লক্ষ্যে এখন থেকে বীমাকারীদের সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। এছাড়া গ্রাহকের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর নতুন নতুন প্রোডাক্টসমূহ দ্রুত ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে বহুল প্রচারণার উদ্যোগ নেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সভায়, ২০২৩ সাল থেকে লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর সার্বিক পারফর্মেন্সের ওপর গ্রেডিং করা হবে বলেও জানান আইডিআরএ চেয়ারম্যান।
সূত্র জানায়, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ওই সভায় বেশ কিছু বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তারা। এরমধ্যে কয়েকটি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি তথাকথিত এমএলএম পদ্ধতিতে যেভাবে পলিসি বিক্রি করছে সেই বিষয়টিও উঠে আসে।
অভিযোগ ওঠে, কয়েকটি কোম্পানি তিন মাস মেয়াদি পলিসি বিক্রি করছে। কেউ কেউ ব্যাংকের মতো মাসিক, ত্রৈমাসিক ও বার্ষিকভিত্তিতে মুনাফা দিচ্ছে। সভায় উপস্থিত কয়েকজন সিনিয়র মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এই বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তোলেন। আইডিআরএ চেয়াম্যানও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। তিনি জানান, বিষয়টি ইতিমধ্যে আইডিআরএ’র নজরে এসেছে। কোনোভাবেই এটি করা যাবে না। এ ধরনের পলিসি বিক্রি বন্ধে আইডিআরএ পদক্ষেপ নেবে। আমরা এটি তদন্তও করব। এ সময় আইনবহির্ভূতভাবে এ ধরনের পলিসি বিক্রি বন্ধে মুখ্য নির্বাহীদের নির্দেশ দেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান।
সভা সূত্রে জানা যায়, এখন থেকে প্রতি তিনমাস পরপর মুখ্য নির্বাহীদের নিয়ে মিটিংয়ে বসবে আইডিআরএ। লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর ত্রৈমাসিক পারফর্মেন্সও রিভিউ হবে, রিভিউ করে কোম্পানিগুলোর দুর্বলতা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় গাইডলাইন দেবে আইডিআরএ ।
তবে ত্রৈমাসিক ওই রিপোর্টে কোনো ধরনের অসত্য তথ্য না দিতে মুখ্য নির্বাহীদের আহ্বান জানান চেয়ারম্যান।
সভায় বেশিরভাগ কোম্পানির বিরুদ্ধে আইডিআরএ কর্তৃক নির্ধারিত অর্গানোগ্রাম না মানার অভিযোগ নিয়েও আলোচনা হয়। আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে বলা হয় এটি মানতে হবে। এটি না মানার কারণে ব্যবস্থাপনা খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
সভায় মুখ্য নির্বাহীদের উদ্দেশ্যে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সকল বকেয়া বীমা দাবি পরিশোধ করতে হবে। যেন ২০২৩ সালের বীমা দিবসে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সামনে বলতে পারি, কোনো বীমা দাবি বকেয়া নেই।
এছাড়া আগামী এক বছরের মধ্যে সকল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমিয়ে আনারও নির্দেশ দেয়া হয় মুখ্য নির্বাহীদের। সঠিক সময়ে বীমা দাবি পরিশোধে জমিক্রয় বাবদ বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করে বলা হয়, আইডিআরএ প্রয়োজনে এ ব্যাপারে লিখিত নির্দেশনা দেবে।
সভায় পুরনো কোম্পানিগুলোকে প্রয়োজনে সম্পত্তি বিক্রি করে হলেও বীমা দাবি পরিশোধের নির্দেশ দেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান। যেসব কোম্পানি বীমা দাবি পরিশোধ করতে পারছে না প্রয়োজনে তাদের পরিচালকদের নিয়েও মিটিং করার প্রস্তাব দেয়া হয় ওই সভায়।
একটি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়েও আলোচনা হয় আইডিআরএ’র ওই সভায়। বলা হয়, এটি খুবই বিব্রতকর।#
Posted ৯:৩৫ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৭ অক্টোবর ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy